মর্মান্তিক: মহম্মদ সুভানের মৃত্যুর পরে তার বাবা-মা। শনিবার, এনআরএসে। নিজস্ব চিত্র
ছেলেটা আমার বাঁচার জন্য খুব লড়াই করেছিল। ওকে রাখতে পারলাম না। ২৪ মার্চ সন্ধ্যা সাতটা নাগাদ লেক টাউটনের দক্ষিণদাঁড়ির বাড়িতেই আমার স্ত্রী নার্গিস বিবি ওকে জন্ম দেয়। গর্ভবতী থাকাকালীন আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্ত্রীকে দেখাচ্ছিলাম। জন্মের পাঁচ দিনের মাথায় দেখি, ছেলের পেট অস্বাভাবিক ভাবে ফুলে রয়েছে। মলত্যাগ করছে না। বেলেঘাটায় বিধানচন্দ্র রায় শিশু হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখান থেকে নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যেতে বলা হয়। এনআরএসের শিশু বিভাগের চিকিৎসকেরা জানান, শনিবার ছেলের অস্ত্রোপচার হবে। রক্তের নমুনা পরীক্ষা করে জানানো হল, ছেলের বম্বে গ্রুপের রক্ত চাই। তা খুব কম পাওয়া যায়। তবে তা যে কত কম, সেটা জোগাড় করতে গিয়ে টের পেলাম। কোথায় যাইনি? শনিবার রাতে প্রবল বৃষ্টির মধ্যে রক্তের খোঁজে মানিকতলা, মেডিক্যাল কলেজ, আর জি কর ব্লাড ব্যাঙ্কে গিয়েছি। কোথাও এক ব্যাগ রক্ত পাইনি।
আমার মামা আসলামের সঙ্গে এক ভাবির পরিচয় ছিল। তিনি এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার দাদার সঙ্গে কথা বলতে বলেন। এক জন দাতার খোঁজ মেলে। রবিবার সন্ধ্যায় তিনি এনআরএসের ব্লাড ব্যাঙ্কে রক্ত দিলে আমরা ওয়ার্ডে দিয়ে আসি। ভেবেছিলাম, ছেলেটা রক্ষা পেল। কিন্তু অস্ত্রোপচারের এক দিন পরে সেলাইয়ের জায়গা ফেটে গেল। মঙ্গলবার চিকিৎসকেরা জানালেন, অবস্থা ভাল নেই। বুধবার ছেলেকে প্লাজমা দেওয়া হয়েছিল। বৃহস্পতিবার আরও এক ব্যাগ প্লাজমা চাওয়া হয়। যিনি প্রথমে রক্ত দিয়েছিলেন, তাঁর রক্ত থেকে সংগৃহীত প্লাজমা তো দেওয়া হয়ে গিয়েছে। আবার দাতার খোঁজে নামা হল। শেষে রাতের দিকে অন্য উপায়ে প্লাজমা জোগাড় হয়।
শুক্রবার রাতে চিকিৎসকেরা জানান, আরও রক্ত লাগবে। এ বার পাথরপ্রতিমার এক দাতাকে শনিবার সকালের মধ্যে আসতে বলা হল। তিনি মেডিক্যাল কলেজেই রক্ত দিতে চেয়েছিলেন। তাই ঠিক হল, এনআরএস রিকুইজিশন ও রক্তের নমুনা রেফার করে মেডিক্যাল কলেজে পাঠাবে। সেখানে রক্ত সংগ্রহের পরে আমাদের দেওয়া হবে। আসলাম মামা সকালে রিকুইজিশন নিয়ে এনআরএসের ব্লাড কাউন্টারে যায়। কিন্তু বলা হল, তখন কিছু হবে না। সাড়ে ৯টায় আসতে হবে। সাড়ে ৯টায় ফের ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছিল। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার দাদারা কাউকে ফোন করলে রেফারের প্রক্রিয়া শুরু হয়। কিন্তু ততক্ষণে ছেলে আমার মারা গিয়েছে।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
চিকিৎসকেরা বলেন, ছেলের সেপসিস হয়ে গিয়েছিল। সকালে রক্ত পেলেও হয়তো বাঁচত না। কিন্তু সইয়ের জন্য আড়াই ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হবে কেন? প্রথম থেকে বাচ্চার জন্য যখন রক্ত চাওয়া হয়েছে, দিতে পারিনি। প্রতি বারই এক দিন করে দেরি হয়েছে। দশ রাত ঘুমোইনি। রক্তের জন্য দৌড়েছি, হাসপাতালে বসে থেকেছি। ছেলেটা আমার সময়ের কাছেই শেষে হেরে গেল!