প্রতীকী ছবি।
চার মাস পর মিলল অনুমতি।
আনলক-৩ পর্বে স্বাস্থ্য বিধি মেনে ৫ অগস্ট থেকে শারীরচর্চা কেন্দ্রগুলি (জিম) খোলার অনুমোদন দিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। কিন্তু এখনও ব্রাত্য সাঁতার। কেন? অন্য শারীরচর্চার মতোই তো গুরুত্বপূর্ণ এটি! বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, সাঁতার কাটলে শরীরে খুশি (হ্যাপি) হরমোনের ক্ষরণ বেড়ে যায়। যা অবসাদ কাটাতে সাহায্য করে। এমনকি ফুসফুসের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি-সহ বিভিন্ন শারীরবৃত্তীয় কাজকেও নিয়ন্ত্রণ করে। যা এই পরিস্থিতিতে জরুরি।
জল থেকে সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কা থাকলেও স্বাস্থ্য বিধি কঠোর ভাবে মেনে নতুন সদস্য নয়, অভিজ্ঞদের নিয়ে সাঁতারের প্রশিক্ষণ শুরু করা যেতে পারে বলে মনে করছেন প্রশিক্ষকেরা।
এ দিকে শারীরচর্চা শুরুর অনুমতি মিলতেই জিমগুলি জীবাণুমুক্ত করা শুরু হয়েছে বলে জানাচ্ছেন মালিকেরা। এ-ও জানাচ্ছেন, স্বাস্থ্য-বিধি রক্ষায় সরকারি নির্দেশিকার পাশাপাশি নিজেরাও
সতর্ক থাকতে বিভিন্ন পদক্ষেপ করতে চলেছেন তাঁরা।
কী সেই পদক্ষেপ? কোনও জিম মালিক প্রবেশপথেই জীবাণুনাশক গেট বসানোর কথা ভেবেছেন। সদস্যদের থার্মাল স্ক্যানিং করা হবেই, বলছেন তাঁরা। প্রতি ঘণ্টায় মেশিনগুলি জীবাণুমুক্ত করা হবে বলেও জানাচ্ছেন কোনও কোনও মালিক। সদস্যদের মাস্ক পরা, স্যানিটাইজ়ার সঙ্গে আনা বাধ্যতামূলক হবে। প্রতি ট্রেডমিলের পাশে স্যানিটাইজ়ার থাকবে। ঘাম ঝরানো শুরু করার আগে ও পরে প্রত্যেক সদস্যকে স্যানিটাইজ়ার দিয়ে ট্রেডমিল জীবাণুমুক্ত করতে হবে। নিজের তোয়ালে ও অন্য জিনিস নিয়ে যাতায়াত করতে হবে। কারণ, স্বাস্থ্য বিধি মেনেই জিমের লকার ব্যবহার করা হবে না। পোশাক বদলের ঘরেও নিষেধ আরোপের কথা ভাবছেন তাঁরা। খাবার নিয়ে আসায় নিষেধাজ্ঞা থাকবে। সদস্যদের আরোগ্য সেতু অ্যাপ ডাউনলোড করতে বলা হবে।
শারীরচর্চার সঙ্গে যুক্ত পেশাদারেরা জানাচ্ছেন, এই পরিস্থিতিতে জিমে ভিড় বাড়াতে চান না তাঁরা। যাদবপুরের এক জিমের কর্ণধার দেব সেনগুপ্ত জানান, কয়েক মাস লাভ নয়, খরচ ওঠার লক্ষ্যই থাকবে সকলের। তাই ভিড় বাড়াতে দেওয়া হবে না। জিমের আয়তন বুঝে সদস্যদের ঢোকানো হবে। একটি জিমের কর্ণধার প্রসেনজিৎ সাহা বলেন, “কোনও জিম যদি ১০০০ বর্গ ফুটের হয়, তা হলে একসঙ্গে ১০ জনকে শারীরচর্চার অনুমতি দেওয়া যেতে পারে। কারণ প্রশিক্ষক-সহ অন্য লোকও থাকেন।”
সকাল ও সন্ধ্যায় জিমে যে ভিড় হয়, তা কী ভাবে এড়ানো সম্ভব?
নাগেরবাজারের একটি জিমের মালিক অঙ্কুর চট্টোপাধ্যায় বলছেন, “নিউ নর্ম্যালে অনেক কিছু ভাবতে হচ্ছে। ঠিক করেছি সময়ের ভাগ থাকবে। প্রতি বার একসঙ্গে কত জন থাকতে পারবেন তা নির্দিষ্ট করা হবে। সদস্যকে আগে ফোনে নাম লেখাতে হবে। ওই সময়ে নির্দিষ্ট সদস্য বুক হয়ে গেলে আর হবে না।” তাঁর দাবি, প্রতিটি ব্যাচের শেষে জিম জীবাণুমুক্ত করা হবে।
কিন্তু ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা জিমগুলি কি এই স্বাস্থ্য বিধি মানবে?
এক জিমের কর্ণধার ও প্রশিক্ষক সায়ন সেনগুপ্তের কথায়, “নিজেদের ও জিমে আসা সদস্যদের কথা ভেবে সকলকেই স্বাস্থ্য বিধি মানতে হবে। মনে রাখতে হবে সংক্রমণ ছড়াতে থাকলে ফের বন্ধ হবে জিম। এমন অনেক প্রশিক্ষক আছেন, এই দীর্ঘ সময়ে যাঁদের বিকল্প আয়ের জন্য আনাজ বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন। ফের বন্ধ হলে বিপুল ক্ষতি হবে ভেবেই ছোট-বড় সকলকে সতর্ক থাকতে হবে।”
আর সাঁতার প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলি? সাঁতারু বুলা চৌধুরীর মতে, “নতুন বা সদ্য শিক্ষানবীশদের জন্য এখনই প্রশিক্ষণ চালু না করা হলেও যাঁরা খানিকটা দক্ষ বা বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেন, এমন সদস্যদের জন্য স্বাস্থ্য বিধি মেনে খোলা যেতেই পারে।” একই মত সাঁতার প্রশিক্ষকদের বড় অংশের। তবে জলে নামার আগে সদস্যদের ডাক্তারি পরীক্ষা এবং ফোনে সময় বুক করে প্রশিক্ষণে আসার পক্ষপাতী সকলে।