অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে এখানেই চলে লঙ্কা পেষাই। উল্টোডাঙা এলাকায়। নিজস্ব চিত্র
লঙ্কার ঝাঁঝে অতিষ্ঠ পাড়া!
হাঁচি-কাশি লেগেই থাকছে বারো মাস। এমনই অবস্থা যে, এলাকা ছেড়ে অন্যত্র যাওয়ার কথাও ভাবছেন উল্টোডাঙার দাশনগরের বাসিন্দাদের কেউ কেউ। তাঁদের অভিযোগ, রাতদিন লোকালয়ের মধ্যেই লঙ্কা পেষাই করা হয় কলকাতা পুরসভার ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের কৃত্তিবাস মুখার্জি রোডের কয়েকটি গুদামে। সেই ঝাঁঝে বাড়িতে থাকাই দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে তাঁদের। কাউকে বলেও কাজ হয়নি। তাই পাড়া ছা়ড়ার কথা ভাবছেন অনেকে।
গত ৪ এপ্রিল আগুন লাগে ১৫ নম্বর কৃত্তিবাস মুখার্জি রোডের লঙ্কার একটি গুদামে। লঙ্কার ঝাঁঝে অসুস্থ হয়ে পড়েন কয়েক জন স্থানীয় বাসিন্দা। এমনকি হাসপাতালেও ভর্তি করাতে হয় কয়েক জনকে। সেই সময়ে গুদামের অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ এবং অগ্নিনির্বাপণ বিধি না মানা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। স্থানীয়দের অভিযোগ, সেই অগ্নিকাণ্ডের পরেও হুঁশ ফেরেনি। এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, ‘‘আগুন লাগার পরে রাস্তা ঘেরাও করে প্রতিবাদ করেছিলাম। কাউন্সিলরকে বলেছিলাম, বসতি এলাকায় কী ভাবে লঙ্কা পেষাই হয়! কিন্তু তাতেও কোনও কাজ হয়নি।’’
এলাকার বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, ‘‘শুধু ঝাঁঝ! অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে এখানে লঙ্কা পেষাই করা হয়। মেঝেতে ময়লার মধ্যেই দিনের পর দিন ফেলে রাখা হয় লঙ্কার গুঁড়ো। সেখান থেকেই প্যাকেটে ভরে সে সব পৌঁছে যায় শহরের বাজারে।’’
আরও পড়ুন: অন্তঃসত্ত্বাকে ‘যৌন হেনস্থা’
এক দুপুরে গিয়ে দেখা গেল, বাতাসে ছড়িয়ে পড়া লঙ্কার ঝাঁঝ এড়াতে মুখে কাপড় চেপে যাতায়াত করছেন বাসিন্দারা। জানা গেল, ওই ঠিকানায় মোট চারটি লঙ্কা পেষাইয়ের কারখানা রয়েছে। লাগোয়া গুদামঘরগুলি অপরিচ্ছন্ন বললেও কম বলা হয়। এক পাশে স্তূপ করে রাখা লঙ্কার বস্তা। সামনে পেষাইয়ের যন্ত্র। তা থেকে বেরোনো লঙ্কার গুঁড়ো মাটিতেই সরাসরি ফেলে রাখা রয়েছে। অন্য গুদামে ঢুকে দেখা গেল, মাটিতে পড়ে আছে মরা ইঁদুর। তার পাশেই রাখা লঙ্কার গুঁড়ো।
স্থানীয়দের আরও অভিযোগ, এখানে লঙ্কার গুঁড়োয় কৃত্রিম রং ব্যবহার করা হয়। এমনকি ইটের গুঁড়ো মেশানোরও অভিযোগ রয়েছে। গুদাম মালিকদের কেউ কেউ এই অভিযোগ মেনে নিয়েছেন।
একটি গুদামের মালিক অনুপম শর্মা বলেন, ‘‘জিনিসটা ভাল দেখানোর জন্য কিছু জিনিস মেশাতেই হয়। কখনও কখনও হালকা রং দিই। তবে কোনও পাউডার মেশাই না।’’ যদিও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি তিনি। পুরসভার এক ফুড সেফটি অফিসার বলছেন, ‘‘যে কোনও খোলা জিনিসের প্রতিই আমাদের সন্দেহ থাকে। তা ছাড়া পুরসভা মাঝেমধ্যেই লঙ্কা গুঁড়োর গুদাম থেকে নমুনা সংগ্রহ করে নিয়ে যায়। উল্টোডাঙার গুদামগুলিতে আদৌ কী ব্যবহার করা হচ্ছে, তা খতিয়ে দেখা হবে।’’ স্থানীয় কাউন্সিলর অনিন্দ্যকিশোর রাউতের দাবি, ওই গুদাম সম্পর্কে কিছুই জানেন না তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘এক বার গুদামে আগুন লেগেছিল বলে শুনেছি। এর বেশি কিছু জানি না। অস্বাস্থ্যকর হলে নিশ্চয়ই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’