নিরাপদে গাড়ি চালানোর জন্য ‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ’-এর পরামর্শ আগেই দিয়েছিল কলকাতা পুলিশ। এ বার বেপরোয়া ভাবে গাড়ি চালানোর বিরুদ্ধে কড়া দাওয়াইয়ের হুঁশিয়ারি দিলেন কলকাতার পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমার। বুধবার নবান্নে দাঁড়িয়ে তিনি বলেন, ‘‘বেপরোয়া ভাবে গাড়ি চালানো চলবে না। নির্দিষ্ট গতির থেকে বেশি জোরে গাড়ি চালালেই আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবেই যান চলাচলে শৃঙ্খলা আসবে।’’
ঘটনাচক্রে, এ দিন সকালেই গিরিশ পার্কে সিগন্যাল অমান্য করে গাড়ি চালানো রুখতে গিয়ে প্রহৃত হয়েছেন পুলিশের এক কনস্টেবল। সেই ঘটনায় গাড়িচালক-সহ দু’জনকে গ্রেফতারও করা হয়েছে। এমন ঘটনার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সিপি-র এই মন্তব্যকে বিশেষ অর্থবহ বলেই মনে করছেন পুলিশের অনেকে। তাঁরা বলছেন, সিপি হিসেবে রাজীব কুমার এর আগে কড়া দাওয়াইয়ের বিরোধিতা করেছিলেন। ট্র্যাফিকের সঙ্গে বৈঠকে বলেছিলেন, জরিমানা-শাস্তি নয়, বেপরোয়া গাড়িকে বুঝিয়ে সতর্ক করতে হবে। কিন্তু শুধু বুঝিয়ে যে বেপরোয়া গাড়ি আটকানো যাবে না, সে়টা এখন হাড়ে হাড়ে বুঝেছেন তিনি। এমনই বক্তব্য অনেকের।
মহানগরের রাজপথে বেপরোয়া ভাবে গাড়ি চালানোর নিদর্শন এখন আর কোনও বিরল নয়। গত বছর জানুয়ারি মাসে বেপরোয়া ভাবে গাড়ি চালিয়ে রেড রোডে কুচকাওয়াজের মহড়ায় সেনা অফিসারকে পিষে দিয়েছিলেন প্রাক্তন বিধায়ক মহম্মদ সোহরাবের ছেলে সাম্বিয়া। রাতবিরেতে শহরের পথে উদ্দাম গতিতে মোটরবাইক ছুটিয়ে বেড়ানো যুবকদের সংখ্যাও নেহাত কম নয়। পরমা-সহ একাধিক উড়ালপুলেও রাতে মোটরবাইকের দাপটে তটস্থ হয়ে থাকেন লোকজন।
অনেক ক্ষেত্রেই দুর্ঘটনার পরে দেখা যায়, হেলমেট ছাড়াই মোটরবাইকে চড়েছিলেন আরোহীরা। সম্প্রতি ই এম বাইপাসে এক মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনার পরেও তেমনই ঘটনা সামনে এসেছিল।
পুলিশ সূত্রের দাবি, গাড়িতে রাশ টানতে বেশ কিছু নতুন দাওয়াই প্রয়োগ করা হচ্ছে। এ দিন নবান্নে দাঁড়িয়ে সিপি-ও জানিয়ে দিয়েছেন, বেপরোয়া গাড়ি আটকাতে উড়ালপুল-সহ সব রাস্তায় স্পিড লিমিটার ও সিসিটিভি বসানো হচ্ছে।
অর্থাৎ, সেই সব যন্ত্র দিয়েই এ বার বেপরোয়া গাড়ির উপরে নজর রাখা হচ্ছে। জরিমানার চিঠি পাঠানোর সময়ে সেই ছবির ‘লিঙ্ক’-ও পাঠানো হচ্ছে। রেহাই মিলছে না পুলিশ অফিসারদেরও।
লালবাজারের কেউ কেউ অবশ্য বলছেন, গত কয়েক বছরে প্রভাবশালী বা রাজনৈতিক নেতাদের বেপরোয়া গাড়ি আটকাতে গিয়ে পুলিশি নিগ্রহের ঘটনা তো কম ঘটেনি! ‘‘সে ক্ষেত্রেও সিপি সমান কঠোর থাকেন কি না, সেটাই এখন দেখার,’’ মন্তব্য এক ট্র্যাফিক সার্জেন্টের।