কলেজের ওয়াটার চার্জ ৩০০ টাকা!

কলেজের প্রাক্তন ছাত্র পিন্টু জানা জানান, ২০১৪ সালে কলেজ কর্তৃপক্ষ ‘ওয়াটার চার্জ’ বাবদ পড়ুয়াদের থেকে নিতেন বছরে ২৪ টাকা।

Advertisement

জয়তী রাহা

শেষ আপডেট: ২৩ অক্টোবর ২০১৭ ০১:২২
Share:

বিদ্যানগর কলেজে ওয়াটার চার্জের এমন বিল (ইনসেটে) ঘিরেই দেখা দিয়েছে অসন্তোষ। নিজস্ব চিত্র

ছিল বছরে ২৪ টাকা। বেড়ে হয়েছে ৩০০। কোনও পুরসভা নয়, দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিষ্ণুপুর দু’নম্বর ব্লকের বিদ্যানগর কলেজ ‘ওয়াটার চার্জ’ খাতে এই টাকা নিচ্ছে পড়ুয়াদের থেকে। কলেজটিতে পড়ুয়া তিন হাজার। হিসেব বলছে, শুধু ‘ওয়াটার চার্জ’ বাবদই কলেজের খাতে জমা পড়ার কথা ৯ লক্ষ টাকা। কিন্তু কোনও কলেজ এ ভাবে ‘ওয়াটার চার্জ’ নিতে পারে কি না, তা নিয়ে অসন্তোষও দেখা দিয়েছে পড়ুয়াদের মধ্যে।

Advertisement

এক ধাক্কায় ‘ওয়াটার চার্জ’ এতটা বাড়ায় মাথায় হাত পড়ুয়াদের। পুজোর আগে বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পরেই অধ্যক্ষকে ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখান তাঁরা। পড়ুয়াদের দাবি, অধ্যক্ষ কোনও সহযোগিতার আশ্বাস তো দেননি, উপরন্তু পরের দিন থেকে কলেজে পুজোর ছুটি ঘোষণা করে দেওয়ায় এই নিয়ে কোনও পদক্ষেপও করা যায়নি। তৃতীয় বর্ষের এক পড়ুয়া জানাচ্ছেন, কলেজ খুললেই তাঁরা প্রশাসনিক স্তরে বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ জানাবেন।

এ ভাবে কি কোনও কলেজ ‘ওয়াটার চার্জ’ বাবদ পড়ুয়াদের থেকে টাকা নিতে পারে? শেঠ আনন্দরাম জয়পুরিয়া কলেজের বাণিজ্যের শিক্ষক অনিল সাহা বলেন, ‘‘এমন কথা প্রথম শুনছি! এখানে পড়ুয়াদের থেকে ‘ওয়াটার চার্জ’ নেওয়া হয় না। সাত-আট বছর আগে শহর এবং শহরতলির কলেজগুলির ফি নিয়ে একটি সমীক্ষা করেছিলাম। তখনও শুনিনি, কোনও কলেজে ‘ওয়াটার চার্জ’ নেওয়া হয়।’’ শিক্ষা অধিকর্তা জয়শ্রী রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘এখনও অভিযোগ জমা পড়েনি। অভিযোগ এলে ইন্টিগ্রেটেড ল’ সেলে পাঠানো হবে। তবে বিষয়টি নজরে রাখা হবে।’’

Advertisement

কলেজের প্রাক্তন ছাত্র পিন্টু জানা জানান, ২০১৪ সালে কলেজ কর্তৃপক্ষ ‘ওয়াটার চার্জ’ বাবদ পড়ুয়াদের থেকে নিতেন বছরে ২৪ টাকা। তখন মোট ফি ভেঙে দেখানো হতো। পিন্টুর অভিযোগ, পরের বছর থেকে মোট ফি ভেঙে দেখানো বন্ধ হয়ে যায়। ফলে কোন খাতে কত টাকা নেওয়া হচ্ছে, তা স্পষ্ট নয় পড়ুয়াদের কাছে। এই নিয়ে পড়ুয়ারা বেশ কয়েক বার অভিযোগ জানিয়েছিলেন কর্তৃপক্ষের কাছে। কিন্তু সুরাহা হয়নি।

‘ওয়াটার চার্জ’-এর বিষয়টি প্রথম সামনে আসে চলতি বছরে তৃতীয় বর্ষের প্রভিশনাল অ্যাডমিশনের সময়ে। প্রযুক্তিগত কারণে ভর্তি অনলাইনে না হওয়ায় পড়ুয়াদের হাতে আসে একটি রসিদ। পড়ুয়াদের বক্তব্য, তাতেই লেখা ছিল, চলতি বছরের জুলাই থেকে অক্টোবর— এই চার মাসের ‘ওয়াটার চার্জ’ ১০০ টাকা।

প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের কলেজ হিসেবে পরিচিত বিদ্যানগর কলেজ। ছয়ের দশকের প্রায় শেষ পর্যন্ত এখানেই শিক্ষকতা করেছেন তিনি। কলেজের বর্তমান অধ্যক্ষ সূর্যপ্রকাশ অগ্রবাল প্রথমে ‘ওয়াটার চার্জ’-এর কথা মানতে চাননি। রসিদে টাকার অঙ্ক লেখা রয়েছে শুনে তিনি বলেন, ‘‘কলেজে জল পরিশোধনের যন্ত্র ১৪টি। ঠান্ডা এবং পরিস্রুত জলের যন্ত্র একটি। রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বছরে যন্ত্রপিছু খরচ ১৮০০ টাকা। ভাল পরিষেবা পেতে হলে তো ভাল দাম দিতে হবে! এ সব খরচ তো তাই পড়ুয়াদের থেকেই তুলতে হবে।’’

তাই বলে ‘ওয়াটার চার্জ’ বাবদ বছরে ৯ লক্ষ টাকা! এ বার সূর্যবাবুর বক্তব্য, ‘‘ওটা ‘ওয়াটার চার্জ’ বলে দেখানো হয়েছে। কিন্তু ওর মধ্যে অন্য খাতের খরচও ঢোকানো থাকতে পারে।’’ যা শুনে বিস্মিত অনিলবাবুর বক্তব্য, জল পরিশোধনের যন্ত্র এবং ঠান্ডা, পরিস্রুত জলের যন্ত্র তো অনেক কলেজের মতো জয়পুরিয়াতেও আছে। তবু এমন চার্জ নেওয়া হয় না।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement