আলোকিত সরণি। রবিবার, মধ্য কলকাতায়। ছবি: সুমন বল্লভ।
সূর্য ডুবতেই ঝলমলিয়ে উঠল দেওয়ালির শহর।
মাটির প্রদীপ, টুনির আলোয় মোড়া কলকাতা আতসবাজিতে উজ্জ্বল হয়ে উঠেছিল শনিবার, কালীপুজোর রাতেই। দেওয়ালির সন্ধে থেকে আলোর ঝর্নায় মহানগরী যেন মায়া-নগরী।
বহুতলের ছাদ, কিংবা বাড়ির সামনের রাস্তা— অন্ধকার নামতে না নামতেই বাজির হাট। সৌজন্য আট থেকে আশি, সকলেই।
সল্টলেকের অমল সেন ও ছন্দা সেনের আনন্দ এ বার দ্বিগুণ। ছেলে পড়াশোনা করেন দিল্লিতে। মেয়েও বিয়ের পরে বেঙ্গালুরু প্রবাসী। দীপাবলির ছুটিতে মেয়ে-জামাই, ছেলে সদলবলে হাজির। বছরভরের একলা থাকা, আঁধার বাড়ি রবিবার সন্ধ্যায় আতসবাজির রোশনাইয়েই ভ্যানিশ!
পাঁচ বছর পরে দীপাবলির রাতে বাবাকে পাশে পেয়েছে ভবানীপুরের ঋত্বিক রায়। বাবা নৌবাহিনীর পদস্থ অফিসার। প্রতি বছর তাঁর বাড়ি ফেরা হয় না। বহু বছর পরে উৎসবে বাড়িতে এসেছেন। বিকেল থেকেই উদ্যাপনে নেমে পড়েছে রায় পরিবার। ‘‘এ বার অনেক চরকি জ্বালাব। লাল রঙের ফানুসও ওড়াব। বাবা স্পেশ্যাল তুবড়িও এনেছে!’’ উচ্ছ্বাসে মাতোয়ারা ক্লাস সেভেনের ছেলে।
বাড়িতে বাড়িতে বাজি ফাটানোই শুধু নয়। বেশ কয়েকটি পুজোর উদ্যোক্তারাও বাজির উৎসবের আয়োজন করেছিলেন। শহরের বেশ কয়েকটি আবাসনে এ বার চলেছে আতসবাজির প্রতিযোগিতাও। উত্তর ভারতে এই দিনটায় সুখ-সমৃদ্ধির আশায় ধনলক্ষ্মীর পুজো করেন অসংখ্য মানুয। সেই প্রথা মেনে এ শহরেও বহু জায়গায় লক্ষ্মী-গণেশের পুজো হয়ে থাকে। মধ্য কলকাতার অনেক দোকানেই এ বারও সকাল থেকেই পুজো হয়েছে। বেন্টিঙ্ক স্ট্রিটে অজিত দেশাইয়ের গাড়ির সরঞ্জামের দোকানে সেই আয়োজনে মেতে উঠেছিল পরিবার। পুজোও করেছেন গৃহকর্তাই। মেয়ে নয়না বললেন, ‘‘বছরের এই দিনটা এক্কেবারে অন্য রকম। সকালে বাড়ির পুজো, রাতে বন্ধুদের সঙ্গে বাজির উৎসব— এমন দিনভর হুল্লোড়ের সুযোগ সারা বছরে কি আর রোজ রোজ মেলে!’’
বাঙালির উদ্যাপনে কবেই জুড়ে গিয়েছে উত্তর ভারতীয় রঙ্গোলি বা মিষ্টিমুখের রেওয়াজও। সেই সঙ্গেই এ বার কালীপুজোর রাত থেকেই আকাশ ঢেকেছে লাল-নীল-কমলা-সবুজ নানা রঙের ফানুসে। রবিবারও সন্ধে হতে না হতেই সল্টলেক,রাজারহাট-নিউটাউন থেকে বালিগঞ্জ, সাদার্ন অ্যাভিনিউ— আলোয় মোড়া ফানুসে ছয়লাপ! পিছিয়ে নেই উত্তর কলকাতাও। হাতিবাগান থেকে টালা, আতসবাজির ঝলকানিতে নিমেষে ফিকে অমাবস্যার আঁধার।
রোশনাইয়ে মোড়া শহরের বাতাস অবশ্য ভারী পোড়া বারুদের গন্ধে। শ্বাসকষ্টেও ভুগেছেন অনেকেই। গভীর রাত অবধি আকাশ ছিল ধোঁয়ার চাদরে ঢাকা। তবে শহরের বেশ কিছু এলাকায় উৎসবের ছন্দ কেটেছে বিকট শব্দের তীব্রতায়, পুলিশি সক্রিয়তা সত্ত্বেও।