Coronavirus

Coronavirus: ‘জীবনের থেকেও কেন উৎসবে বেশি গুরুত্ব’

২০২১ সালের ১৮ মে। সে দিন বিকেলে মারা যান দিব্যেন্দুর স্ত্রী, পেশায় নার্স সুভদ্রা বর্মণ।

Advertisement

জয়তী রাহা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ জানুয়ারি ২০২২ ০৭:০৭
Share:

সুভদ্রা বর্মণ।

‘‘মানুষের জীবনের থেকেও প্রশাসনের কাছে উৎসবের গুরুত্ব বেশি কেন? কেন মানুষ ভুলে যান যে, তাঁদের সুস্থ করতে গিয়ে কত ডাক্তার, নার্স মারা যাচ্ছেন? কিছু মানুষের আনন্দের মাসুল দিতে কত পরিবার অভিভাবকশূন্য হয়ে যাচ্ছে, সেই হিসাব সরকার বা সাধারণ মানুষ, কেউ কি মনে রাখতে চান না?’’ এই প্রশ্নগুলো আজকাল ভাবায় তাঁকে। মাস আটেক আগে দ্বিতীয় বার বাবা হতে পেরেও কত ঘণ্টা সন্তানকে কোলে রাখতে পেরেছেন, মনে পড়ে না। আড়াই বছরের মেয়ে আর মাস আটেকের ছেলেকে নিয়ে লড়াই করে চলেছেন ভারতীয় সেনাবাহিনীতে কর্মরত ল্যান্সনায়েক দিব্যেন্দু হালদার। রাজ্যে সংক্রমণের তৃতীয় ঢেউ শুরু হয়ে গিয়েছে বলে যখন জানাচ্ছেন চিকিৎসকেরা, তখন এই ঢেউয়ের বড় কারণ মানুষের লাগামহীন উচ্ছ্বাস নিয়ে রীতিমতো বিরক্ত স্ত্রী-হারা স্বামী।

Advertisement

২০২১ সালের ১৮ মে। সে দিন বিকেলে মারা যান দিব্যেন্দুর স্ত্রী, পেশায় নার্স সুভদ্রা বর্মণ। সন্ধ্যায় ফোনে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি সুভদ্রার মৃত্যুসংবাদ দেওয়া হয়েছিল তাঁকে। তার দশ দিন আগে সেখানেই ছেলের জন্ম দিয়েছিলেন সুভদ্রা। পরিবার সূত্রে খবর, ডিউটি করতে করতে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা বধূ। দিব্যেন্দুর দাবি, স্ত্রী যে অন্তঃসত্ত্বা, সেটা সুভদ্রার কর্মস্থল সরশুনা ব্লক প্রাথমিক হাসপাতালের তৎকালীন বিএমওএইচ-কে জানানো হয়। তবুও কোভিডের প্রতিষেধক প্রদানের ডিউটি দেওয়া হয় সুভদ্রাকে। দিনকয়েক ডিউটি করেই অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। পরীক্ষায় ধরা পড়ে যে, সুভদ্রা সংক্রমিত। দিব্যেন্দুর আফশোস, সুভদ্রার বিষয়টি যদি মানবিকতার সঙ্গে বিবেচনা করা হত, তা হলে আজ দুটো শিশু তাদের মায়ের সঙ্গ পেত। তাঁর বদলির চাকরি বলে এখন যারা রায়দিঘিতে বড় হচ্ছে তাঁর দাদা-বৌদি ও মায়ের কাছে। দিব্যেন্দুর আরও অভিযোগ, স্ত্রীর মৃত্যুর পরে সমস্ত কাগজপত্র জমা দেওয়া সত্ত্বেও সরকারের তরফে দশটা টাকাও মেলেনি। এ সব নিয়ে ওঁর কর্মস্থল থেকে কোনও খোঁজও করা হয়নি।

যদিও সমস্ত অভিযোগই অস্বীকার করেছেন সরশুনা ব্লক প্রাথমিক হাসপাতালের তৎকালীন বিএমওএইচ, চিকিৎসক কমলিকা মজুমদার। তাঁর দাবি, ‘‘প্রতিষেধক প্রদানের ডিউটি করার আগেই সুভদ্রা সংক্রমিত হন। তা ছাড়া, ওঁকে ডিউটি আমি দিইনি। আমাকে জানানোও হয়নি যে, তিনি অন্তঃসত্ত্বা।’’ যা শুনে নার্সেস ইউনিটির প্রেসিডেন্ট পার্বতী পাল বলছেন, ‘‘আমরা জানি, মেয়েটি প্রতিষেধক তিন দিন দিয়েছিলেন। সুভদ্রার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা হয়েছিল। কর্তৃপক্ষের অসহযোগিতার কারণে শয্যা পেতেও দেরি হয়। সরকারের কাছে আমার আবেদন, অবিলম্বে শিশু দু’টির কথা ভেবে সুভদ্রার প্রাপ্য বকেয়া মিটিয়ে দেওয়া হোক।’’

Advertisement

স্বাস্থ্য-অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী বলছেন, ‘‘ঘটনাটি খুবই দুর্ভাগ্যজনক। তবে অন্তঃসত্ত্বাদের ক্ষেত্রে কোভিড প্রতিষেধক প্রদানে নিষেধাজ্ঞা নেই। কিন্তু কোভিডে মৃতের ক্ষেত্রে প্রাপ্য বকেয়া পেতে এত দেরি হওয়ার কথা নয়। হতে পারে, কোনও কাগজ নিয়ে সমস্যা হওয়ায় দেরি হচ্ছে। মৃতার স্বামীকে স্বাস্থ্য ভবনে গিয়ে খোঁজখবর করতে অনুরোধ করব।’’ পাশাপাশি, স্বাস্থ্য-অধিকর্তার মতে, ‘‘যে কোনও স্বাস্থ্যকর্মীর মৃত্যুই তাঁর পরিবারের পাশাপাশি সমাজের কাছেও বড় ক্ষতি। চিকিৎসা পরিষেবা যাঁরা দেন, তাঁদের সংখ্যা কমতে থাকলে স্বাস্থ্য পরিকাঠামো দাঁড়িয়ে থাকবে কিসের উপরে? মানুষকে এটা বুঝতে হবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement