পথ-বিধি লঙ্ঘন রোধে সব সিগন্যালেই ক্যামেরা

ঘটনা-১: ছুটি কাটাতে ভিন্‌ রাজ্যে গিয়েছিলেন কসবার এক বাসিন্দা। ফিরে এসে দেখেন, বেহালার রাস্তায় রাতে বেপরোয়া ভাবে গাড়ি চালানোর জন্য কলকাতা ট্রাফিক পুলিশ তাঁকে ৪০০ টাকার জরিমানার নোটিস পাঠিয়েছে। অথচ, তিনি তো সে সময়ে ছিলেন শহরের বাইরে এবং গাড়ি ছিল বাড়ির গ্যারাজে।

Advertisement

সুপ্রিয় তরফদার

শেষ আপডেট: ০৪ জুন ২০১৫ ০০:১৩
Share:

ঘটনা-১: ছুটি কাটাতে ভিন্‌ রাজ্যে গিয়েছিলেন কসবার এক বাসিন্দা। ফিরে এসে দেখেন, বেহালার রাস্তায় রাতে বেপরোয়া ভাবে গাড়ি চালানোর জন্য কলকাতা ট্রাফিক পুলিশ তাঁকে ৪০০ টাকার জরিমানার নোটিস পাঠিয়েছে। অথচ, তিনি তো সে সময়ে ছিলেন শহরের বাইরে এবং গাড়ি ছিল বাড়ির গ্যারাজে।

Advertisement

ঘটনা-২: মাস কয়েক আগে কলকাতা পুলিশের কাছ থেকে নোটিস আসে ক্যান্টনমেন্ট এলাকার এক যুবকের কাছেও। তাতে লেখা, বড়বাজার এলাকায় হেলমেট না পরে মোটরসাইকেল চালানোর জন্য ১০০ টাকা জরিমানা হয়েছে ওই ব্যক্তির। অথচ, তিনি মোটরসাইকেল নিয়ে কখনও এলাকার বাইরে যান না। দূরে কোথাও গেলে গাড়ি ব্যবহার করেন।

কিন্তু গাড়ি বা মোটরসাইকেল ব্যবহার না করা সত্ত্বেও জরিমানার নোটিস এল কী ভাবে? কোনও ভৌতিক কারণ নয়, শহরে এ ধরনের ‘ভুয়ো জরিমানা’ হওয়ার কথা স্বীকার করে নিয়েছেন পুলিশকর্তারা। তাঁরা অবশ্য এ জন্য কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন ট্রাফিক কনস্টেবলদের। তাঁদের বক্তব্য, নিয়ম না মানা কোনও গাড়ির নম্বর লিখে রাখার সময়ে কনস্টেবলরা ভুল করে ফেললেই এমন ঘটে। এ বার এই ভুল শুধরোতেই শহরের সমস্ত ছোট-বড় ট্রাফিক সিগন্যালে সিসিটিভি ক্যামেরা বসানোর কাজ শুরু হয়েছে।

Advertisement

এক ট্রাফিক সার্জেন্ট জানান, ভুয়ো জরিমানার অধিকাংশই হয় সিগন্যাল না মানলে। এ ছাড়া নো-এন্ট্রিতে গাড়ি নিয়ে ঢুকে পড়া, পথচারীকে ধাক্কা মারা বা ভুল ভাবে রাস্তা পরিবর্তন করলেও এ ধরনের জরিমানা হয়। এ সমস্ত ক্ষেত্রেই গাড়িগুলি পুলিশের নাগাল থেকে দ্রুত গতি বাড়িয়ে পালিয়ে যায়। হাতেনাতে ধরা পড়ে না সেগুলি। তাই এই সমস্ত গাড়িকে জরিমানা করতে হলে স্পট থেকেই কোনও কনস্টেবলকে সক্রিয় হতে হয়।

ওই সার্জেন্ট জানান, এ ক্ষেত্রে কনস্টেবলরা তাঁদের কাছে থাকা নোটবুকে গাড়িটির নম্বর লিখে রাখেন। পরে তা দেন ট্রাফিক গার্ডের সার্জেন্টকে। তার ভিত্তিতে কেস এবং তার পরে জরিমানা হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কনস্টেবলরা ওই নম্বর লিখে রাখার সময়ে ভুল করে ফেলেন। যেমন, কেউ হয়তো ‘৫৬৭০’ লেখার বদলে লিখে ফেললেন ‘৫৬০৭’। ফলে ৫৬৭০ নম্বরের গাড়ি আইন ভাঙলেও জরিমানা হয় ৫৬০৭ গাড়ির মালিকের। পুলিশেরই এক কর্তা জানান, একবার পোর্টালে গাড়ির নম্বর উঠে গেলে তা কোনও ভাবেই তুলে নেওয়া যায় না। আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ পান না গাড়ির মালিকেরা।

তবে কী এ ভাবেই চলতে থাকবে?

