Brigade Rally of Kolkata

এখনও রয়েছে কোভিড, তবু ব্রিগেডমুখী জনতা মাস্কহীন!

আমজনতার এই মানসিকতাই চিন্তার কারণ বলে  জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞেরা।

Advertisement

দেবাশিস ঘড়াই

কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ মার্চ ২০২১ ০৬:৩৩
Share:

আবরণহীন: মিছিলে যোগ দেওয়া অধিকাংশদের মুখেই মাস্কের বালাই নেই। রবিবার। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

মাস্কহীন জনতার ঢল দেখল রবিবারের ব্রিগেড। ব্রিগেড-জনতাকে দেখে বোঝার উপায় নেই দেশের একাধিক রাজ্যে কোভিড সংক্রমণের জন্য ফের নৈশ কার্ফু শুরু হয়েছে। এ দিন সেখানে মুষ্টিমেয় কিছু মানুষের মুখেই শুধু মাস্ক দেখা গিয়েছে। কোভিড-রোগীর হার ফের ঊর্ধ্বমুখী, এমন চারটি রাজ্য (মহারাষ্ট্র, কেরল, কর্নাটক ও তেলঙ্গানা) ফেরত যাত্রীদের ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক ভাবে ‘কোভিড-নেগেটিভ
আরটি-পিসিআর’ রিপোর্ট সঙ্গে রাখার কথা বলেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকারও।

Advertisement


আমজনতার এই মানসিকতাই চিন্তার কারণ বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞেরা। তাঁদের বক্তব্য, রাজনৈতিক দলগুলিরই তো সমর্থকদের এ বিষয়ে সচেতন করা প্রয়োজন। স্বাস্থ্য দফতরের এক শীর্ষ কর্তা জানাচ্ছেন, ব্রিগেডের মতো যে কোনও ধরনের সমাবেশই সংক্রমণের আশঙ্কা বহু গুণে বাড়িয়ে দেয়। তাঁর কথায়, ‘‘রাজ্যে করোনা পরিস্থিতি এই মুহূর্তে স্থিতিশীল ঠিকই। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, কোভিড নির্মূল হয়েছে। ফলে শুধু রাজনৈতিক সভাই নয়, যে কোনও ধরনের সমাবেশের ক্ষেত্রে ঢিলেমি দিলেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যেতে সময় লাগবে না।’’
কিন্তু এই গা-ছাড়া মনোভাব কেন?


এর ব্যাখ্যা করে বিশেষজ্ঞদের একাংশ জানাচ্ছেন, এর মূলত দু’টি কারণ। প্রথমত, আগের তুলনায় বর্তমানে কোভিড সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা তুলনামূলক কমে যাওয়া। আর প্রতিষেধকের বাজারে আসা। এই দু’টিই মানুষের মনে ভ্রান্ত ধারণা তৈরি করেছে যে, কোভিড চলে গিয়েছে। তাই জনগোষ্ঠীর সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশই নিয়ম পালনে তেমন গুরুত্ব দিচ্ছেন না। যার প্রতিফলন দেখা গিয়েছে এ দিনের ব্রিগেেড।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন, ডব্লিউএইচও) সঙ্গে যুক্ত গবেষকদের একাংশ জানাচ্ছেন, বিশ্বের বর্তমান কোভিড-পরিস্থিতির বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, অনেক দেশই আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে ফের লকডাউন বা নৈশ কার্ফুর পথে হেঁটেছে।
যেমন ফ্রান্সের কান-সহ একটি অঞ্চলে লকডাউন (২৬ ফেব্রুয়ারি-১ মার্চ) জারি করা হয়েছে।

Advertisement


সেখানে বাড়ি থেকে বেরোনোর আগে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের লিখিত অনুমতি প্রয়োজন। লকডাউন জারি করা হয়েছে গ্রিসের রাজধানী অ্যাথেন্স-সহ একাধিক শহরেও। আবার স্পেন এক দিকে যেমন চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত কার্ফু জারি করেছে, তেমনই বেলজিয়াম লকডাউনের মেয়াদ পয়লা এপ্রিল পর্যন্ত বর্ধিত করেছে। ডব্লিউএইচও-র সঙ্গে যুক্ত এক গবেষকের কথায়, ‘‘এই দেশগুলো যখন ফের লকডাউনের পথে হাঁটছে, তখন নিশ্চয়ই তার সঙ্গত কারণ রয়েছে। তারা এটা ঠেকে শিখেছে যে, নিয়ম আলগা হলেই সংক্রমণের রেখচিত্র ঊর্ধ্বমুখী হয়।’’
‘ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ’-এর (আইসিএমআর) এমেরিটাস বিজ্ঞানী নরেন্দ্র কে মেহরা বলছেন, ‘‘ভ্যাকসিন এসে গিয়েছে, অতএব নিয়ম পালন করার দরকার নেই। এই মানসিকতা সংখ্যাগরিষ্ঠের মধ্যে দেখা যাচ্ছে। ফলে মাস্ক পরা, দূরত্ব-বিধি বজায় রাখা ও বার বার হাত ধোয়ার মতো সংক্রমণ রোখার প্রাথমিক নিয়মগুলি বেশির ভাগ মানুষ পালন করছেন না! প্রতিষেধক এলেও করোনা থেকে বিপদ যে কাটেনি, সেটা তাঁরা বুঝতে পারছেন না!’’


‘অ‌ল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্সেস’-এর বায়োকেমিস্ট্রির প্রাক্তন প্রধান এল এম শ্রীবাস্তব বলছেন, ‘‘করোনা ভাইরাসের মিউটেশন হচ্ছে। কিন্তু সেই কারণে সংক্রমণ বৃদ্ধি পাচ্ছে, এমনটা বলা অতিসরলীকরণ হয়ে যাবে। সংক্রমণ তখনই হয় যখন করোনা-বিধি অমান্য করা হয়। যে সমস্ত জায়গায় এই মুহূর্তে করোনার গ্রাফ ঊর্ধ্বমুখী, সেখানে কোনও নিয়মই পালন করা হয় না। এটাই উদ্বেগের বিষয়।’’


কিন্তু সেই উদ্বেগ কি ব্রিগেড-জনতা, সে যে রাজনৈতিক দলেরই হোক না কেন, তাদের স্পর্শ করে? রবিবারের ব্রিগেড-চিত্র বলছে, নাহ!
একদমই নয়। এই জনতার কাছে রাজনৈতিক লড়াই যতটা গুরুত্বপূর্ণ, করোনার বিরুদ্ধে লড়াই ঠিক ততটাই গুরুত্বহীন— বলছেন অনেকে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement