প্রতীকী ছবি।
পুজোয় ঘুরলে সংক্রমণ! শহরে থাকাটাও ঝুঁকির! থাকলেও আবার গৃহবন্দি হয়ে থাকতে হবে।তাই শহর ছেড়ে বেড়াতে যাওয়াটাকেই বিকল্প হিসেবে বেছে নিচ্ছেন অনেকে। পুজো শুরুর মুখে সপরিবার তল্পিতল্পা গুটিয়ে কেউ চলে যাচ্ছেন পাহাড়ে। কেউ আবার ভিন্ রাজ্যে।মধ্য কলকাতার বাসিন্দা, ব্যবসায়ী জ্যোতিপ্রকাশ রায় পরিবারের বাকি চার জনকে নিয়ে যাচ্ছেন কাশ্মীর। তাঁর কথায়, ‘‘কলকাতায় থাকলে পুজোমণ্ডপে যাওয়ার ইচ্ছে হবে। ভিড়ের মধ্যে কখন কে সংক্রমিত হয়ে যাব কেউ বলতে পারে না। তার চেয়ে ষষ্ঠীর দিন বেরিয়ে যাব। ফিরব
পুজো পার করে।’’ গত বছর তিনি সপরিবার তাইল্যান্ড বেড়াতে গিয়েছিলেন। হাজরার বাসিন্দা প্রমোদ চোপড়া অবশ্য গত বার পুজোয় কলকাতাতেই ছিলেন। কিন্তু, এ বার পরিস্থিতির কারণে চতুর্থীর দিনই শহর ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘‘কলকাতায় থাকলে কী হবে কে জানে। তার জন্য ঠিক করেছি দিল্লি চলে যাব। সেখান থেকে জয়পুর, বৈষ্ণোদেবী ঘুরে পুজো কাটিয়ে করে ফিরব।’’
এই ভিড়টা পুজোর মরসুমে সাধারণত বিদেশ চলে যায় ঘুরতে। কেন্দ্রীয় পর্যটন দফতরের কলকাতার আঞ্চলিক অধিকর্তা সাগ্নিক চৌধুরী জানিয়েছেন, ২০১৯ সালে প্রায় ২ কোটি ৬০ লক্ষ ভারতীয় বিদেশে বেড়াতে গিয়েছিলেন। এর মধ্যে বাঙালির সংখ্যাটা ফেলে দেওয়ার মতো নয়। সাগ্নিকবাবুর কথায়, ‘‘বিদেশে যাওয়ার সুযোগ না পেয়ে দেশের ভিতরেই ঘুরতে যাচ্ছেন অনেকে। পশ্চিমবঙ্গের পাহাড়ে এবং ডুয়ার্সে ইতিমধ্যেই প্রচুর বুকিং হয়েছে। দেশের ভিতরে বেড়াতে যাওয়ার এই প্রবণতাটা ২০২১ সালেও চলবে বলে আমরা মনে করছি।’’
কলকাতার বাঙালিদের টেনে নিয়ে যেতে ইতিমধ্যেই জম্মু-কাশ্মীর পর্যটন বিভাগের দল এসে ঘুরে গিয়েছে। নিজেদের রাজ্যে পর্যটকদের আকর্ষণ করতে যেতে প্রথমেই তারা বেছে নিয়েছে কলকাতাকে। সেখানকার পর্যটন কর্তা ইদিল সালেমের কথায়, ‘‘জুলাই মাস থেকে পর্যটকেরা আসতে শুরু করেছেন। এখন আমরা এখানে শিকারা প্রতিযোগিতা, সাইকেল রেস, গল্ফ প্রতিযোগিতা শুরু করছি।’’
ট্র্যাভেল এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের কর্তা মানব সোনি জানিয়েছেন, মাস্ক পরা, শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা, হোটেলের ঘর স্যানিটাইজ় করা — পর্যটকদের জন্য করোনা সংক্রান্ত সমস্ত নিয়ম পালন করা হচ্ছে। তাঁর কথায়, ‘‘আগে কলকাতা-শ্রীনগর যাতায়াতের বিমান ভাড়া ২০ হাজার টাকার বেশি পড়ছিল, এখন তুলনায় ভাড়াটা কম। হোটেলের খরচও কমেছে।’’
সাগ্নিকবাবু জানিয়েছেন, পর্যটন শিল্পের সঙ্গে বহু মানুষের রুটি-রুজি জড়িত। কেন্দ্রও চাইছে, নিয়ম মেনে আস্তে আস্তে পর্যটন ব্যবসা শুরু হয়ে যাক। তিনি বলেন, ‘‘২০১৯ সালে প্রায় ১ কোটি ৮০ লক্ষ বিদেশি ভারতে এসেছিলেন। এই বছরের প্রথম দু’মাসের পরে সেই আসাটা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। বিদেশি মুদ্রা আয়ের জায়গাটা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এই লোকসানটা দেশের অভ্যন্তরের পর্যটনকে দিয়েই মেটানোর চেষ্টা করা হবে।’’
ট্রাভেল এজেন্ট ফেডারেশনের কর্তা অনিল পঞ্জাবি অবশ্য জানিয়েছেন, বিদেশ থেকেও অনেকে খোঁজখবর নিচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘‘জামাইকা পর্যটন দফতর আমার সঙ্গে যোগাযোগ করে কবে আন্তর্জাতিক উড়ান চালু হতে পারে, তা জানতে চেয়েছে। মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, ব্যাঙ্কক-সহ বহু দেশ পর্যটনের উপরে অনেকটাই নির্ভরশীল। কিন্তু, কবে সেখানে যাতায়াত স্বাভাবিক হবে কেউ বলতে পারছেন না।’’
বাইরের পর্যটকদের কাছে কলকাতার আকর্ষণ বাড়াতে নানা পরিকল্পনা করা হচ্ছে। সম্প্রতি জোড়াসাঁকোর দাঁ বাড়িতে পর্যটনের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের নিয়ে পুরনো গানের বৈঠকি আড্ডা বসেছিল। সেই অনুষ্ঠানের অন্যতম উদ্যোক্তা শুভজিৎ দত্ত জানিয়েছেন, পুরনো বাংলার বাবু সংস্কৃতিকে সামনে রেখে অন্য রাজ্যের পর্যটকদের আকর্ষণের চেষ্টা করা হচ্ছে।