Rats In Kolkata

ইঁদুরের উপদ্রবে ত্রস্ত পুরকর্মী ও আধিকারিকেরা, তাড়াতে শব্দতরঙ্গ প্রয়োগ

কলকাতা শহরে যে ভাবে ইঁদুরের উৎপাত বেড়ে চলেছে, তাতে সম্প্রতি সাধারণ মানুষকে বার বার সাবধান করেছেন খোদ মেয়র ফিরহাদ হাকিম।

Advertisement

মেহবুব কাদের চৌধুরী

কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ জানুয়ারি ২০২৪ ০৬:৩৫
Share:

—প্রতীকী চিত্র।

কম্পিউটার চালু করে কীবোর্ডে আঙুল চালালেও পর্দায় কিছু ফুটে উঠছে না দেখে একটু অবাকই হয়েছিলেন কলকাতা পুরসভার এক মহিলা কর্মী। বার বার চেষ্টা করার পরেও কম্পিউটার অন না হওয়ায় একটু সন্দেহ হয় তাঁর। শেষে টেবিলের নীচের দিকে তাকাতেই তাজ্জব হয়ে যান তিনি। দেখেন, কম্পিউটারের তার কাটা!

Advertisement

কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। কয়েক মাস আগে কলকাতা পুরসভার সদর দফতরের তেতলায় একটি অফিস ঘরে এ ভাবেই একাধিক কম্পিউটারের তার কেটে দিয়েছিল ইঁদুরের দল। পুর ভবনে যে ভাবে ইঁদুর বংশবিস্তার করছে, তাতে ঘোরতর চিন্তায় বিভিন্ন বিভাগের কর্মী ও আধিকারিকেরা। পুর সচিবালয় বিভাগের এক কর্মীর কথায়, ‘‘অফিস করতেই আতঙ্ক লাগছে। খালি ভয় হচ্ছে, পায়ে কামড়ে না দেয়!’’

প্রসঙ্গত, কলকাতা শহরে যে ভাবে ইঁদুরের উৎপাত বেড়ে চলেছে, তাতে সম্প্রতি সাধারণ মানুষকে বার বার সাবধান করেছেন খোদ মেয়র ফিরহাদ হাকিম। ‘টক টু মেয়র’ অনুষ্ঠানে তিনি পুর আধিকারিকদের সামনেই শুনিয়েছিলেন, কী ভাবে চেতলায় তাঁর বাড়ির অফিস ঘরে ঢুকে পড়েছিল ইঁদুর। আতঙ্কিত মেয়র বলেছিলেন, ‘‘কী ভাবে ইঁদুর বাস করছে, তা আগামী দিনে বোঝা যাবে। সুরাত শহর একটা সময়ে প্লেগে ছেয়ে গিয়েছিল। এখন থেকে সতর্ক না হলে ভবিষ্যতে মহামারি হতে পারে কলকাতায়।’’

Advertisement

কলকাতা পুর ভবনের মেয়র’স বিল্ডিংয়ের তেতলায় আইন বিভাগে স্তূপাকৃতি হয়ে রয়েছে কাগজ ভর্তি ফাইল। মাঝে সরু পথ দিয়ে মুখ্য আইন আধিকারিকের ঘরে যেতে হলে সেখানেও ইঁদুরের ভয়। পুর স্বাস্থ্য বিভাগের এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘কলকাতা পুর ভবনের চার পাশে একাধিক খাবারের দোকান রয়েছে। সেখানে খেয়ে অনেকেই উচ্ছিষ্ট ফেলেন রাস্তায়। আর সেই উচ্ছিষ্ট খেয়ে বংশবিস্তার করছে ইঁদুরেরা।’’

তবে, ইঁদুর না মেরে তাকে জব্দ করতে মাস দুয়েক আগে ব্যবস্থা নেওয়া শুরু করেছে পুরসভা। আপাতত পুরসভার আলো বিভাগকে এই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তারা পরীক্ষামূলক ভাবে চারটি জায়গায় বিশেষ যন্ত্র বসিয়েছে। ওই চার জায়গা হল মেয়রের ঘর, কনফারেন্স রুম, নতুন কন্ট্রোল রুম এবং নিউ মার্কেটে কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা দফতরের চারতলায় তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ।

আলো বিভাগের এক ইঞ্জিনিয়ারের কথায়, ‘‘প্রতিটি জায়গায় কন্ট্রোল ইউনিট এবং একাধিক অ্যান্টেনা রাখা হয়েছে। কন্ট্রোল ইউনিট থেকে শব্দতরঙ্গ পাঠিয়ে ইঁদুর তাড়ানো হচ্ছে।’’ কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, ইঁদুর না মেরে শুধুমাত্র শব্দতরঙ্গের সাহায্যে তাদের ওই সব এলাকা থেকে তাড়ানো গেলেও বাকি জায়গায় তো তারা স্বমহিমায় থাকবে? এতে তো আখেরে কাজের কাজ কিছু হবে না?

এ ব্যাপারে মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) তথা ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষ বলেন, ‘‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশ আছে, ইঁদুর মারা যাবে না। তবে তারা যাতে বংশবিস্তার না করে, সে জন্য আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। রাস্তার ধারে যেখানে সেখানে খাবারের উচ্ছিষ্ট ফেলা যাবে না।’’ শব্দতরঙ্গের মাধ্যমে পুরসভার ভিআইপি জ়োনে ইঁদুরের আনাগোনা ঠেকানো গেলেও পুরকর্মীরা প্রমাদ গুনছেন অন্য জায়গায়। তাঁদের এক জনের কথায়, ‘‘যে চার জায়গায় বিশেষ যন্ত্র বসানো হয়েছে, সেখানে তো ইঁদুর যাচ্ছে না। কিন্তু এর ফল হয়েছে উল্টো। যাঁরা সাধারণ কর্মী, তাঁদের পায়ের নীচে বিপজ্জনক ভাবে তারা ঘোরাফেরা করছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement