এসএমএসে সিপি-র ধন্যবাদ, তবু ‘উৎসব কাপ’ পুলিশ জিতল কি?

দশমীর সকালেই পুলিশ কমিশনারের এসএমএস পৌঁছে গিয়েছিল কলকাতার পুলিশ অফিসারদের মোবাইলে। উৎসবের মরসুম নিরাপদে উতরে দেওয়ার জন্য বাহিনীর সদস্যদের ধন্যবাদ দিয়েছেন সিপি।

Advertisement

শিবাজী দে সরকার ও কুন্তক চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৬ অক্টোবর ২০১৫ ১৭:০৪
Share:

দশমীর সকালেই পুলিশ কমিশনারের এসএমএস পৌঁছে গিয়েছিল কলকাতার পুলিশ অফিসারদের মোবাইলে। উৎসবের মরসুম নিরাপদে উতরে দেওয়ার জন্য বাহিনীর সদস্যদের ধন্যবাদ দিয়েছেন সিপি।

Advertisement

লালবাজারের একাংশ বলছেন, ষষ্ঠীর রাত কিংবা সপ্তমীর সকালের যানজটের সমস্যা সরিয়ে যে ভাবে অষ্টমী-নবমীতে ভিড় ও গাড়ি সামলেছে কলকাতা পুলিশ, তাতে ধন্যবাদ দেওয়াটা অস্বাভাবিক নয়। সেই হিসেবে প্রতিবারের মতো উৎসব কাপ এ বারও পুলিশের হাতে যাওয়া উচিত।

অষ্টমী-নবমীতে কলকাতার রাস্তা মসৃণ থাকার কথা মেনে নিয়েও কলকাতার নাগরিকেরা উৎসব কাপে পুলিশকে পুরোপুরি জেতাতে নারাজ। তাঁদের মতে, এ বার গোড়া থেকেই নিজের নির্দেশ নিজেই ভেঙেছে পুলিশ। কখনও কখনও বেপরোয়া লোকজনের সামনে নমনীয় হয়েছেন উর্দিধারীরা।

Advertisement

কী রকম?

পুজোর আগেই পুলিশকর্তারা ঘোষণা করেছিলেন, চতুর্থী থেকে পুজো উদ্বোধন শুরু হবে। তার আগে মণ্ডপ খোলা যাবে না। বাস্তবে দেখা গিয়েছে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (যিনি নিজে পুলিশমন্ত্রীও) মহালয়া থেকেই শহরের পুজো উদ্বোধন শুরু করে দিয়েছেন। দ্বিতীয়া থেকেই মণ্ডপ খুলে যাওয়ায় শহরের রাস্তায় ভিড়ের ঢল নেমেছিল। চতুর্থী থেকেই কার্যত শুরু হয়ে গিয়েছিল পুজো। যার জেরে দানা বেঁধেছিল যানজট।

পুলিশ জানিয়েছিল, পুজো করতে গেলে মণ্ডপের উচ্চতা নির্দিষ্ট মাপে করতে হবে। মানতে হবে দমকল বিধিও। দেশপ্রিয় পার্কের ‘বড় দুর্গা’ ঘিরে ভিড় ও বিশৃঙ্খলা শুরু হওয়ায় ওই পুজোয় লোক ঢোকানো বন্ধ করে দেওয়া হয়। পঞ্চমীর রাত এগারোটায় সাংবাদিক বৈঠক ডেকে পুলিশ কমিশনার সুরজিৎ করপুরকায়স্থ জানান, ওই পুজোর আইনি বৈধতা ছিল না। প্রশ্ন ওঠে, আইনি বৈধতা না থাকলেও এত বড় পুজো শুরু হল কী ভাবে? ওই পুজো যে ভাবে প্রচার করেছিল, তাতে যে ভিড় উপচে পড়বে, সেটাও পুলিশ কেন বুঝতে পারল না, তার উত্তরও দিতে পারেননি লালবাজারের কর্তারা। যেমন দেশপ্রিয় পার্কের পুজোয় এক মহিলার শ্লীলতাহানি করা হলেও অভিযুক্তকে এখনওগ্রেফতার করা হয়নি। এমন কী আইন না মেনে দেশপ্রিয় পার্ক কমিটি পুজো করায় তাঁদের বিরুদ্ধে লেক থানায় অভিযোগ দায়ের করেছিল। ওই অভিযোগ দায়েরের পর কলকাতা পুলিশের কমিশনার দাবি করেছিলেন, পুজো মিটলেই ওই পুজো কমিটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিন্তু পুলিশের একাংশের অভিযোগ, পুজো মিটে গেলেও ওই পুজো উদ্যোক্তাদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। আদালত অবমাননার অভিযোগে পুলিশ কেন ওই উদ্যোক্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না, তা নিয়ে পুলিশ কর্তারা কিছু বলতে চাননি। পুলিশের ওই অংশের অভিযোগ, নিজেদের গাফিলতি ঢাকতেই লালবাজারের কর্তারা কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছেন না।

