তোড়জোড়: মানিকতলা বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনের জন্য রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের বি টি রোড ক্যাম্পাস থেকে ভোটের সরঞ্জাম সংগ্রহ করছেন ভোটকর্মীরা। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।
বহিরাগতদের দাপটে উপনির্বাচনে এলাকার শান্তি বিঘ্নিত হবে না তো? শেষ বেলায় এই আশঙ্কাই জোরালো হচ্ছে মানিকতলায়। ওই বিধানসভা কেন্দ্রে উপনির্বাচনের আগে এলাকা ‘দখলে’ রাখতে শাসক ও বিরোধীদের তৎপরতা সেই আশঙ্কা আরও কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ।ফলে, ভোটের সকালে শহরতলি থেকে বহিরাগতদের ঢোকার আশঙ্কা যেমন থাকছে, তেমনই বাড়ছে গোলমালের আশঙ্কাও। যদিও গোলমাল আটকাতে মঙ্গলবার সকাল থেকেই মানিকতলা এবং সংলগ্ন এলাকায় বাহিনী নামানো হয়েছে বলে জানিয়েছে পুুলিশ।
আজ, বুধবার মানিকতলা বিধানসভা কেন্দ্রে উপনির্বাচন। বিগত একাধিক নির্বাচনে মানিকতলায় অশান্তির ঘটনা ঘটেছে। সে পুরসভাই হোক বা বিধানসভা— কোনও নির্বাচনই কার্যত বাদ যায়নি। বহিরাগত লোকজনকে দিয়ে গোলমাল, মারধর থেকে শুরু করে তাদের এবং পাড়ার ‘দাদাদের’ মদতে ভোটারদের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বার বার। গত পুর নির্বাচনেও মানিকতলা বিধানসভা কেন্দ্র এলাকায় বোমাবাজির অভিযোগ ওঠে। বাইরে থেকে আসা লোকজনই বোমাবাজিতে যুক্ত ছিল বলে অভিযোগ।
উপনির্বাচনেও যে তেমন কিছু হতে পারে, সেই আশঙ্কা তাই উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না বলে মনে করছেন এলাকাবাসীর একাংশ। এমনিতেই কলকাতা এবং সংলগ্ন এলাকার মধ্যে উপনির্বাচন হচ্ছে শুধু মানিকতলায়। শহরের বাকি অংশে কোনও নির্বাচন না থাকায় রাজনৈতিক দলগুলির কর্মী-সমর্থকদের জড়ো করে ক্ষমতা দেখানোর আশঙ্কা থাকছেই। শহরতলির উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, হাওড়া, হুগলি থেকে বহিরাগতেরা যে মানিকতলা বা সংলগ্ন এলাকায় আসবে না, সেই নিশ্চয়তা দেওয়া যাচ্ছে না বলেই মনে করছেন অনেকে। ভোটের এক দিন আগে থেকে তার আভাস মিলতে শুরু করেছে বলেও দাবি করছেন বাসিন্দারা। বিভিন্ন এলাকায় অচেনা মুখের আনাগোনা বেড়েছে বলে অভিযোগ।
মানিকতলা কেন্দ্রের এক বাসিন্দার কথায়, ‘‘কখনও বাইকে করে দল বেঁধে কয়েক জন ঘুরে যাচ্ছে। কখনও পাড়ার মোড়ের চায়ের দোকানে লোকজন দাঁড়িয়ে থাকছে। কারা এলাকার, কারা বাইরের, কিছুই বোঝা যাচ্ছে না।’’ এমনকি, মানিকতলা সংলগ্ন এলাকায় যে বহিরাগতেরা জড়ো হয়ে থাকবে না, তা নিয়েও নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না।
কলকাতা পুলিশের তরফে যদিও বহিরাগতদের আটকাতে সব রকম ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে। লালবাজার সূত্রের খবর, ভোটের এক দিন আগে, অর্থাৎ মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৬টা থেকে শ্যামবাজার পাঁচ মাথার মোড়, উল্টোডাঙা এবং কলকাতা স্টেশন সংলগ্ন রাস্তা-সহ বিভিন্ন এলাকায় বিশেষ নাকা তল্লাশির ব্যবস্থা করা হয়েছে। মেট্রোয় চেপে এসে যাতে বহিরাগতেরা নির্বাচনী এলাকায় ঢুকতে না পারে, তার জন্যও থাকছে পুলিশি বন্দোবস্ত। মানিকতলা কেন্দ্রে ঢোকার জায়গাগুলি চিহ্নিত করে সেখানে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। গাড়ি ধরে ধরে তল্লাশির পাশাপাশি কেউ, কেন এলাকায় এসেছেন, কখন ফিরবেন— তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ ছাড়াও শহরের ক্লাব, কমিউনিটি হল বা হোটেলগুলিতে যাতে কোনও বেআইনি জমায়েত না হয়, তা-ও দেখা হচ্ছে। বেআইনি জমায়েত এবং বহিরাগতদের আটকাতে নামানো হয়েছে কুইক রেসপন্স টিম, এইচআরএফসি টিম।
এর পরেও কি বহিরাগতদের ঠেকানো যাবে? লালবাজারের এক কর্তা যদিও বলেন, ‘‘উপনির্বাচনে যাতে অশান্তি না হয়, সেটাই লক্ষ্য। বহিরাগতদের আটকাতেও বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এক দিন আগে থেকে পুলিশ নেমেছে। ভোটারেরা যাতে নির্ভয়ে নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন, তার ব্যবস্থা করা হয়েছে।’’