কলকাতার একটি নামী সরকারি মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হওয়ার পরে বিতর্ক নতুন করে সামনে এসেছে। ফাইল চিত্র।
সরকারি মেডিক্যাল কলেজের মধ্যেই বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজের ম্যানেজমেন্ট কোটার আসনের ধাঁচে ‘ডোনার কোটা’য় ডাক্তারি পড়ার আসন! তা-ও একটি বা দু’টি নয়, শুধু কলকাতাতেই তিনটি প্রথম সারির সরকারি মেডিক্যাল কলেজে এমন ১৫টি আসন রয়েছে এখনও। তাতে প্রতি বছর ছাত্রছাত্রীরা ভর্তিও হচ্ছেন।
এই কোটার আসনগুলিতে ভর্তি হতে ছাত্রছাত্রীদের শুধু নিট-এ পাশ করতে হয়, কিন্তু নম্বরের কোনও মাপকাঠি বাঁধা থাকে না। সংশ্লিষ্ট আসনের ‘ডোনার’দের অনুমোদন থাকলেই তাঁরা ভর্তি হতে পারেন। অথচ, ওই পড়ুয়াদের থেকে নিটে বেশি নম্বর পাওয়া কিংবা ভাল র্যাঙ্ক করা ছাত্রছাত্রীরা কোটার সুবিধা না পাওয়ায় ওই একই মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হতে পারেন না।
এই ব্যবস্থার বিরুদ্ধে বহু দিন ধরেই সরব মেডিক্যাল শিক্ষার সঙ্গে জড়িত একটা বড় অংশ। কারণ, এই আসনগুলিতে ভর্তির উপরে স্বাস্থ্য দফতরের কোনও নিয়ন্ত্রণ বা নজরদারি নেই। এক দিকে যেমন এতে যোগ্যতা বা নম্বরের ভিত্তিতে ভর্তির নিয়ম মানা হয় না, তেমনই ভিতরে-ভিতরে মোটা টাকার বিনিময়ে আসন বিক্রির বা রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে ভর্তির অভিযোগও ওঠে। সম্প্রতি রাজ্যের শাসকদলের এক চিকিৎসক-নেতার সন্তান এই রকম কোটার আসনে কলকাতার একটি নামী সরকারি মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হওয়ার পরে সেই বিতর্ক নতুন করে সামনে এসেছে।
এই আসনগুলিকে ‘ডোনার কোটা’র অন্তর্ভুক্ত বলা হচ্ছে কেন? ব্রিটিশ আমলে মেডিক্যাল কলেজ শুরুর সময়ে ওই ডোনারেরা সংশ্লিষ্ট হাসপাতালকে অর্থ বা জায়গা দান করেছিলেন। তার পরিবর্তে ডাক্তারির কিছু আসন তাঁদের জন্য বরাদ্দ হয়। আর জি কর মেডিক্যাল কলেজে এমন ১০টি আসন রয়েছে, কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে রয়েছে একটি, ন্যাশনাল মেডিক্যালে চারটি।
আর জি কর হাসপাতালে ১০টি আসনের মধ্যে ৮টি হল সুবর্ণবণিক সমাজের কোটার। ওঁদের দু’টি ট্রাস্ট রয়েছে। একটি বিশ্বম্ভর দত্ত ট্রাস্ট। এর আওতায় রয়েছে দু’টি আসন। অন্যটি বি সি দে ট্রাস্ট। যার আওতায় ছ’টি আসন। বাকি দু’টি আসন রয়েছে নেপালের রাজপরিবারের কোটায়। সেখানে নেপাল থেকে ছাত্রছাত্রীদের বাছাই করে পাঠানো হয়।
সুবর্ণবণিক সমাজের সচিব সঞ্জয় মল্লিক বলেন, ‘‘আমরা কাগজে বিজ্ঞাপন দিই, মেডিক্যাল কলেজের নোটিস বোর্ডেও ভর্তির বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। তার পরে সাত দিন অপেক্ষা করা হয়। তার মধ্যে যত আবেদন জমা পড়ে, তার নথিপত্র খতিয়ে দেখে আমাদের কমিটি। আবেদনকারীদের মধ্যে যাঁদের নম্বর বেশি থাকে, তাঁরা পড়ার সুযোগ পান। এর মধ্যে দুর্নীতির জায়গা নেই।’’ তবে অনেকের অভিযোগ, আবেদনকারী যে সুবর্ণবণিক, তা ওই সমাজের যে কোনও তিন জন স্থায়ী সদস্য শংসাপত্র দিয়ে জানালেই হয়। এই প্রক্রিয়া একেবারেই স্বচ্ছ নয়।
রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের অতিরিক্ত স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা সৌগত ভট্টাচার্যের কথায়, ‘‘এই রকম কোনও অভিযোগ আমাদের কাছে কখনও আসেনি। তা ছাড়া, প্রথম থেকেই এই কোটাগুলি ওই হাসপাতালগুলিতে রয়েছে। সেখানে ভর্তির নিয়মও জাতীয় মেডিক্যাল কমিশনের ওয়েবসাইটে দেওয়া আছে।’’ যদিও বিরোধী দল বিজেপির রাজ্য যুব সভাপতি তথা চিকিৎসক-নেতা ইন্দ্রনীল খানের অভিযোগ, ‘‘পশ্চিমবঙ্গে সরকারি মেডিক্যাল কলেজে এ ভাবে ঘুরপথে ম্যানেজমেন্ট কোটা চলছে। নানা পন্থায় ছাত্র-ভর্তি হচ্ছে সেখানে। টাকার খেলাও চলছে।’’
ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজে চারটি আসন লাহাদের কোটায় রয়েছে বলে জানা গিয়েছে। সেখানেও অনুদান এবং তিন-চার বছর আগে থেকে ভর্তির জন্য নাম লিখিয়ে রাখার মতো অভিযোগ উঠেছে। আরও অভিযোগ, বাম আমলে এক সিপিএম নেতার সন্তান এবং তৃণমূলের আমলে শাসকদলের এক বিধায়কের সন্তান ওই কোটার আসনে পড়ে চিকিৎসক হয়েছেন। যদিও এ ব্যাপারে লাহা-রা এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মন্তব্য করতে চাননি।