তমলুকে তাম্রলিপ্ত সরকার প্রতিষ্ঠাকে স্মরণে রেখে কর্মসূচি রাজ্যের। নিজস্ব চিত্র।
স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্তিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ডাকা ভার্চুয়াল প্রস্তুতি বৈঠকে থাকছেন না মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবারের বৈঠকে তিনি হাজির ছিলেন। কিন্তু শ্রোতার ভূমিকায়। ভারতের স্বাধীনতার ৭৫ বছর উদ্যাপন নিয়ে আয়োজিত আলোচনাচক্রে বাংলার মুখ্যমন্ত্রীকে কেবল শ্রোতার ভূমিকায় দেখে অবাক হয়েছিলেন অনেকে। বৃহস্পতিবার নবান্ন সভাঘরে বিদ্বজ্জন ও প্রশাসনিক আধিকারিকদের নিয়ে বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী জানালেন, তিনি প্রধানমন্ত্রীর ডাকে আগামী বৈঠকে হাজির থাকছেন না। বললেন, ‘‘আমার সঙ্গে অত রাজনীতি করা উচিত নয়।’’
বৃহস্পতিবার রাজ্যের ব্যবস্থাপনায় নবান্ন সভাঘরে বসেছিল স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে বৈঠক। সেখানে জয় গোস্বামী, সুরঞ্জন দাস, নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ি, অজয় চক্রবর্তী, সুবোধ সরকারের মতো বিদ্বজ্জনেদের পাশাপাশি হাজির ছিলেন ব্রাত্য বসু, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য প্রমুখরা। আলোচনা হয় ৭৫ বছর পূর্তি উদ্যাপনের বিভিন্ন দিক নিয়ে। বিদ্বজ্জনেদের বিভিন্ন প্রস্তাব গ্রহণ করে সরকার। মুখ্যমন্ত্রী জানান, মহাত্মা গাঁধীর নামে তমলুকে বিশ্ববিদ্যালয়, স্বাধীনতা আন্দোলন সংক্রান্ত সমস্ত নথির ডিজিটাইজেশন করা হবে। পাশাপাশি তমলুকে তাম্রলিপ্ত সরকার প্রতিষ্ঠাকে মনে রেখেও কর্মসূচি নেবে রাজ্য। মমতার দাবি, রাজ্যের কাছে নেতাজি সংক্রান্ত যত নথি আছে, তার সবই ইতিমধ্যে প্রকাশ করে দিয়েছে তাঁর সরকার।
এই প্রসঙ্গেই ওঠে বুধবারের কেন্দ্রের ডাকা বৈঠকের প্রসঙ্গ। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘ভারত সরকার যা করছে করুক, তাতে আমাদের কোনও আপত্তি নেই। আমরা আমাদের মতো করব। ঋষি অরবিন্দের জন্য ওই একই কমিটি। আমাদের কমিটির বৈঠক হয়ে গিয়েছে। সব সিদ্ধান্তই নিয়ে নেওয়া হয়েছে। আমার নতুন করে বলার কিছু নেই। কালকে বলতে দিলে আমি বলতাম। কিন্তু আগামিকাল যে বৈঠকটি আছে, সেটা শুধু একজনের উপরে। যেটা নিয়ে আমরা ইতিমধ্যেই আলোচনা সেরে ফেলেছি। সুতরাং আগামিকাল আমি থাকছি না। প্রতিদিন হয় না।’’ এর পরই মুখ্যমন্ত্রী মুখ্যসচিবকে নির্দেশ দেন, ঋষি অরবিন্দকে নিয়ে রাজ্য সরকার কী কী করতে উদ্যোগী হয়েছে, তার বিস্তারিত বিবরণ দিল্লি পাঠাতে। শেষে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘আমার সঙ্গে অত রাজনীতি করা উচিত নয়।’’
প্রধানমন্ত্রীর ডাকা বৈঠকে বাংলার মুখ্যমন্ত্রীকে নিছক দর্শক করে রাখার প্রতিবাদে সরব হন নবান্নের বৈঠকে উপস্থিত বিদ্বজ্জনেরাও। কবি জয় গোস্বামী বলেন, ‘‘আমাদের মুখ্যমন্ত্রীর প্রতি প্রধানমন্ত্রীর মনোভাব প্রথম স্পষ্ট হয়েছিল ভিক্টোরিয়ার অনুষ্ঠানে। ওঁর এই ব্যবহারে বিস্মিত হওয়ার কিছু নেই। তাই মুখ্যমন্ত্রীর প্রতি তাঁর মনোভাবকে নিন্দা, ধিক্কার ও উপেক্ষা করব।’’
বুধবার প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে ভার্চুয়াল প্রস্তুতি বৈঠকে বক্তাদের মধ্যে ছিলেন যোগী আদিত্যনাথ, অশোক গহলৌত, জগম্মোহন রেড্ডি, এইচ ডি দেবগৌড়া, শরদ পওয়ার, অমরেন্দ্র সিংহ, লতা মঙ্গেশকর-সহ আরও অনেকে। স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে তৈরি প্রস্তুতি কমিটির অন্যতম সদস্য বাংলার মুখ্যমন্ত্রীও। কিন্তু বুধবার বলার সুযোগ পাননি তিনি। বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রী জানালেন, আগামী প্রস্তুতি বৈঠকে তিনি থাকবেন না।