Durga Puja 2023

পুজোয় যত্রতত্র খাবারের স্টল, গুণমান বিচার করবে কে?

পুজোর মুখে শহরের বিভিন্ন মণ্ডপকে কেন্দ্র করে এ ভাবেই যত্রতত্র গজিয়ে ওঠে অসংখ্য খাবারের স্টল। বিশেষ করে, বড় বড় পুজোর আশপাশে, যেখানে সাধারণত ভিড় হয় বেশি।

Advertisement

আর্যভট্ট খান

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ অক্টোবর ২০২৩ ০৬:২১
Share:

—প্রতীকী চিত্র।

এ যেন ছিল রুমাল, হয়ে গেল বেড়াল!

Advertisement

ছিল পাড়ার এক কোণে ছোট্ট একটি চায়ের দোকান। পুজো আসতেই মণ্ডপের সামনে সেই চায়ের দোকানি খুলে ফেললেন রোল-চাউমিনের দোকান। একই ভাবে পাড়ার এক ফল বিক্রেতা পুজোর সময়ে কয়েক জন বন্ধুর সঙ্গে মিলে চালু করে দিলেন মোমোর দোকান। অথচ, মোমো তৈরি সম্পর্কে বিশেষ ধারণাই নেই তাঁর। গুণমানের বিষয়েও কোনও সচেতনতা নেই।

পুজোর মুখে শহরের বিভিন্ন মণ্ডপকে কেন্দ্র করে এ ভাবেই যত্রতত্র গজিয়ে ওঠে অসংখ্য খাবারের স্টল। বিশেষ করে, বড় বড় পুজোর আশপাশে, যেখানে সাধারণত ভিড় হয় বেশি। প্রশ্ন উঠেছে, এই সব দোকানে যে খাবার তৈরি হচ্ছে, সেগুলির গুণমান যাচাই করবে কে? এই সমস্ত দোকানে খেয়ে কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে তার দায়ই বা কে নেবে? অধিকাংশ ক্ষেত্রে স্রেফ পুজো কমিটির অনুমতি নিলেই এই সব খাবারের স্টল দেওয়া যায়। স্টল বাবদ প্রাপ্য ভাড়া বুঝে নেওয়া ছাড়া পুজো কমিটিরও কোনও ভূমিকা থাকে না। পুজোকর্তারাও স্বীকার করছেন, তাদের পক্ষে স্টলের খাবারের মান যাচাই করা সম্ভব নয়।

Advertisement

উল্লেখ্য, পুজোয় সব চেয়ে বেশি বিক্রি হওয়ার মধ্যে আছে রোল এবং চাউমিন। বিভিন্ন অলিগলিতেও গজিয়ে ওঠে এই দু’টির দোকান। সেখানে এত বেশি পরিমাণে চাউমিন লাগে যে, দোকানিরা কোনও নির্দিষ্ট ব্র্যান্ডের বদলে পাইকারি হারে চাউমিন কেনেন। ফলে, সেই চাউমিন কতটা স্বাস্থ্যসম্মত ভাবে তৈরি হচ্ছে, প্রশ্ন থাকছে তা নিয়ে। ওই জায়গাগুলিতে কলকাতা পুরসভার নজরদারি কতটা আছে, থাকছে সেই প্রশ্নও।

কলেজ স্কোয়ার সর্বজনীনের মুখ্য সচেতক বিকাশ মজুমদার বললেন, “স্টলের খাবারের গুণমান যাচাই করা পুজোর কর্মকর্তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। তবে মণ্ডপের আশপাশের স্টলে আগুন জ্বালাতে দিই না। মাইক্রোওভেনে খাবার তৈরি বা গরম করতে বলি।” বাগুইআটির রেলপুকুর ইউনাইটেড ক্লাবের যুগ্ম সম্পাদক উৎপল চন্দ্রের মতে, “পুজোর সময়ে খাবারের স্টলের ভাড়া হয়তো হাজার পাঁচেক টাকা। তবে, বেকার ছেলেমেয়েরা মিলে স্টল দিতে চাইলে আরও কম ভাড়া নেওয়া হয়। কিন্তু আমাদের লোকবল এত নেই যে, খাবারের গুণমান বিচার করা যাবে। তবে, কোনও স্টলের খাবারে সমস্যা আছে জানতে পারলে নিশ্চয়ই ব্যবস্থা নেওয়া হয়।” শ্যামবাজার পল্লি সঙ্ঘের পুজোকর্তা সুব্রত ভট্টাচার্যের কথায়, “গত বছরই মণ্ডপের কাছে একটি স্টলের খাবারে পচা গন্ধ পাওয়া গিয়েছিল। আমরা সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিয়েছিলাম। খাবারের স্টল থেকে শুধু যে পুজো কমিটির উপার্জন হয়, এমনটা নয়। এলাকার বেকার ছেলেমেয়েদেরও একটু উপার্জন হয়। পুজো করতে গেলে এ সব দিকও বিবেচনায় রাখতে হয়। আর খাবারের গুণমান বিচারের দায়িত্ব তো পুরসভার।”

পুরসভার মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) তথা ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষের দাবি, কিছু দিনের মধ্যেই পুরসভার দল অস্থায়ী স্টলগুলির খাবারের মান যাচাই করতে বেরোবে। অতীন বলেন, “যে সব উপকরণ দিয়ে রান্না হচ্ছে, সেগুলির গায়ে ফুড সেফটি অথরিটির কোনও স্ট্যাম্প আছে কি না, তা দেখে নেওয়া হয়। খোলা তেল-মশলা নয়, প্যাকেটবন্দি তেল-মশলাই ব্যবহার করতে বলা হয়। অভিযোগ পেলে তা খতিয়ে দেখে প্রয়োজনে সেই খাবারের স্টল বন্ধ করে দেওয়া হয়।” তবে, পুরকর্তার এই দাবি কতটা বাস্তবসম্মত, তা নিয়ে সন্দেহ আছে অনেকেরই।

পুজোর দিনগুলিতে সারা রাত ঘুরে খিদে পেলে অস্থায়ী স্টলই ভরসা বলে মনে করছেন অনেক দর্শনার্থী। তাঁদের মতে, নামী বা বড় রেস্তরাঁয় সব সময়ে জায়গা পাওয়া যায় না। অনেকের সামর্থ্যও থাকে না। তখন রাস্তার স্টলই ভরসা। ‘ফোরাম ফর দুর্গোৎসব’-এর সাধারণ সম্পাদক তথা হাতিবাগান সর্বজনীনের কর্মকর্তা শাশ্বত বসুর পাল্টা প্রশ্ন, “পুজোর সময়ে ভিড়ের যা চাপ থাকে, বড় রেস্তরাঁগুলিও কি খাবারের গুণমান বজায় রাখতে পারে? আমাদের মণ্ডপের আশপাশে নামী ব্র্যান্ডের স্টল বসে। অস্থায়ী স্টলে হয়তো পাড়ার ছেলেরা মিলে বড়জোর চায়ের দোকান করে।”

জনস্বাস্থ্য বিষয়ক চিকিৎসক অনির্বাণ দলুই মনে করেন, পুজোর সময়ে যিনি অস্থায়ী স্টল করছেন এবং যিনি খাচ্ছেন, দু’পক্ষেরই সতর্ক থাকা দরকার। অনির্বাণ বলেন, “যাঁরা খাবারের স্টল দিচ্ছেন, তাঁদের বলব, রান্নায় ভাল জল ব্যবহার করুন। উচ্ছিষ্ট যেন দোকানের এ দিকে-ও দিকে ছড়িয়ে না থাকে। আর দর্শনার্থীদের বলব, গরম গরম রান্না হচ্ছে, এমন খাবার খান। জল থেকেই সংক্রমণ বেশি ছড়ায়। প্রয়োজনে নিজের জলের বোতল সঙ্গে রাখুন। অথবা, বোতলবন্দি জল কিনে খান।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement