জমির ‘স্টেটাস আপডেট’-এর বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে উত্তর দমদম পুরসভা। তার জেরে শুরু হয়েছে বিতর্কও।
পুরসভা সূত্রের খবর, গত ১৩ ডিসেম্বর বাড়ির নকশা অনুমোদনে জমির চরিত্র নির্ধারণ সংক্রান্ত একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করেন পুর কর্তৃপক্ষ। নির্দেশিকা অনুযায়ী, পুকুর, জলাশয়, বিল ব্যতীত কোনও জমির পরিমাণ দু’কাঠা আট ছটাকের কম হলে, সরেজমিনে পরিদর্শনের পরে সেই জমির চরিত্র নির্ধারণ করবে পুরসভার অ্যাসেসমেন্ট বিভাগ! পুরসভার ওই বিভাগের দেওয়া ‘শংসাপত্রে’র নিরিখে বিল্ডিং প্ল্যান মিলবে বলে নির্দেশিকায় উল্লেখ রয়েছে।
এই প্রক্রিয়া কার্যকর হলে ঘুর পথে বহুতল নির্মাণকারী সংস্থাগুলি এর সুযোগ নেবে বলেও মনে করছেন পুর আধিকারিকদের একাংশ।
কী ভাবে?
আধিকারিকদের যুক্তি, নিচু কিংবা জলা জমি ভরাট করে সেগুলি নির্দেশিকায় লেখা জমির পরিমাণ অনুযায়ী ভেঙে শংসাপত্র আদায় করা হলে তখন কে আটকাবে? তার জেরে উল্টে ঘুরপথে সেখানে তখন পুরসভার সিলমোহর নিয়ে প্রোমোটিং শুরু হয়ে বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, সরেজমিনে পরিদর্শন শেষে অ্যাসেসমেন্ট বিভাগের কর্মীরা ‘বসবাসযোগ্য জমি’ (হোমস্ট্যাড ল্যান্ড) হিসাবে ‘শংসাপত্র’ দেবেন। পুর আধিকারিকদের বক্তব্য, আইনে তো এই প্রক্রিয়ায় ভূমি ও ভূমি রাজস্ব দফতরের আধিকারিকদেরও যুক্ত থাকার কথা! ফলত এমন প্রশ্নও উঠছে যে শুধুমাত্র পুরসভা একার এই কাজ করার এক্তিয়ার আছে কি না?
বিতর্কের প্রেক্ষিতে পুরপ্রধান সুবোধ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘পুর এলাকায় এমন অনেক জায়গা আছে যেখানে আগে কৃষিজমি বা বাগানবাড়ি ছিল। এখন সেই জমিতে চারপাশে ঘর হলেও মাঝে কিছু ছোট ছোট প্লট রয়েছে। সেই জমিগুলির কথা ভেবে এই পদক্ষেপ করা হয়েছে। কোনও বড় জমিকে ছোট ছোট প্লট করে কেউ বসবাসযোগ্য জমির তকমার জন্য আবেদন করলে, তার আশপাশের এলাকা ফাঁকা কি না তা যাচাই করা হচ্ছে। আশপাশে বসতবাড়ি থাকলেই হোমস্ট্যাডের তকমা দেওয়া হচ্ছে। এখানে আইনের কোনও সমস্যা নেই।’’
তবে পুরসভার এমন পদক্ষেপ নেওয়ার এক্তিয়ার আছে কি?
জেলার ভূমি সংস্কার দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘এ ধরনের শংসাপত্রের আদৌ আইনি বৈধতা আছে কি না, তা নিয়ে কিছু বলতে চাই না! তবে পশ্চিমবঙ্গ ভূমি সংস্কার আইন (১৯৫৫) অনুযায়ী, জমির চরিত্র বদলে শংসাপত্র দেওয়ার ক্ষমতা একমাত্র কালেকক্টরের আছে। কালেক্টর মানে জেলাশাসক, ডিএলআরও, এসডিএলআরও এবং বিএলআরও।’’
রাজ্য পুর দফতরের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, ‘‘ছোট জমিতে নকশা অনুমোদনের প্রক্রিয়াকে তরান্বিত করতে স্থানীয় স্তরে এই নির্দেশিকা হয়তো জারি করা হয়েছে। তবে জমির চরিত্র নির্ধারণ পুরোপুরি ভূমি ও ভূমি রাজস্ব দফতরের অন্তর্গত।’’
ভূমি ও ভূমি রাজস্ব দফতরের ব্লক স্তরের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘কী ধরনের জমির শংসাপত্র দেওয়া হবে নির্দেশিকায় তা কিন্তু স্পষ্ট নয়।’’
পুরসভার জারি করা ওই বিজ্ঞপ্তির বয়ান ঘিরে বিতর্ক প্রসঙ্গে পুরপ্রধান সুবোধবাবু বলেন, ‘‘ আমরা যে কাগজ দিচ্ছি সেটিকে শংসাপত্রের চেয়ে এনওসি বলাই ভাল। কোনও জমি হোমস্ট্যাড ল্যান্ড বলছি না। আমরা বলছি,
হোমস্ট্যাড ল্যান্ড হিসাবে ব্যবহার করা যেতে পারে! আইনের অনেক ব্যখ্যাই হয়। পুর আইন মেনেই ওই নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে।’’