দামী মোবাইল কিনতে গিয়ে বিমা করানোর টোপ দিয়ে কয়েক কোটি টাকার প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে এক মোবাইল বিমা সংস্থার বিরুদ্ধে। ‘অ্যাপস ডেইলি’ নামের ওই সংস্থার নামে ক্রেতা সুরক্ষা দফতরে ইতিমধ্যেই শ’খানেক প্রতারণার অভিযোগ জমা পড়েছে। ক্রেতা সুরক্ষা দফতরের মন্ত্রী সাধন পাণ্ডে বলেন, ‘‘খোঁজ নিয়ে দেখেছি, সাধারণ মানুষের থেকে মোটা টাকা হাতিয়ে নিয়ে ওই প্রতারক সংস্থা ইতিমধ্যে রাজ্য থেকে ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছে। সংস্থার সদর দফতর মুম্বই। ওই সংস্থার বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নিতে মহারাষ্ট্র সরকারকে চিঠি লিখে জানিয়েছি।’’
ক্রেতা সুরক্ষা দফতরের এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘গত তিন বছর ধরে শহরের বিভিন্ন প্রান্তে মোবাইলের দোকানেই ওই সংস্থার প্রতিনিধিরা বসে থাকতেন। কেউ মোবাইল কিনতে এলে বিমার টোপ দেওয়া হত। বিমার শর্ত অনুযায়ী, কেনার এক বছরের মধ্যে মোবাইল চুরি, হারিয়ে যাওয়া বা যে কোনও ক্ষতি হলে নতুন মোবাইল পাবেন ক্রেতারা। কিন্তু ক্রেতারা বিমার বিন্দুমাত্র সুবিধা পাননি।’’
বাগুইআটির বাসিন্দা দেবব্রত মুখোপাধ্যায় ২০১৬ সালের মার্চে গড়িয়ার একটি দোকান থেকে তিরিশ হাজার টাকার মোবাইল কেনেন। তিনি বিমা সংস্থাকে দেন তিন হাজার টাকা। কিন্তু দিন দুয়েকের মধ্যে মোবাইলটি চুরি হয়ে যায়। দেবব্রতবাবুর অভিযোগ, ‘‘বিমার কাগজপত্র
নিয়ে বহু বার সংস্থার গড়িয়াহাটের অফিসে গিয়েছিলাম। কিন্তু দিনের পর দিন অফিসের কর্মীরা ঘোরাতেন। মাস দুয়েক পরে ক্রেতা সুরক্ষা দফতরে লিখিত অভিযোগ করি।’’
বাঁশদ্রোণীর বাসিন্দা মঞ্জুশ্রী ঘোষালের কথায়, ‘‘২০১৬ সালের জুনে টালিগঞ্জের একটি দোকান থেকে দশ হাজার টাকার মোবাইল কিনি। বিমা সংস্থাকে এক হাজার টাকা দিয়েছিলাম। দিন তিনেক পর বাস থেকে নামতে গিয়ে মোবাইল পড়ে গিয়ে নষ্ট হয়ে যায়। এর পরে ‘অ্যাপস ডেইলি’র গড়িয়াহটের অফিসে বারবার গেলেও কোনও লাভ হয়নি।’’পেশায় কলকাতা পুলিশের কর্মী মহম্মদ ফিরোজ ২০১৬ সালের অগস্টে চাঁদনি চক থেকে ছ’হাজার টাকার দামের একটি মোবাইল কেনেন। তিনিও ‘অ্যাপস ডেইলি’ থেকে বিমা করানোর জন্য দু’হাজার টাকা দিয়েছিলেন। তাঁর অভিযোগ, মাস ছয়েকের মধ্যে তাঁর মোবাইলটি খারাপ হয়ে গেলেও ওই বিমা সংস্থা থেকে কোনও টাকা ফেরত দেওয়া হয়নি।
গড়িয়াহাট থানা লাগোয়া একটি বাজারের তিন তলায় ২১৪ নম্বরের ঘুপচি ঘরে অফিস ভাড়া নিয়েছিল ‘অ্যাপস ডেইলি’ সংস্থা। বৃহস্পতিবার সেখানে গিয়ে দেখা গেল, এখন অন্য সংস্থা ভাড়া নিয়েছে ঘরটি।
নয়া সংস্থার এক কর্মী বলেন, ‘‘গত মার্চ থেকে আমরা এই ঘরটি ভাড়া নিয়েছি। এখনও বহু মানুষ ‘অ্যাপস ডেইলি’র খোঁজ নিতে আসেন।’’
ওই বাজারের বালিগঞ্জ নিউ মার্কেটের ব্যবসায়ী সংগঠনের তরফে এক কর্তা বলেন, ‘‘২০১৬ ডিসেম্বর থেকে এগারো মাস পর্যন্ত ‘অ্যাপস ডেইলি’ এখানে ঘর ভাড়া নিয়ে ব্যবসা করছিল।’’
‘অ্যাপস ডেইলি’র কলকাতা শাখার পূর্বতন ম্যানেজার সুমন দাস বলেন, ‘‘২০০৯ থেকে ওই সংস্থা কলকাতায় ব্যবসা শুরু করে। ২০১৬ সালের নভেম্বর পর্যন্ত ঠিকঠাক চলেছিল সংস্থাটি। এর পর থেকেই সমস্যা শুরু হয়। টানা চার মাস বেতন না পেয়ে চলতি বছরের মার্চে চাকরি ছে়ড়ে নতুন সংস্থার কাজে যোগ দিয়েছি। ওই সংস্থা রাজ্যে এ বছরের মার্চেই বন্ধ হয়ে গিয়েছে।’’ মুম্বইয়ে সংস্থার সদর দফতরে বারবার ফোন করেও কারও সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।
ক্রেতা সুরক্ষা দফতরের এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘শহরের যে সমস্ত মোবাইলের দোকান থেকে বিমা সংক্রান্ত অভিযোগ এসেছে তাঁদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তাঁরা এমন প্রতারক সংস্থাকে আশ্রয় দিয়েছেন কেন জানতে চাওয়া হয়েছে।’’
এ প্রসঙ্গে চাঁদনি চকের এক মোবাইলের দোকানের ম্যানেজার সঞ্জয় সেন বলেন, ‘‘চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত গত দেড় বছর আমাদের দোকানে ওই সংস্থার প্রতিনিধিরা ছিলেন। প্রথম দিকে ব্যবসা ভাল চললেও পরের দিকে সংস্থা সম্পর্কে অনেক অভিযোগ আসতে থাকে। মার্চেই ওরা দোকান থেকে ব্যবসা গুটিয়ে নেয়। পরে ক্রেতাদের অভিযোগ পেয়ে আমরা মুম্বইয়ের অফিসেও লোক পাঠিয়েছিলাম।
কিন্তু গিয়ে দেখি, ওখানকার অফিসও সিল করা।’’