R G Kar Hospital Incident

সিবিআই তল্লাশির জের, কেন্দ্রীয় বাহিনীতে মুড়েছে আর জি কর চত্বর

চিকিৎসক-ছাত্রীকে ধর্ষণ ও খুনের প্রতিবাদে জুনিয়র চিকিৎসকদের কাজ বন্ধ রেখে টানা আন্দোলনের জেরে এমনিতেই রোগী আসার সংখ্যা কমেছে আর জি করে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৬ অগস্ট ২০২৪ ০৬:৫৮
Share:

জুনিয়র ডাক্তারদের কর্মবিরতির জেরে সুনশান আর জি কর হাসপাতালে এখন শুধুই পুলিশ ও জওয়ানদের টহল।

হাসপাতাল তো নয়, যেন যুদ্ধক্ষেত্র!

Advertisement

আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের প্রবেশপথের এক পাশে দাঁড়িয়ে কেন্দ্রীয় বাহিনীর ছ’জন জওয়ান। তাঁদের কয়েক জনের হাতে স্বয়ংক্রিয় রাইফেল। উল্টো দিকে দাঁড়িয়ে কলকাতা পুলিশের জনা পনেরোর একটি দল। প্রবেশপথ ছেড়ে হাসপাতাল চত্বরে ঢুকলে জায়গায় জায়গায় চোখে পড়ছে জলপাই রঙের পোশাক পরা কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের। কেউ কোনও ভবনের নীচে দাঁড়িয়ে পাহারা দিচ্ছেন, কেউ আবার গাছের নীচে অস্ত্র হাতে দাঁড়িয়ে। মাঝেমধ্যে চোখে পড়ছে ভারী বুটের শব্দ করে জওয়ানদের হাসপাতাল চত্বরে ঘোরার দৃশ্য। খালি চোখে দেখলে বোঝা দায়, এটি শহরের কোনও মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, না কি সেনাবাহিনীর ‘বেস ক্যাম্প’!

চিকিৎসক-ছাত্রীকে ধর্ষণ ও খুনের প্রতিবাদে জুনিয়র চিকিৎসকদের কাজ বন্ধ রেখে টানা আন্দোলনের জেরে এমনিতেই রোগী আসার সংখ্যা কমেছে আর জি করে। জরুরি বিভাগ এবং বহির্বিভাগ খোলা থাকায় খুব প্রয়োজন ছাড়া গত কয়েক দিন ধরে এই হাসপাতালে বিশেষ রোগী আসছেন না। ফলে রোগী এবং তাঁদের পরিজনদের ভিড় আপাতত অনেকটাই কম। রবিবার একে ছুটির দিন, তার উপরে বহির্বিভাগ বন্ধ— সব মিলিয়ে হাসপাতালে হাতে গোনা রোগী ও পরিজনদের আনাগোনাও এ দিন চোখে পড়েনি।

Advertisement

অন্য দিকে, এ দিন সকাল থেকে হাসপাতাল জুড়ে সিবিআই তল্লাশি শুরু হওয়ায় গোটা চত্বর মুড়ে ফেলা হয়েছে আরও কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে। সেই সঙ্গে ছিল কলকাতা পুলিশের কর্মী, র‌্যাফ। ফলে দিনভর আর জি করে অ্যাম্বুল্যান্সের সাইরেনের শব্দের বদলে কানে এসেছে কেন্দ্রীয় বাহিনীর ভারী বুটের আওয়াজ। নিরাপত্তার গণ্ডি পেরিয়ে কেউ একটু এ দিক-ও দিক যেতে গেলেও কড়া প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে। পড়ুয়া থেকে শুরু করে রোগীর আত্মীয়, চিকিৎসক— কেউই প্রশ্নবাণের হাত থেকে রেহাই পাননি। কাউকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে, আবার কাউকে পরিচয়পত্র দেখার পরে তবেই যেতে দেওয়া হয়েছে।

এ দিন সকাল থেকে হাসপাতালের ভিতরে তিনটি দলে ভাগ হয়ে তল্লাশি চালান সিবিআইয়ের তদন্তকারী আধিকারিকেরা। ফলে স্টোর রুম চত্বর থেকে শুরু করে গোটা চত্বরে ছিল কেন্দ্রীয় বাহিনীর কড়া নিরাপত্তা। সংলগ্ন রাস্তাগুলিতেও রাখা হয়েছিল কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের। এ দিন ওই হাসপাতালের প্রসূতি বিভাগে ভর্তি থাকা পরিজনকে দেখতে হাসপাতালে এসেছিলেন আসমিনা খাতুন। তিনি বলেন, ‘‘স্টোর ভবনের পাশে প্রতিদিন আমরা জল আনতে যাই। কিন্তু আজ ও দিকে পুলিশে পুলিশে ছয়লাপ। ভয়ে আর ওমুখো হইনি।’’ এ দিন জরুরি বিভাগে এসে চমকে গিয়েছিলেন উল্টোডাঙার বাসিন্দা এক তরুণী। বললেন, ‘‘প্রথমে হাসপাতালে ঢুকেই ঘাবড়ে গিয়েছিলাম। ভাবলাম, আবার বোধ হয় কোনও ঝামেলা হয়েছে। পরে শুনলাম, সিবিআই এসেছে। হাসপাতাল তো নয়, দেখে যুদ্ধক্ষেত্র মনে হচ্ছে। ভয়েই অর্ধেক রোগ সেরে যাচ্ছে।’’

তবে সিবিআইয়ের তল্লাশি অভিযানের মধ্যেও রোগী-ভোগান্তির ছবিটা একই রয়েছে এ দিন। আর জি করে জরুরি বিভাগে হাতে গোনা যে ক’জন রোগী এসেছেন, তাঁদের চিকিৎসার জন্য পর্যাপ্ত চিকিৎসক ছিলেন না বলে অভিযোগ। বাড়িতে পড়ে গিয়ে হাতে চোট পেয়ে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে এসেছিলেন এক তরুণী। তাঁর হাতে শুধু ব্যান্ডেজ বেঁধে ছেড়ে দেওয়া হয়। ফেরার পথে তরুণী বলেন, ‘‘শুধু বলল, ছুটির দিন তো, এর থেকে বেশি কিছু হবে না। তেমনহলে পরে আবার আসতে। কিন্তু হাসপাতালের যা অবস্থা, কাল এলেও যে একই কথা শোনাবে না, সেই নিশ্চয়তা কোথায়?’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement