স্রেফ নজরদারি নয়, এ বার গোয়েন্দার কাজও করবে ক্যামেরার চোখ!
ফলে কোনও অপরাধ করে বা দুর্ঘটনা ঘটিয়ে গাড়ি নিয়ে দ্রুত পালিয়ে গিয়েও আর পার পাওয়া যাবে না। গাড়ির নম্বর থেকে তার সঠিক রং— সবই বলে দেবে রাস্তার ধারে বসানো অত্যাধুনিক ক্যামেরা। এতে অপরাধীদের ধরতেও সুবিধা হবে বলে জানাচ্ছে খোদ পুলিশই।
হাওড়া শহরের ৬টি গুরুত্বপূর্ণ প্রবেশপথের মুখে এমনই উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা (সিসি ক্যামেরা) বসাচ্ছে হাওড়া সিটি পুলিশ। হাওড়া সিটি পুলিশের গোয়েন্দাপ্রধান সুমিত কুমার জানান, ছ’টি প্রবেশপথে বসানো হচ্ছে ৬টি অটোমেটিক নম্বর প্লেট রিডার বা এএনপিআর ক্যামেরা। উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন এই ক্যামেরাগুলি যে কোনও গতিশীল গাড়ির নম্বর তুলে রাখতে পারবে এবং গাড়ির রং শনাক্ত করতে পারবে। তিনি বলেন, ‘‘ক্যামেরাগুলি কিনতে খরচ হবে প্রায় ২৫ লক্ষ টাকা। রাজ্য সরকার এই টাকাও মঞ্জুর করে দিয়েছে।’’ হাওড়া সিটি পুলিশ সূত্রে খবর, এখন শুধু ক্যামেরা কিনে বসানোর অপেক্ষা।
হাওড়া পুলিশ কমিশনারেট হওয়ার পর থেকেই শহরে ট্রাফিক ও অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করতে রাস্তাঘাটে সিসি ক্যামেরা বসানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সেই মতো ধাপে ধাপে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গা ও রাস্তা-সহ গঙ্গার ঘাটেও সিসি ক্যামেরা লাগানোর কাজ শুরু করা হয়। হাওড়া সিটি পুলিশ সূত্রে খবর, ইতিমধ্যে শহরে আটশোর বেশি ক্যামেরা লাগানো হয়েছে। যার মধ্যে রাতে ছবি তোলার নাইট ভিশন ক্যামেরা রয়েছে ৫০০টি। এ ছাড়া পরিকল্পনা রয়েছে আরও ৫০০টি ক্যামেরা লাগানোর। খুব শীঘ্রই সেগুলি লাগানোর কাজও শুরু হবে।
এর আগে হাওড়া স্টেশন চত্বর, হাওড়া ও কলকাতা বাসস্ট্যান্ড, ফোরশোর রোড, বিদ্যাসাগর সেতু অ্যাপ্রোচ রোড, নবান্ন চত্বর ও হাওড়া ময়দান এলাকার কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় যান নিয়ন্ত্রণ করতে সিসি ক্যামেরাগুলি লাগানো হয়। যার মধ্যে কোনা এক্সপ্রেসওয়েতে ক্যামেরা লাগানোর পরে যান নিয়ন্ত্রণ-সহ দুর্ঘটনা কমিয়ে আনতে সাফল্য পায় পুলিশ।
গোয়েন্দাপ্রধান সুমিত কুমারের দাবি, ‘‘সিসি ক্যামেরা লাগিয়ে শহরে অপরাধ অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ করা গিয়েছে। এটিএম লুঠ বা হাইওয়েতে ডাকাতির ঘটনা প্রায় বন্ধই হয়ে গিয়েছে। কারণ সিসি ক্যামেরার দৌলতে ইতিমধ্যে আমরা বহু অপরাধের মীমাংসা করে ফেলেছি, ধরা পড়েছে অপরাধীও।’’
কিন্তু গোটা শহরকে কার্যত ক্যামেরার নজরদারিতে বন্দি করে ফেলা হলেও কয়েকটি ক্ষেত্রে যে খামতি রয়ে গিয়েছিল, তা মানছেন গোয়েন্দাপ্রধানও। যেমন, শহরের কোনও জায়গায় এমন কোনও ক্যামেরা লাগানো ছিল না, যার ছবি থেকে সহজে কোনও দ্রুতগামী গাড়ির নম্বর প্লেট উদ্ধার করা সম্ভব। কারণ অতীত অভিজ্ঞতায় পুলিশ দেখেছে মুম্বই রোড, কোনা এক্সপ্রেসওয়ে বা ফোরশোর রোডের মতো রাস্তায় কোনও গাড়ি অপরাধ ঘটিয়ে পালিয়ে গেলেও উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন ক্যামেরা না থাকায় অভিযুক্ত গাড়ির নম্বর প্লেট পড়ার উপায় থাকে না। এমনকী অনেক সময়ে গাড়িক সঠিক রংও বোঝা যায় না। এই সমস্যা মেটাতেই উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন ক্যামেরা লাগানোর সিদ্ধান্ত বলে জানান গোয়েন্দাপ্রধান।