নির্দেশিকা বলছে, একে অপরের মধ্যে অন্তত এক মিটার দূরত্ব রেখে কথা বলা উচিত। অথচ, আর জি করে বহির্বিভাগের করিডর রোগী ও তাঁদের পরিজনদের ভিেড় কার্যত মেলার আকার নিয়েছে। সোমবার। নিজস্ব চিত্র
কেউ এসেছেন মেডিসিন বিভাগে। কারও আবার নাক, কান, গলার সমস্যা। বুকে সংক্রমণের জন্য কারও গন্তব্য চেস্ট মেডিসিন বিভাগ। বহির্বিভাগের ঘরের বাইরে গা ঘেঁষাঘেঁষি করে ডাক্তারবাবুকে দেখানোর জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে রয়েছেন বহু মানুষ। করোনাভাইরাস সংক্রমণ রুখতে নির্দেশিকা জারি করে স্বাস্থ্য দফতর যা যা করতে বলেছিল, তার প্রায় কিছুরই দেখা মিলল না সোমবার শহরের মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালগুলির বহির্বিভাগে।
সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালগুলিতে কী ধরনের প্রস্তুতি প্রয়োজন, তা নিয়ে গত ২ মার্চ একটি নির্দেশিকা জারি করেছিল স্বাস্থ্য দফতর। তার পরে ১৪ দিন পেরিয়েছে। ডাক্তারি পরিভাষায়, সেই ‘ইনকিউবেশন পিরিয়ড’ অতিক্রান্ত হলেও সরকারি হাসপাতালের বহির্বিভাগে ঝুঁকি স্বীকার করেই চিকিৎসাপ্রার্থী সাধারণ মানুষ। চিকিৎসকেরাও সুরক্ষিত নন। নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, হাসপাতালের বহির্বিভাগে চিকিৎসার জন্য আসা প্রত্যেক রোগী যাতে হাঁচি-কাশির সময়ে নাক ও মুখ ঢেকে রাখেন, তা নিশ্চিত করতে হবে। জ্বর, সর্দি, শ্বাসকষ্টের লক্ষণ নিয়ে আসা রোগীদের দ্রুত চিহ্নিত করে পৃথক জায়গায় নিয়ে যেতে হবে। হাঁচি-কাশির লক্ষণযুক্ত ব্যক্তিরা যাতে মাস্ক পরেন, তা-ও নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।
কিন্তু নির্দেশিকাই সার। আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বহির্বিভাগের দোতলায় এ দিন দেখা যায়, মেডিসিন, চেস্ট মেডিসিন, নিউরোলজির ঘরে থিকথিক করছে ভিড়। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ, এনআরএস, এসএসকেএম— সর্বত্র একই ছবি। এনআরএসে মেডিসিনের (মহিলা) বহির্বিভাগের ঘরে রোগীদের বসার জন্য ছ’টি বেঞ্চ পাতা। পাশাপাশি বসে মহিলা রোগীরা। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে দেখা যায়, রোগীদের একাংশ নিজস্ব উদ্যোগে মাস্ক পরে রয়েছেন। মাস্ক না থাকায় রুমাল, শাড়ির আঁচলকেই অনেকে বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করছেন।
হাওড়া জেলা হাসপাতাল এবং সত্যবালা আইডি-তে গত শনিবার থেকে আইসোলেশন ওয়ার্ড খোলা হয়েছে। তবে দু’টি হাসপাতালের কোনওটিতেই এ দিন সকালে চিকিৎসকদের মাস্ক পরতে দেখা যায়নি। সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকদের বক্তব্য, ‘‘শয্যার অভাবে এক বিছানায় দু’জন বা মেঝেতেও রোগীরা থাকেন। সেখানে কী ধরনের সতর্কতা অবলম্বন করা যায়?’’
এ দিন মেডিক্যাল কলেজগুলির অধ্যক্ষদের সঙ্গে একটি বৈঠকে এ নিয়ে আলোচনা করেন স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা দেবাশিস ভট্টাচার্য। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, সেই বৈঠকে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালগুলিতে ‘ফিভার ক্লিনিক’ খুলতে বলা হয়েছে। এনআরএসে আকুপাংচারের ঘরের পাশে ওই ক্লিনিক হবে বলে খবর। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষা মঞ্জুশ্রী রায় বলেন, ‘‘ফিভার ক্লিনিক খোলা হলে করোনার লক্ষণযুক্ত রোগীদের আলাদা করা যাবে।’’ আর জি করের অধ্যক্ষ শুদ্ধোদন বটব্যাল বলেন, ‘‘প্রাথমিক পরীক্ষার পরে এ ধরনের রোগীদের ফিভার ক্লিনিকে যেতে বলা হবে।’’
সরকারি হাসপাতালের উল্টো ছবি দেখা গেল বেসরকারি হাসপাতালে। মুকুন্দপুরের মেডিকা হাসপাতালে মূল গেটেই রয়েছে ‘স্ক্রিনিং ডেস্ক’। শরীরের তাপমাত্রা কত, তা যন্ত্র দিয়ে পরীক্ষা করা হচ্ছে। ভিতরে ঢোকার আগে প্রত্যেকে যাতে হাত ধুতে পারেন, সেই ব্যবস্থা করা হয়েছে। রোগীরা যেখানে আছেন, সেখানে মাস্কও দেওয়া হচ্ছে। আর এন টেগোর এবং আমরি হাসপাতালে রোগীদের সাক্ষাৎপ্রার্থীর সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। ইনফ্রারেড থার্মোমিটার দিয়ে আগতদের দেহের তাপমাত্রা মাপা হচ্ছে। স্পিকারে বাজছে করোনা নিয়ে সচেতনতার বার্তা। এনআরএসেও অবশ্য স্পিকারে সচেতনতার বার্তা শোনা গিয়েছে।
এ দিন চিকিৎসক সংগঠন এএইচএসডি-র সাধারণ সম্পাদক মানস গুমটা বলেন, ‘‘হাসপাতালগুলিতে পর্যাপ্ত মাস্ক নেই। হাসপাতালে আসা প্রত্যেক রোগীকে মাস্ক দেওয়া উচিত। প্রবীণেরা একান্ত প্রয়োজন না হলে যাতে হাসপাতালে না আসেন, সে বিষয়েও সচেতনতা গড়ে তোলা উচিত।’’