ঘটনা ১: ঝকঝকে নতুন গাড়ি ১১ লক্ষ টাকা দিয়ে কিনে দেখা গেল, ইঞ্জিন গড়বড় করছে। মৌলালির বাসিন্দা অনিন্দ্য মজুমদার বার বার প্রস্তুতকারক সংস্থাকে বললেও কাজ হয়নি। ২০১৫-র এপ্রিলের কথা। সে বছর অগস্টে তিনি ক্রেতা সুরক্ষা দফতরের দ্বারস্থ হন। পরের বছর ফেব্রুয়ারিতে দফতরের মধ্যস্থতায় পুরো টাকা ফেরত পান অনিন্দ্যবাবু।
ঘটনা ২: মেদিনীপুরের বাসিন্দা, পূর্ত দফতরের কর্মী মতিলাল বারিক গত বছর জুলাইয়ে দেখেন, তাঁর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে ৪০ হাজার টাকা গায়েব। ওই ব্যাঙ্কের লোয়ার সার্কুলার রোড শাখায় তাঁর অ্যাকাউন্ট। কিন্তু কর্তৃপক্ষকে জানিয়েও লাভ হয়নি। শেষে গত ১০ ফেব্রুয়ারি পুরো টাকা ফেরত পেয়েছেন তিনি, সেই ক্রেতা সুরক্ষা দফতরের মধ্যস্থতায়।
ঘটনা ৩: পুরো টাকা মিটিয়ে দেওয়ার পরেই যাদবপুরের নতুন ফ্ল্যাটে থাকতে শুরু করেন তাপস দে। ২০১৫-র জানুয়ারি থেকে। কিন্তু শর্ত মেনে প্রোমোটার কিছুতেই রেজিস্ট্রেশন করাচ্ছিলেন না। ২০১৫-র জুনে তাপসবাবু ক্রেতা সুরক্ষা দফতরের দ্বারস্থ হলে তাদের মধ্যস্থতায় গত বছরের জানয়ারিতে সেই প্রোমোটারই ফ্ল্যাটের রেজিস্ট্রেশন করিয়ে দেন।
ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে মামলার নিষ্পত্তি হতে অন্তত দেড়-দু’বছর সময় লাগে। তা ছাড়া, মামলা চালানোর খরচ, ঝক্কি— দু’টোই পোহাতে হয় ক্রেতাকে। তাই, আদালতের চৌকাঠ পেরোনোর আগে দু’পক্ষকে মুখোমুখি বসিয়ে যাতে সমাধান করা যায়, সেই জন্য মধ্যস্থতায় উদ্যোগী হয়েছে ক্রেতা সুরক্ষা দফতর। যার পোশাকি নাম ‘সেন্ট্রাল কনজিউমার গ্রিভান্স রিড্রেসাল সেল’। বহু ক্ষেত্রেই নিষ্পত্তি হচ্ছে ছ’-আট মাসের মধ্যে।
এটা চালু হয়েছে ২০১২-র জুনে। ফ্রি স্কুল স্ট্রিটে খাদ্যভবনে এই সেল কাজ করছে।
ক্রেতা সুরক্ষা দফতর সূত্রের খবর, প্রথম বছর, ২০১২-১৩-তে জমা পড়া ৫৩৪টি অভিযোগের মধ্যে ৩৭৬টির নিষ্পত্তি হয় ক্রেতা সুরক্ষা দফতরের মধ্যস্থতায়। ২০১৩-১৪ সালে ২,১৫১-র মধ্যে ১৬৫৮টি অভিযোগের সমাধান, ২০১৪-১৫ সালে ৩৫৬৯টির মধ্যে ৩০১৭টি ও ২০১৫-১৬-তে ৪৬১৬ অভিযোগের মধ্যে ৩৫৫৩-এর সমাধান হয়েছে মধ্যস্থতা করে। ২০১৬-১৭ সালে অর্থাৎ চলতি আর্থিক বছরে এখনও পর্যন্ত জমা পড়া ৩৮৮০টি অভিযোগের মধ্যে ক্রেতা সুরক্ষা দফতরের মধ্যস্থতায় ৩০২৬টির সমাধান হয়েছে।
ক্রেতার সমস্যা নিয়ে অভিযোগ আদালতে গড়ানোর আগেই দু’পক্ষের উপস্থিতিতে দফতরের মধ্যস্থতায় মীমাংসার এই পদ্ধতি দেশের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গই শুরু করেছে বলে রাজ্য সরকারের দাবি। রাজ্যের ক্রেতা সুরক্ষা মন্ত্রী সাধন পাণ্ডে বলেন, ‘‘আমাদের দেখে একাধিক রাজ্য এই মডেলকে অনুসরণ করতে চাইছে।’’ তিনি জানান, আগামী দিনে কেন্দ্র ১৯৮৬ সালের ক্রেতা সুরক্ষা আইনে সংশোধন আনতে চলেছে। সেই বিলেও মধ্যস্থতার মাধ্যমে ক্রেতার সমস্যার সমাধান করার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হবে বলে সাধনবাবুর দাবি।