গাড়ির মেলা: মঙ্গলবার রাতে সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউয়ে। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়াচ্ছে হু হু করে। বেড়ে চলেছে মৃতের সংখ্যাও। তবু ঘরে রাখা যাচ্ছে না এক শ্রেণির মানুষকে। লকডাউন চলছে বটে, কিন্তু তা মানতে চাইছেন না তাঁরা। কারণে-অকারণে বেরিয়ে পড়ছেন রাস্তায়। পুলিশ ধরলে অজুহাতেরও অভাব নেই এঁদের।
এ দিকে, গত তিন সপ্তাহে রেড জ়োনের যে জায়গাগুলিতে নতুন করে আক্রান্তের সন্ধান মেলেনি, মঙ্গলবার নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেই সব জায়গায় ছাড়ের ইঙ্গিত দিয়েছেন। এ নিয়ে আজ বুধবার, লালবাজারে বৈঠক করবে পুরসভা ও পুলিশ। যদিও মুখ্যমন্ত্রীর এ দিনের ইঙ্গিতের পরে লকডাউন শহরে কতটা কার্যকর থাকবে, তা নিয়ে সংশয়ে পুলিশেরই একাংশ। তিতিবিরক্ত পুলিশকর্মীদের বক্তব্য, সরকারের তরফে একের পর এক ছাড় দেওয়াতেই কিছু মানুষ বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। তাঁদের মনে হচ্ছে, লকডাউন না মানলেও তেমন ক্ষতি নেই। বিপদ লুকিয়ে সেখানেই।
নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে বাজারে বা দোকানে লাইন তো ছিলই। তবে করোনা নিয়ে প্রথম দিকে সাধারণ মানুষের মনে যে ভীতিটা ছিল, তা অনেকের মধ্যেই এখন আর কাজ করছে না। পুলিশের চিন্তাও নাগরিকদের এই অংশকে নিয়েই।
আরও পড়ুন: দোকান বন্ধ করতে গিয়ে মার খেল পুলিশ
শহরের বহু এলাকাতেই সকাল-বিকেল দেখা মিলছে এঁদের। গলির মুখে আড্ডা দেওয়া থেকে অকারণ রাস্তায় হাঁটাহাঁটি বা প্রয়োজন না থাকলেও দোকানে গিয়ে লাইন দেওয়া— চলছে সবই। আর এক শ্রেণির মানুষ মোটরবাইক নিয়ে বেরিয়ে পড়ছেন প্রমোদভ্রমণে। পুলিশ ধরলে চিন্তা নেই। সঙ্গে থাকছে কোনও ডাক্তারের দেওয়া প্রেসক্রিপশন।
পুলিশ এঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না কেন? লালবাজারের দাবি, পুলিশের নজরদারি চলছে। লকডাউন অমান্য করায় গ্রেফতার করে মামলাও করা হচ্ছে। কিন্তু তাতেও দেখা যাচ্ছে, পুলিশ চলে গেলেই বাড়ি থেকে ফের বেরিয়ে আসছেন অনেকে। দক্ষিণ শহরতলির একটি থানার এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘এখন আমাদের কাজ অনেকটা কচুরিপানা সরানোর মতো। ভিড় সরিয়ে দিলে সরে যাচ্ছে, আবার কিছু ক্ষণ পরেই সেখান ফিরে আসছে।’’
আরও পড়ুন: সুস্থ হয়ে ফিরছেন আক্রান্তেরা, স্বস্তি হজ হাউসে
প্রথম দিকে পুলিশ কঠোর ভাবে সব নিয়ন্ত্রণ করলেও বর্তমানে তা করা হচ্ছে না বলে অভিযোগ। দীর্ঘদিন লকডাউনে নজরদারি চালানোর ফলে পুলিশের মধ্যেও গা-ছাড়া মনোভাব দেখা দিয়েছে বলে অভিযোগ।
নিচুতলার পুলিশকর্মীদের দাবি, সব কিছুতেই যে ভাবে ছাড় দেওয়া হচ্ছে, তাতে বাইরে বেরোনো অধিকাংশ মানুষের বিরুদ্ধেই আর ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না। সকলের কাছেই কোনও না কোনও অজুহাত তৈরি। ফলে বুঝতে পেরেও পুলিশকে অনেক ক্ষেত্রে ‘নীরব দর্শক’ হয়ে থাকতে হচ্ছে। একই সঙ্গে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার অনুমতি না থাকার বিষয়টিকেও ভিড় বাড়ার কারণ হিসেবে দেখছে পুলিশ।
তবে যাঁরা বার বার লকডাউন অমান্য করছেন এবং বিনা কারণে রাস্তায় বেরোচ্ছেন, তাঁদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া যায় কি না, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। এক পুলিশকর্তা বলেন, ‘‘মূল রাস্তাগুলিতে ভিড় নেই। ভিড় বা জমায়েতের অভিযোগ আসছে অলিগলি থেকে। সেখানেও নজরদারি বাড়াতে বলা হয়েছে। গাড়িচালকদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’’
পুলিশের একটি অংশ জানাচ্ছে, লকডাউনের প্রথম দিকের তুলনায় বর্তমানে গাড়ির সংখ্যা ১৫-২০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। অনুমতিহীন গাড়ি আটকাতে কিছুটা কঠোর হয়েছে কলকাতা ট্র্যাফিক পুলিশ। গত কয়েক দিন ধরে এই ধরনের গাড়ি ধরলেই মোটরযান আইনের ১১৫ ধারায় জরিমানা করা হচ্ছে। ওই আইনে প্রথম বার ধরা পড়লে দু’হাজার টাকা জরিমানার কথা বলা আছে। এত দিন সরকারি নির্দেশ অমান্য করার ধারায় (১৮৮) মামলা দায়ের করছিল পুলিশ। যাতে আইন অমান্যকারী এবং তাঁর নথির ছবি তুলে ট্র্যাফিক পুলিশের কর্মীরা থানায় জমা দিতেন। থানা থেকে আদালতে মামলা দায়ের করার অনুমতি চাওয়া হত।
লালবাজার জানিয়েছে, বিভিন্ন থানা এখনও ওই ধারায় মামলা রুজু করলেও বিভিন্ন ট্র্যাফিক গার্ড মোটরযান আইনের ধারাটি প্ৰয়োগ করতে শুরু করেছে। জরিমানার অঙ্কটা বেশি হওয়ায় চালক বা গাড়ির মালিক অপ্রয়োজনে রাস্তায় বেরোনোর আগে দু’বার ভাববেন বলে দাবি পুলিশের।
তবে মোটরযান আইনের ওই ধারার প্ৰয়োগ কলকাতা পুলিশের সব জায়গায় করা হচ্ছে না। ‘নো এন্ট্রি’-তে গাড়ি নিয়ে প্রবেশ করলেই একমাত্র ওই আইনে ব্যবস্থা নেওয়া যায়। কিন্তু শহরে লকডাউন অমান্য করলে শুধু ১৮৮ নম্বর ধারাতেই মামলা রুজু হবে।
লালবাজারের এক কর্তা জানান, প্রতিটি ট্র্যাফিক গার্ডকেই বলা হয়েছে, যথোপযুক্ত আইনে মামলা করতে।