পুলিশ সূত্রে খবর, কয়েক মাস আগেই কলকাতার পিটিএস-এ (পুলিশ ট্রেনিং স্কুলে) কনস্টেবলদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। আরও বেশি করে সজাগ হতে বলা হয়। কিন্তু তার পরেও তেমন কোনও ফল হয়নি। তাই ট্রাফিক সিগন্যালে সিসিটিভি ক্যামেরা বসানোর সিদ্ধান্ত নেয় পুলিশ।

কলকাতা পুলিশের ডেপুটি কমিশনার (ট্রাফিক) ভি সলোমন নেসাকুমার জানান, কলকাতা শহরে মোট ২৩টি ট্রাফিক গার্ড রয়েছে। তার ছোট-বড় সমস্ত ট্রাফিক সিগন্যালেই এ বার থেকে সিসিটিভি বসানো থাকবে। শহরের মোট ট্রাফিক সিগন্যাল রয়েছে ৪৪০টি। তার মধ্যে ইতিমধ্যেই প্রথম দফায় ৭০০টি ক্যামেরা বসানোর কাজ শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে হাইল্যান্ড পার্ক, রুবি মোড়, পাটুলি, মানিকতলা ও শ্যামবাজার মোড়ে সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। দ্বিতীয় দফায় আরও ক্যামেরা বসানো হবে।

কী ভাবে নজরদারি চালানো হবে?

তিনি জানান, এক একটি ট্রাফিক সিগন্যালে একাধিক রাস্তা রয়েছে। প্রতি রাস্তার দিকেই লাগানো থাকবে ক্যামেরা। ফলে যে কোনও রাস্তায় গাড়ি ট্রাফিক নিয়ম ভাঙলে অনায়াসেই সেটিকে নজরে রাখা যাবে। পাশাপাশি ওই গাড়িটির নম্বরও ধরা পড়বে ক্যামেরায়।

ডিসি ট্রাফিক নেসাকুমার জানান, ওই ফুটেজগুলি সমস্ত ট্রাফিক গার্ডের কেন্দ্রীয় দফতর থেকে মনিটর করা হবে। লালবাজার কন্ট্রোল থেকেও অবশ্য তা মনিটর করা হবে। এ ছাড়া স্পট থেকে কনস্টেবলরাও নজর রাখবেন। ট্রাফিক নিয়ম ভাঙার দায়ে কোনও গাড়ির নম্বর লিখে রাখতে ভুল হলেও সিসিটিভি ফুটেজ থেকে তা সংশোধনও করা যাবে।

যদিও তা সত্ত্বেও বেশ কিছু ক্ষেত্রে সমস্যা রয়েই যাচ্ছে বলে মত ট্রাফিক বিভাগেরই একাংশের। প্রথমত, রাতের অন্ধকারে কী ভাবে সিটিটিভি ক্যামেরায় কোনও গাড়ির নম্বর দেখা যাবে? দ্বিতীয়ত, রাত বারোটার পরে কলকাতা শহরের ট্রাফিক বিভাগের দায়িত্ব চলে আসে কলকাতা পুলিশের সংশ্লিষ্ট থানার উপরে। ট্রাফিক গার্ড বন্ধ থাকে। তখন কারা, কী ভাবে মনিটর করবে?

ডিসি (ট্রাফিক) বলেন, ‘‘রাতেও গাড়ির নম্বর স্পষ্ট দেখতে উন্নত ধরনের ‘নাইট ভিশন’ ক্যামেরা বসানো হচ্ছে।’’ কিন্তু রাত বারোটার পরে থানা কী ভাবে মনিটর করবে? নেসাকুমার বলেন, ‘‘সে ক্ষেত্রে মনিটর করা হবে লালবাজার কন্ট্রোল থেকেই।’’

কিন্তু এক সঙ্গে অতগুলি ফুটেজ এক জায়গা থেকে মনিটর করা যে সম্ভব নয়, তা মানছেন পুলিশকর্তারাও। ফলে রাতের শহরে কি সেই ঢিলেঢালাই হয়ে পড়বে ট্রাফিক ব্যবস্থা? এর অবশ্য কোনও উত্তর মেলেনি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement