দোকানের কাচ ভেঙে জখম

ক্ষতিপূরণ দিতে নির্দেশ আদালতের

পুলিশ জানিয়েছে, এর পরে বসুন্ধরার মাসি তাঁর নিজের শাড়ির একাংশ ছিঁড়ে ফেলেন। তা দিয়েই ছিঁড়ে যাওয়া মাংসের টুকরো পায়ের সঙ্গে বেঁধে স্থানীয় একটি হাসপাতালে নিয়ে যান বসুন্ধরাকে। সেখানেই ওই নাবালিকার পায়ে বড় অস্ত্রোপচার করতে হয়। পুলিশ সূত্রের খবর, বসুন্ধরার পায়ে প্রায় ১২ ইঞ্চি গর্ত হয়ে গিয়েছিল। সেখানে ৮২টি সেলাই দিতে হয়।

Advertisement

মেহবুব কাদের চৌধুরী

শেষ আপডেট: ০৯ জুলাই ২০১৮ ০২:০৯
Share:

প্রতীকী ছবি।

বছর চারেক আগে মিষ্টির দোকানের কাচের দরজার একাংশ ভেঙে পড়েছিল এক নাবালিকার পায়ের উপরে। কাচের টুকরোর আঘাতে গুরুতর ভাবে জখম হয়েছিল লেক গার্ডেন্সের বাসিন্দা বসুন্ধরা দাসের বাঁ পা। ঘটনার জেরে এখনও পর্যন্ত স্বাভাবিক ভাবে হাঁটাচলা করতে পারে না সে। ওই মিষ্টির দোকানের দুই মালিকের বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করার পাশাপাশি, রাজ্য ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন বসুন্ধরার বাবা। সম্প্রতি ওই নাবালিকাকে প্রায় দু’লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য মিষ্টির দোকানের দু’জন মালিককে নির্দেশ দিয়েছে রাজ্য ক্রেতা সুরক্ষা আদালত।

Advertisement

পুলিশ সূত্রের খবর, ২০১৪ সালের ৪ জুন বসুন্ধরা তার মাসির সঙ্গে স্থানীয় একটি মিষ্টির দোকানে গিয়েছিল। অভিযোগ, ওই দোকানের কাচের দরজার একাংশে ফাটল ছিল। পুলিশ জানিয়েছে, মিষ্টি কিনে দোকান থেকে বেরোনোর সময় বসুন্ধরা দোকানের দরজা টেনে খুলতেই তার বাঁ পায়ের উপরে কাচ ভেঙে পড়ে। গুরুতর ভাবে আহত হয় বসুন্ধরা। দোকান মালিকদের গাফিলতির অভিযোগ তুলে সে দিনই পুলিশে অভিযোগ করে বসুন্ধরার পরিবার। ইতিমধ্যেই ওই মিষ্টির দোকানের মালিক সুব্রত সেন ও গোপাল সেনের বিরুদ্ধে চার্জশিট জমা দিয়েছে পুলিশ।

আহত নাবালিকার পরিবারের অভিযোগ, সে দিন ঘটনার পরে দোকানের মালিক থেকে কর্মচারীদের কেউই এগিয়ে এসে ন্যূনতম সাহায্যও করেননি। বসুন্ধরার বাবা বিমল দাসের অভিযোগ, ‘‘কাচ ভেঙে পড়ায় মেয়ের কাফ মাসলের মাংসের টুকরো ছিঁড়ে আলাদা হয়ে যায়। মেয়ে যন্ত্রণায় ছটফট করতে করতে দোকানের মেঝেতেই লুটিয়ে প়ড়ে। সে সময়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা তো দূর অস্ত্‌, দোকানের মালিকদের থেকে এক টুকরো কাপড়় চেয়েও পাননি আমার শ্যালিকা।’’

Advertisement

পুলিশ জানিয়েছে, এর পরে বসুন্ধরার মাসি তাঁর নিজের শাড়ির একাংশ ছিঁড়ে ফেলেন। তা দিয়েই ছিঁড়ে যাওয়া মাংসের টুকরো পায়ের সঙ্গে বেঁধে স্থানীয় একটি হাসপাতালে নিয়ে যান বসুন্ধরাকে। সেখানেই ওই নাবালিকার পায়ে বড় অস্ত্রোপচার করতে হয়। পুলিশ সূত্রের খবর, বসুন্ধরার পায়ে প্রায় ১২ ইঞ্চি গর্ত হয়ে গিয়েছিল। সেখানে ৮২টি সেলাই দিতে হয়।

কিন্তু অস্ত্রোপচারের পরেও স্বাভাবিক ভাবে হাঁটাচলা করতে পারত না বসুন্ধরা। সে সময়ে ক্ষতিপূরণ চেয়ে দক্ষিণ কলকাতার ওই মিষ্টির দোকানের বিরুদ্ধে ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে মামলার দায়ের করেন বিমলবাবু। ২০১৭ সালের অগস্টে কলকাতা জেলা ক্রেতা সুরক্ষা আদালত ওই ঘটনার জন্য মিষ্টির দোকানের মালিকদের গাফিলতিকেই দায়ী করে। সে সময় ওই নাবালিকাকে ক্ষতিপূরণ বাবদ ৩০ হাজার টাকা দেওয়ার নির্দেশ দেয়। কিন্তু তত দিনে মেয়ের চিকিৎসার জন্য লক্ষাধিক টাকা খরচ হয়ে গিয়েছিল বিমলবাবুর। তাই ক্ষতিপূরণ বাবদ এত অল্প পরিমাণ টাকা পেয়ে এ বার রাজ্য ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে মামলা করেন তিনি।

সম্প্রতি রাজ্য ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের বিচারক শ্যামল গুপ্ত ও উৎপলকুমার ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘দোকানের কাচ ভাঙা থাকা সত্ত্বেও তা সারাই না করার জন্য কর্তৃপক্ষ দায় এড়াতে পারেন না।’’ এর পরেই রাজ্য ক্রেতা আদালতের দুই বিচারক বসুন্ধরার চিকিৎসার খরচ-সহ তার শারীরিক ও মানসিক যন্ত্রণার কথা মনে করিয়ে দিয়ে ক্ষতিপূরণ বাবদ প্রায় দু’লক্ষ টাকা দিতে নির্দেশ দেন।

আরও পড়ুন: লোকালয়ে রাতদিনই লঙ্কা-কাণ্ড, কোথায় পুরসভা

লেক গার্ডেন্সের ওই মিষ্টির দোকানের অভিযুক্ত দুই মালিকের আইনজীবী দেবাঞ্জন চক্রবর্তীর অবশ্য দাবি, ‘‘আমার মক্কেলদের দোকানের দরজার কাচ ভাঙা ছিল না। তাঁদের ফাঁসানো হয়েছে। রাজ্য ক্রেতা আদালতের রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে জাতীয় ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে যাব।’’ হাল ছাড়তে রাজি নয় বসুন্ধরার পরিবারও। অভিযোগকারী বিমলবাবু বলছেন, ‘‘আমার একমাত্র মেয়ের বাঁ পায়ে প্লাস্টিক সার্জারি করতে হবে শীঘ্রই। দোকান মালিকদের বিরুদ্ধে যত দূর যেতে হয় যাব।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement