—প্রতীকী চিত্র।
উৎসবের মরসুম বেশি দেরি নেই। ফের মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে যেতে বসেছে আনাজের দাম। বাজার করতে বেরিয়ে আনাজের দামে ‘ক্লিন বোল্ড’ হওয়ার অবস্থা। শুধু কলকাতার বাজারেই নয়, রাজ্য জুড়ে আনাজের দাম বেড়েছে। বিক্রেতারা সতর্ক করে বলছেন, ঊর্ধ্বমুখী এই দাম পুজোর মধ্যে নামার সম্ভাবনা কম। শীত পড়লে হয়তো ফের বাজারে আনাজের দাম আয়ত্তে আসবে।
দক্ষিণের গড়িয়াহাট বাজার বা লেক মার্কেট, উত্তরের মানিকতলা বাজার বা শোভাবাজারে গেলে দেখা যাচ্ছে, পটল, ঢেঁড়স, বেগুন, ঝিঙে কিনতে গিয়ে নিত্যদিন হাত পুড়ছে। কেজি প্রতি বেগুন ৯০-১০০ টাকা, ঝিঙে ৭০-৮০ টাকা, ঢেঁড়স ৭০ টাকা, করলা ৭০-৮০ টাকা, গাজর ৭০ টাকা, বিনস ১৫০ টাকা, লঙ্কা ১০০ টাকা, ক্যাপসিকাম ১৫০ টাকা, পেঁয়াজ ৬০-৬৫ টাকা, আদা ২৫০-৩০০ টাকা, রসুন ৩৫০ টাকা, আলু ৩০-৩৫ টাকা।
আনাজের দাম বৃদ্ধি কেন, তা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বিক্রেতাদের দাবি, পুজোর আগে টানা বৃষ্টিই এর মূল কারণ। অতিবৃষ্টিতে মাঠেই নষ্ট হয়েছে ফসল। বিশেষ করে ক্ষতি হয়েছে বেগুন, পটল, শসা, উচ্ছের। দামোদর অববাহিকায় জলস্তর বৃদ্ধির ধাক্কা লেগেছে দক্ষিণবঙ্গের বড় অংশে। বাঁকুড়ায় দামোদরের তীরেই সাধারণত আনাজ চাষ হয়। তিন-চার দিনের ব্যবধানে সব আনাজের দাম সেখানে কেজিতে ২০ টাকা করে বেড়েছে। উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন শহরে রসুনের দাম ৩৫০ টাকা কেজি। দক্ষিণের বিভিন্ন জেলায় ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা কেজি। আদা কোথাও ১৮০, তো কোথাও ৪০০ টাকা কেজি!
আনাজের দাম বৃদ্ধি নিয়ে রাজ্য টাস্ক ফোর্সের সদস্যদের অবশ্য মত, সম্প্রতি আরামবাগ ও ঘাটালে বন্যার জন্য যে সব এলাকার ফসল নষ্ট হয়েছে, তার প্রভাব কলকাতার বাজারে পড়ার কথা নয়। কারণ, কলকাতায় আনাজ আসে দুই ২৪ পরগনা, নদিয়া, হাওড়া থেকে। সেখানে যা বৃষ্টি হয়েছে, তাতে ফসলের তেমন ক্ষতি হয়নি।
টাস্ক ফোর্সের সদস্য রবীন্দ্রনাথ কোলের দাবি, ‘‘কিছু অসাধু ব্যবসায়ী বন্যার সুযোগে দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন। এই সময়ে গরমের ফসল পটল, ঢেঁড়স, ঝিঙের জোগান কমছে। তার অর্থ এই নয় যে, দাম অস্বাভাবিক বাড়বে।’’ রবীন্দ্রনাথের মতে, স্টোরে আলুর জোগান ভাল। জ্যোতি আলুর দাম ৩০ টাকার বেশি হওয়ার কথা নয়।
রাজ্য টাস্ক ফোর্সের আর এক সদস্য তথা ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল চাষি ভেন্ডার সমিতি’র সভাপতি কমল দে বলেন, ‘‘প্রতি বছর এই সময়ে আনাজের দাম একটু বাড়ে। কারণ গরমের আনাজের জোগান কমতে থাকে। আর শীতের ফসল বাজারে আসতে থাকে। তাই বলে কলকাতার বাজারে যদি কেউ বন্যার যুক্তি দিয়ে আনাজের দাম বাড়ান, সেটা একেবারেই ঠিক নয়।’’ গড়িয়াহাট বাজার সমিতির সভাপতি দিলীপ মণ্ডল বলেন, ‘‘কলকাতায় আনাজ আসে দুই ২৪ পরগনা, হাওড়া, নদিয়া থেকে। সেখানে বন্যা না হলেও টানা বৃষ্টি হয়েছে। ফলে দাম বেড়েছে।’’
বিক্রেতাদের মতে, ভিন্ রাজ্য থেকে আসা টোম্যাটো, ক্যাপসিকামেরও দাম বেড়েছে। ভিন্ রাজ্যে বন্যার জন্য ঝাড়খণ্ডের ট্রাক রাজ্যে না ঢোকায় এই সব আনাজের জোগান কমেছিল। রবীন্দ্রনাথের দাবি, ‘‘আনাজের দামের উপরে নজরদারি চলছে। তবে শীতের আনাজ না আসা পর্যন্ত দাম কিছুটা বেড়েই থাকবে।’’