Covid guidelines

Night Curfew: বিধি আছে বিধির জায়গায়, বিরাম নেই পথে নামার

উত্তর কলকাতা এবং উত্তর শহরতলির অনেক জায়গায় শনিবার রাতে দেখা গেল, সেই নিয়মকে উড়িয়ে রাত-পথের স্বাভাবিক চিত্র।

Advertisement

প্রবাল গঙ্গোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ অগস্ট ২০২১ ০৬:০১
Share:

রাত-ছবি: দেড়টাতেও নিমতলার কাছে ভূতনাথ মন্দির সংলগ্ন এলাকায় পথে লোকজন। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য।

শনিবারের রাত ২টো। উত্তর কলকাতার ভূতনাথ মন্দির সংলগ্ন নিমতলা ঘাট থেকে গঙ্গাজল তোলার থিকথিকে ভিড়। কলকাতা পুলিশের ভ্যানে চালকের পাশে বসে ভাবলেশহীন মুখে ওই ভিড়ের দিকে তাকিয়ে এক পুলিশকর্মী।

যদিও ছবিটা তেমন হওয়ার কথা ছিল না। কারণ, অতিমারি সংক্রমণে লাগাম টানতে রাত ৯টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত জরুরি কাজ ছাড়া বাইরে বেরোনোয় নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে রাজ্য সরকার। তা কতটা গুরুত্ব পাচ্ছে, দেখতেই এই উত্তর-ভ্রমণ। উত্তর কলকাতা এবং উত্তর শহরতলির অনেক জায়গায় শনিবার রাতে দেখা গেল, সেই নিয়মকে উড়িয়ে রাত-পথের স্বাভাবিক চিত্র। কর্তব্যরত পুলিশের একাংশের মধ্যে গা-ছাড়া ভাবটাও কম-বেশি সর্বত্র চোখে পড়ল।

Advertisement

রাত সাড়ে ১০টা। শ্যামবাজার মোড়ে বাইকচালকদের দাঁড় করিয়ে পুলিশ কাগজপত্র পরীক্ষা করলেও বেরিয়ে যাচ্ছে অন্য গাড়ি। একই ছবি উল্টোডাঙাতেও। প্রশ্ন ওঠে, কোন জরুরি কারণে রাত ন’টার পরেও গাড়িতে চেপে মানুষ ঘুরছেন, কেন পুলিশ তা জানতে চাইবে না?

খন্নার মোড়ে হরি সাহার হাটে জিনিসপত্র নিয়ে এসেছেন ব্যবসায়ীরা। তখন ২টো ১৫। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য।

১০টা ২০ মিনিট। মুচিবাজারের কাছে এক তৃণমূল নেতার দলীয় কার্যালয়ের সামনে যুবকদের জটলা দেখা গেল। পরের গন্তব্য সল্টলেক। বাইপাস থেকে সিএ আইল্যান্ডের দিকে তখন গাড়ি দাঁড় করিয়ে কাগজপত্র পরীক্ষা করছে বিধাননগরের পুলিশ। আবার পাঁচ নম্বর সেক্টরে থানার অদূরেই বন্ধ ধাবার বাইরে গাড়ি থামিয়ে চলছে খাওয়া-দাওয়া। ঘড়িতে তখন ১১টা। এখনও কেন খোলা ধাবা? প্রশ্ন শুনেই কর্মীদের দাবি, ধাবা তো বন্ধ।

Advertisement

যশোর রোডে িবমানবন্দরের এক নম্বর গেট স্টপে ঘটা করে পুজো চলছে একটি মন্দিরে। বিমানবন্দর থানা এলাকারই আড়াই নম্বর গেটের কাছে রাত সাড়ে ১১টার পরেও খোলা ছিল পান-সিগারেটের দোকান। যশোর রোডের উপরেই অন্য একটি ধাবায় ক্রেতাদের জমায়েত তখনও। বিধাননগর পুলিশের এক কর্তার দাবি, রাত ন’টার পরে দোকান খোলা থাকার খবর পেলেই পুলিশ হানা দিচ্ছে। এমনকি শনিবার চিনার পার্কের কাছে একটি ভুজিয়াওয়ালার শো-রুমেও হানা দিয়ে অনেককে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানালেন তিনি।

উত্তর শহরতলির ব্যারাকপুরের লালকুঠির কাছে বেসরকারি হাসপাতালের সামনে রাত সাড়ে ১২টার পরেও খোলা চায়ের দোকান। সেখানেও ক্রেতার জটলা। শহরতলি ঘুরে ফের শহরে ঢুকতেই টালা পার্কে আচমকা দুরন্ত গতিতে দুই যুবক বাইক চালিয়ে পুলিশের সামনে দিয়ে বেরিয়ে গেলেন।

রাত পৌনে ২টো। আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের দিকে এগোতেই রাস্তার ধার ধরে কাঁধে জলের বাঁক নিয়ে চলেছেন মাস্কহীন পুণ্যার্থীরা। জানা গেল, ভূতনাথ মন্দিরের পিছনে নিমতলা ঘাট থেকে গঙ্গার জল তুলে নিয়ে যাচ্ছেন। খানিকটা এগিয়েই দৃষ্টি আটকাল বি কে পাল অ্যাভিনিউ মোড়ে। যেখানে জনৈক পুলিশ আধিকারিক ব্যস্ত মোবাইল দেখতে। তাঁর সামনে দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছেন পথচারীরা। নিমতলা ঘাটে তখন শয়ে শয়ে মাস্কহীন পুণ্যার্থী। পরের গন্তব্য খন্নার মোড়ে হরি সাহার হাট। সেখানে পৌঁছে বোঝা গেল না, করোনা বলে আদৌ কিছু এখনও আছে। রবিবারের প্রস্তুতিতে গাড়ি, ট্যাক্সি, ছোট লরিতে চাপিয়ে জামা-কাপড় নিয়ে জেলা এবং ভিন্ রাজ্য থেকে আসা ব্যবসায়ীদের ভিড় সেখানে।

নৈশ-বিধির নামে কী চলছে? কলকাতা পুলিশের এক কর্তার মন্তব্য, “অবশ্যই বিষয়টি দেখা হবে।” কলকাতা পুরসভার স্বাস্থ্য দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত পুর প্রশাসকমণ্ডলীর সদস্য অতীন ঘোষের বক্তব্য, “অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। এত চেষ্টা করছি সংক্রমণ ঠেকাতে। অথচ মানুষ সচেতন নন। তবুও পুলিশকে বলব কড়া হতে।”

উত্তর ২৪ পরগনার জেলাশাসক সুমিত গুপ্ত বলেন, “যখন নির্দিষ্ট কারণে কড়াকড়ি চালু রয়েছে, তা ভাঙা হবে কেন? পুলিশের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলছি।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement