WB Health Department

বেসরকারি প্র্যাকটিস সরকারি হাসপাতালের সুপারের, ‘ধামাচাপা’ তদন্ত-রিপোর্ট

রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের বেশ কয়েকটি পদের পাশাপাশি এমএসভিপি পদটিও সম্পূর্ণ ভাবে ‘নন-প্র্যাকটিসিং’। অর্থাৎ, ওই পদে থেকে কোনও ভাবেই বেসরকারি জায়গায় রোগী দেখা যায় না।

Advertisement

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৪:৪৭
Share:

—প্রতীকী চিত্র।

কলকাতার একটি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ‘মেডিক্যাল সুপারিন্টেন্ডেন্ট তথা ভাইস প্রিন্সিপ্যাল’ (এমএসভিপি) পদে থেকেও দীর্ঘ সময় ধরে প্রকাশ্যে সরকারি চাকরির নিয়ম লঙ্ঘন করে এক চিকিৎসক বেসরকারি জায়গায় রোগী দেখছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। আর সব জেনে এবং লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পরেও স্বাস্থ্য দফতর কার্যত দর্শকের ভূমিকা পালন করছে বলে দাবি চিকিৎসক মহলের একাংশের।

Advertisement

অভিযুক্ত চিকিৎসক কলকাতার ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের এমএসভিপি অর্ঘ্য মৈত্র। তিনি স্ত্রী-রোগ বিশেষজ্ঞ। রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের বেশ কয়েকটি পদের পাশাপাশি এমএসভিপি পদটিও সম্পূর্ণ ভাবে ‘নন-প্র্যাকটিসিং।’ অর্থাৎ, ওই পদে থেকে কোনও ভাবেই বেসরকারি জায়গায় রোগী দেখা যায় না। পদের গুরুদায়িত্ব এবং রোগী পরিষেবার প্রতি দায়বদ্ধতার কথা মাথায় রেখেই এই নিয়ম। এর জন্য ‘নন-প্র্যাকটিসিং অ্যালাওয়েন্স’-ও দেওয়া হয়।

অর্ঘ্য মৈত্রের বিরুদ্ধে সেই নিয়ম ভেঙে হাওড়ায় নিজের নার্সিংহোমে এবং আরও চার-পাঁচটি বেসরকারি জায়গায় রোগী দেখার অভিযোগ উঠেছে। গত সেপ্টেম্বরে ন্যাশনালের টিএমসিপি ইউনিটের তরফে এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য দফতরে স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তার কাছে এবং মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে তথ্যপ্রমাণ-সহ লিখিত অভিযোগ জানানো হয়। তখন হাসপাতালের অধ্যক্ষের নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি গড়া হয় এবং তারা রিপোর্টও জমা দেয়। কিন্তু তার পরে সেই রিপোর্ট ধামাচাপা পড়েছে বলে অভিযোগ।

Advertisement

আরও অভিযোগ, তদন্ত কমিটি তৈরি হলেও বেসরকারি জায়গায় রোগী দেখা বন্ধ করেননি অর্ঘ্য মৈত্র। এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘আমার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সব জানেন। ওঁদের জিজ্ঞাসা করুন। অনেকের রোগী আমি প্রাইভেটে দেখে দিই। এখন তাঁরা আমার পিছনে লাগলে কিছু বলার নেই। যদি কর্তৃপক্ষ আমাকে কিছু বলেন তা হলে চাকরি ছেড়ে দিতে পারি।’’

রোগী সেজে অর্ঘ্য মৈত্রের অ্যাপয়েন্টমেন্ট চেয়ে সোমবার সকালে ফোন করা হয়েছিল তাঁর হাওড়ার নার্সিংহোমে। জানানো হয়, প্রতিদিন বিকেলে সাড়ে ৪টে থেকে রাত পর্যন্ত তিনি রোগী দেখেন। ফি ৪০০ টাকা। এর পরে পার্ক স্ট্রিট অঞ্চলে মা ও শিশুদের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ফোন করে জানা যায়, সেখানে তখন তিনি রোগী দেখছেন। জানা যায়, প্রতি সোমবার বেলা ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত অর্ঘ্য মৈত্র সেখানে রোগী দেখেন। ফি ১০০০ টাকা। এর পরে ফোন করা হয় হাওড়ার সাঁতরাগাছির একটি ওষুধের দোকানে। তারা জানায়, প্রতিদিনই সেখানে রোগী দেখেন ‘স্যর’। তবে সময়টা সকালে ফোন করে জেনে নিতে হবে। ফি ৫০০ টাকা। সাঁতরাগাছিরই আর একটি বেসরকারি নার্সিংহোম থেকে জানানো হয়, সেখানেও আগে থেকে ‘অ্যাপয়েন্টমেন্ট’-এর ভিত্তিতে অর্ঘ্য মৈত্র রোগী দেখেন। ফি ৬০০ টাকা।

প্রশ্ন উঠছে, এ হেন ‘ব্যস্ত’ এমএসভিপি তা হলে ন্যাশনাল মেডিক্যালের মতো গুরুত্বপূর্ণ হাসপাতালের কাজকর্ম কখন সামলান? রোগী পরিষেবায় নজরদারিই বা করেন কী করে? না কি, তাঁর বকলমে হাসপাতালে দায়িত্বহীন ক্ষমতা নিয়ে বসে রয়েছেন কিছু মেজো বা ছোট কর্তা? উত্তর মেলেনি।

অতীতেও বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে কিছু চিকিৎসকের বিরুদ্ধে একই রকম অভিযোগ উঠেছিল। তা প্রমাণিত হওয়ার পরে তাঁরা শাস্তি পেয়েছেন, প্র্যাকটিসও বন্ধ করেছেন। তবে এ ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য দফতর নির্বিকার বলে অভিযোগ। একাধিক কর্তা এমনও যুক্তি দিচ্ছেন যে, এমনিতেই হাসপাতালে প্রশাসনিক দায়িত্ব সামলানোর লোক পাওয়া যায় না। কেউ রাজি হন না। বেসরকারি ক্ষেত্রে রোগী দেখার উপরে কড়াকড়ি করলে আর প্রশাসক-চিকিৎসক মিলবে না বলে দাবি তাঁদের।

অর্ঘ্য মৈত্রের প্রসঙ্গে রাজ্যের কার্যনির্বাহী স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা অনিরুদ্ধ নিয়োগী বলেন, ‘‘দেবাশিস ভট্টাচার্য স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা থাকাকালীন এই সংক্রান্ত তদন্ত রিপোর্ট সচিবের কাছে জমা পড়েছিল বলে শুনেছিলাম। তার পর কী হল, কিছুই জানি না। খোঁজ নিতে হবে।’’ অবসরপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা দেবাশিস ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘কোনও এমএসভিপি প্রাইভেট প্র্যাকটিস করতে পারেন না। ন্যাশনাল তখন যে তদন্ত রিপোর্ট পাঠিয়েছিল, তাতে অনেক ত্রুটি ছিল। সেটা ফেরত পাঠিয়ে আবার রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছিল। ৩০ সেপ্টেম্বর আমি অবসর নিয়েছি। রিপোর্টের কী হয়েছে, বলতে পারব না।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement