হস্তীদর্শন: চিড়িয়াখানায় সকাল থেকেই উপচে পড়ল ভিড়। শনিবার। ছবি: সুমন বল্লভ।
শুক্রবার বিকেল থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছিল উৎসবের কাউন্টডাউন। আর শনিবার সকাল থেকেই পুরোদস্তুর উদ্যাপনের মেজাজে পথে বেরিয়ে পড়ল শহর। চিড়িয়াখানা থেকে ভিক্টোরিয়া, ময়দান থেকে ইকো পার্ক— জনজোয়ার আছ়ড়ে পড়ল সর্বত্রই। সপ্তাহান্তে এমন ভিড় যে হতে পারে, তা আঁচ করে পুলিশ আগে থেকেই প্রস্তুত ছিল। তবু যানজট আর তার জেরে ভোগান্তি এড়ানো যায়নি পুরোপুরি। ট্র্যাফিক পুলিশ জানিয়েছে, চিড়িয়াখানার ভিড় সামলাতে এ দিন অন্য দিনের চেয়ে বেশি ট্র্যাফিক পুলিশকর্মীকে নামানো হয়েছিল।
বড়দিনের ছুটি পড়ার আগে এ দিন জেলা থেকে একাধিক স্কুলের শিক্ষকেরা পড়ুয়াদের নিয়ে এসেছিলেন শহর দেখাতে। তাঁদের অধিকাংশেরই গন্তব্য ছিল চিড়িয়াখানা আর ভিক্টোরিয়া। চিড়িয়াখানায় গিয়ে দেখা যায়, অনেকেই সেখানে পৌঁছে গিয়েছেন পিকনিকের সরঞ্জাম নিয়ে। অধিকর্তা আশিসকুমার সামন্ত জানান, এ দিন চিড়িয়াখানায় দর্শকের সংখ্যা চল্লিশ হাজার ছাড়িয়ে গিয়েছে।
এ দিন সকাল থেকেই চিড়িয়াখানা চত্বরে থিকথিক করছিল গাড়ি। বেলা বাড়তে পার্কিং নিয়ে সমস্যায় পড়েন অনেকে। বাঘ-সিংহ-হাতি দেখার পরে কচিকাঁচাদের হাত ধরে মানুষ যখন মূল ফটক দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছেন, তখন সেই ভিড় সামলাতে হিমশিম খান নিরাপত্তাকর্মীরা। চিড়িয়াখানার সামনে বাস কিংবা ট্যাক্সির দাঁড়ানো নিষেধ। কিন্তু তাতে কী! নিয়মকে বুড়ো আঙুল দেখিয়েই সেখানে যত্রতত্র দাঁড়িয়ে পড়েছে গাড়ি।
পুলিশ জানায়, চি়ড়িয়াখানায় মাত্রাছাড়া ভিড়ের প্রভাব পড়ে লাগোয়া কয়েকটি রাস্তাতেও। বেলভেডিয়ার রোড, ন্যাশনাল লাইব্রেরি অ্যাভিনিউ, আলিপুর রোড, এমনকী ডায়মন্ড হারবার রোডেও গাড়ি এগিয়েছে শম্বুক গতিতে। একই চিত্র দেখা গিয়েছে হসপিটাল রোড, এ জে সি বসু রোড এবং এ জে সি বসু রোড উড়ালপুলেও।
এ দিন সকাল থেকে হাওড়া স্টেশনমুখী বিভিন্ন রাস্তাতেও যান চলাচলের গতি ছিল খুবই শ্লথ। ট্র্যাফিক পুলিশের কর্তারা জানান, হাওড়া স্টেশনের দিকে এ দিন অন্য দিনের তুলনায় অনেক বেশি গাড়ি গিয়েছে। কারণ, শীতের দুপুরে অনেকেই শহরের বাইরে বেড়াতে গিয়েছিলেন। হাওড়ামুখী বিভিন্ন রাস্তায় যানজটের প্রভাব গিয়ে পড়ে মধ্য ও উত্তর কলকাতার বিভিন্ন রাস্তায়। ট্র্যাফিক পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, চিড়িয়াখানায় ভিড়ের পাশাপাশি এ দিন ভবানী ভবনের কাছে উত্তীর্ণ-তে একটি অনুষ্ঠান থাকায় শম্ভুনাথ পণ্ডিত স্ট্রিট এবং ডি এল খান রোডে যান চলাচল ব্যাহত হয়।
পায়ে-পায়ে: ভিড়ের মাঝে। ধর্মতলায়। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য।
বিকেলের পরে চিড়িয়াখানার ভিড় কমলেও যানজটে নাকাল হওয়া থেকে শহরবাসী নিস্তার পায়নি। বিকেলে মেয়ো রোড থেকে অ্যালেন পার্ক পর্যন্ত গানমেলার মিছিলের জন্য ধর্মতলা ও তার লাগোয়া চত্বরে যান চলাচল ব্যাহত হয়। তা ছাড়া, কালীকৃষ্ণ ঠাকুর স্ট্রিট থেকে কলাকার স্ট্রিট পর্যন্ত একটি ধর্মীয় মিছিল বেরোয়। তার জেরে কিছু ক্ষণের জন্য পোস্তা ও ব়ড়বাজার এলাকায় যান চলাচল থমকে যায়।
এ দিন সন্ধ্যায় বড়দিনের কেনাকাটার জন্য নিউ মার্কেট ও পার্ক স্ট্রিট এলাকায় বাড়তি লোক সমাগম হয়। সেই কারণে ধর্মতলা ও মধ্য কলকাতার কয়েকটি রাস্তায় যান চলাচল স্বাভাবিক হতে রাত হয়ে যায়।