হাসপাতালে আহত রফিকুল মোল্লা। রবিবার। ছবি: শশাঙ্ক মণ্ডল
কলকাতার ‘মা’ উড়ালপুলের উপরে একাধিক বাইকআরোহী চিনা মাঞ্জায় জখম হয়েছেন। কলকাতায় চিনা মাঞ্জা সম্প্রতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে কলকাতা পুলিশ। কিন্তু শহরতলি এখনও সতর্ক নয়। তাই এলাকায় সরস্বতী পুজোয় ঘুড়ি ওড়ানোর চল থাকলেও চিনা মাঞ্জা নিয়ে কোনও আগাম সতর্কতা জারি করেনি প্রশাসন। রবিবার চিনা মাঞ্জাতেই বারুইপুর উড়ালপুলের উপরে গলা কেটে এক বাইকআরোহী জখম হওয়ার পরে নড়েচড়ে বসেছে সেখানকার পুলিশ। মাইকে ঘোষণা করে এলাকায় ঘুড়ি ওড়ানো বন্ধ করে দেওয়া হল। সঙ্কটজনক অবস্থায় ওই বাইকআরোহী বাইপাসের ধারে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি।
রবিবার সরস্বতী পুজোর সকালের ঘটনা। রফিকুল মোল্লা (৩৩) নামে ওই যুবক মোটরবাইক চালিয়ে বারুইপুর উড়ালপুলের উপর দিয়ে যাচ্ছিলেন। পদ্মপুকুরের কাছে পৌঁছতেই তিনি আচমকা চলন্ত মোটরবাইক থেকে ছিটকে মাটিতে পড়ে যান। তাঁর মাথায় হেলমেট ছিল। দুর্ঘটনার পরে লোকজন ঘটনাস্থলে ছুটে এসে রফিকুলকে মাটি থেকে তোলার পরে দেখেন গলায় গভীর কাটা দাগ। হেলমেট থেকেও গলায় আঘাত ঠেকানো যায়নি। রক্তে রফিকুলের জামা ভিজে গিয়েছে। তার পরেই তাঁকে বারুইপুর মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে তাঁকে শারীরিক অবস্থার অবনতির কারণে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করার জন্য সুপারিশ করা হয়। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, রফিকুলের পরিজনেরা তাঁকে শেষ পর্যন্ত ই এম বাইপাস সংলগ্ন একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করেন। হাসপাতাল সূত্রে খবর, রফিকুলের শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক। বারুইপুর থানা এলাকার পশ্চিম-রামনগর এলাকায় বাসিন্দা রফিকুল।
সরস্বতী পুজো উপলক্ষে দক্ষিণ ২৪ পরগনার নানা জায়গায় ঘুড়ি ওড়ানোর রেওয়াজ রয়েছে। এ দিনও বারুইপুর উড়ালপুলের আশেপাশে ঘুড়ি ওড়ানো হচ্ছিল। কোনও ভাবে ঘুড়ি কেটে যাওয়ার পর সুতো উড়ালপুলের উপরে পড়েছিল। পুলিশ জানায়, হেলমেট থাকা সত্ত্বেও রফিকুলের গলায় ধারালো চিনা মাঞ্জা সুতো আটকে যায়। মোটরবাইক এগোতেই তাঁর গলায় বসে যায় ওই ধারালো মাঞ্জা দেওয়া সুতো। চিকিৎসকেরা জানান, রফিকুলের গলায় প্রায় এক ইঞ্চির বেশি গভীর ক্ষত হয়েছে। প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে। প্রাথমিক চিকিৎসার পরেও রক্ত বন্ধ হয়নি।
ঘটনার পরেই বারুইপুর থানার তরফে মাইকে ঘোষণা করে ওই এলাকা ছাড়াও অন্যান্য জায়গাতেও ঘুড়ি ওড়ানো বন্ধ করে দেওয়া হয়। বারুইপুর জেলা পুলিশের এক কর্তার কথায়, ‘‘বারুইপুর এলাকায় কোনও দিন এমন ঘটনা ঘটেনি। তাই আগাম কোনও সর্তক ব্যবস্থা ছিল না। তবে ঘটনার পর মাইকে প্রচার করা হচ্ছে।’’
‘মা’ উড়ালপুলে একের পর এক মোটরবাইক আরোহী চিনা মাঞ্জাসুতোয় জখম হয়েছেন। কলকাতা পুলিশ চিনা মাঞ্জায় নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। ‘মা’ উড়ালপুলের আশাপাশের এলাকায় পুলিশ লিফলেটও বিলি করেছে। কলকাতা পুলিশের দাবি, ওই চিনা মাঞ্জা বিক্রি বন্ধ করার পরেও এখনও নিয়মিত ‘মা’ উড়ালপুলে নজরদারি রাখা হয়। যাতে কেউ ঘুড়ি ওড়ালে তা নজরে আসে।