ভিড় সামলাতে দক্ষ কলকাতা পুলিশের দক্ষতা নিয়ে এ বার প্রশ্ন উঠেছে। শুধু তাই নয়, পুজোর পরে মহরমের মিছিলের জন্য শনিবার শহরের বড় অংশ বন্ধ ছিল। এর ফলে চরম ভোগান্তি হয় শহরবাসীর।

কেন পুজোর মরসুমের দিনগুলি পুলিশ শহরের রাস্তায় যানবাহনের গতি স্বাভাবিক রাখতে পারল না?

এ ব্যপারে লালবাজারের এক কর্তা বলেন, ‘‘প্রতি বছরই শহরের বিভিন্ন রাস্তা আটকে উৎসব করা হয়। আমরা ওই সময় বিভিন্ন রাস্তা দিয়ে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে গাড়ি চালিয়েছি।’’

এ বার পুলিশের সক্রিয়তাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে শহরজুড়ে মোটরবাইকের দৌরাত্ম্য। মহালয়ার রাত থেকেই শহরে দাপিয়ে বেড়াচ্ছিল মোটরবাইক। এক-একটি মোটরবাইকে হেলমেটহীন তিন জন সওয়ারি। শুধু দাপিয়ে বেড়ানোই নয়, পথচলতি মহিলাদের যারপরনাই কটূক্তিও করছিল তারা। যেমন এক মহিলার অভিজ্ঞতা, ষষ্ঠীর রাতে অফিস থেকে ফেরার সময় ভিআইপি রোডে বেপরোয়া মোটরবাইক চালকেরা গাড়ির সামনে এসে গালাগাল করছিল। চলতি মোটরবাইকের পিছনে বসে বিয়ারের ক্যান থেকে গলায় পানীয় ঢালতেও দেখা গিয়েছে। এর পরেও ওই এলাকায় দাঁড়িয়ে থাকা পুলিশের সক্রিয়তা চোখে পড়েনি।

কলকাতায় মোটরবাইকের দাপট রুখতে সক্রিয়তা দেখা গিয়েছে অষ্টমী থেকে। লালবাজারের একটি সূত্রই বলছে, কলকাতা পুলিশ এলাকায় মোটরবাইক দুর্ঘটনায় একের পর এক মৃত্যুর ঘটনা ঘটায় সমালোচনা শুরু হয়। পরিস্থিতি হাতের বাইরে যাচ্ছে দেখে মোটরবাইক ধরপাকড়ের নির্দেশ দেয় লালবাজারের উপরমহল। ‘‘পুজোয় মোটরবাইকের দৌরাত্ম্য নতুন নয়। কিন্তু এ বারই প্রথম এত ধরপাকড় হল’’, বলছেন লালবাজারের এক কর্তা। শ’পাঁচেক মোটরবাইক ধরলেও সাধারণ মানুষের অভিজ্ঞতা বলছে, উৎসবের শেষেও মোটরবাইকের দৌরাত্ম্য কমেনি। শ’পাঁচেক মোটরবাইক ধরা যে বেপরোয়া মোটরবাইকের সামগ্রিক চিত্রের কাছে কিছুই না, সেটা মেনে নিয়েছেন লালবাজারের অনেক অফিসারও।

যেমন এ বার মণ্ডপের ভিতরের ভিড় সামাল দেওয়া নিয়েও পুলিশের ভূমিকাকে প্রশ্নের সামনে ফেলেছেন অনেক পুজো-কর্তা। তাঁরা বলছেন, মণ্ডপের ভিতরে ভিড় উপচে পড়ছে দেখেও পুলিশ তা সামলানোর চেষ্টা করেনি। সেই কাজ কার্যত করতে হয়েছে পুজো কমিটির স্বেচ্ছাসেবকদেরই। পুলিশের অনেক পদস্থ অফিসার অবশ্য বলছেন, মণ্ডপের বাইরের ভিড় এবং যানবাহন সামাল দেওয়ার দায়িত্ব পুলিশের। ভিতরের নিরাপত্তার জন্য বেসরকারি রক্ষী নিয়োগের পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করে পুজো কমিটি। পুজো-কর্তারা সমন্বয় বৈঠকে এমন কথাই জানান। ‘‘এ বার উপচে পড়া ভিড় সামাল দিতে না পেরে পুলিশের ঘাড়ে দোষ দিচ্ছে পুজো কমিটিগুলি’’, বলছেন এক পুলিশ অফিসার।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement