টানা দশ দিন সে ঘরবন্দি!
দেখা হয়নি এক জন বন্ধুর সঙ্গেও! খেলার ছলে অন্য দুনিয়ায় হারিয়ে যাওয়ারও উপায় নেই। সারা দিন চার দেওয়ালের মধ্যে থেকে কার্যত হাঁফিয়ে উঠেছে ছোট্ট মানুষটি। তার মধ্যে এক বন্ধু তাকে ফোন করে বলেছে, ‘‘আই মিস ইউ!’’
ব্যস, আর কে তাকে ধরে রাখে! রবিবার থেকেই হাত-পা ছড়িয়ে কেঁদে চলেছে সে। মায়ের গলা ধরে ঝুলে পড়ে তার একটাই দাবি, ‘‘আমি স্কুলে যেতে চাই।’’
দেশপ্রিয় পার্কের কাছে কারমেল প্রাইমারি স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণির যে ছাত্রীকে যৌন নিগ্রহ করা হয়েছে বলে অভিযোগ, সেই ছাত্রীই এখন জেদ ধরেছে, স্কুলে আসতে চায় সে। যে স্কুলে সে যৌন নিগ্রহের শিকার হয়েছে, সেখানে আসতে ভয় না পাওয়ায় খুশি তার পরিবার, এমনকী মনোরোগ চিকিৎসকেরাও। কারণ, এমন কিছু ঘটার পরে সাধারণত আতঙ্ক কাটতেই অনেকটা সময় লেগে যায়। কিন্তু বন্ধুদের ভালবাসার টানে শিশুটি যে ভাবে দ্রুত আতঙ্ক কাটিয়ে উঠেছে, তাতে এ সপ্তাহেই তাকে স্কুলে পাঠাতে চায় তার পরিবার।
সোমবার ওই শিশুর মা জানান, আর এক মুহূর্তও ঘরে থাকতে চাইছে না সে। স্কুলেই যেটুকু নাচগান শেখে। বাড়িতে তো সেটাও বন্ধ। তাই বাড়িতে মন টিকছে না তার। ‘‘স্কুলের উপরে তো আমার কোনও ক্ষোভ নেই। শুধু ওই শিক্ষকের শাস্তি চেয়েছি। এখন তিনি পুলিশি হেফাজতে। বিচার চলছে। তাই আমার মেয়েকে স্কুলে পাঠাতে চাই। মেয়ের আতঙ্ক কেটেছে দেখে খুব ভাল লাগছে।’’
তিনি জানান, তাঁর মেয়ের এক বান্ধবী ফোন করেছিল। ওকে তাড়াতাড়ি স্কুলে যেতে বলেছে সে। তার পর থেকেই মেয়েটি শুধু কাঁদছে। স্কুলে না যাওয়ায় পড়াশোনারও ক্ষতি হচ্ছে। তাই পাঁচ বছর ধরে যে স্কুলে ওই শিশুটি পড়ছে, তাকে সেখানেই ফেরাতে চান ওই মহিলা।
মনোরোগ চিকিৎসক সুজিত সরখেল বলেন, ‘‘আতঙ্ক থেকে শিশুটির বেরিয়ে আসতে পারাটা ইতিবাচক দিক। তবে পরবর্তী সময়ে এটা সকলকেই খেয়াল রাখতে হবে যে, নিগ্রহের বিষয়টি নিয়ে যেন তার সামনে আলোচনা না হয়।’’
তবে সাংবাদিক বৈঠক করে যে ভাবে অভিভাবকদের একাংশ এটিকে ‘সাজানো’ ঘটনা বলে দাবি করেছেন, তা নিয়ে সরব হয়েছেন শিশুটির মা। এ দিন কারমেল স্কুল থেকে কিছুটা দূরে সাংবাদিকদের ডেকে তিনি জানান, বিচারাধীন বিষয়কে এ ভাবে বলা উচিত হয়নি। তিনি বলেন, ‘‘ওঁরা মিথ্যে কথা বলছেন।’’ এ ছাড়া, পুলিশের মাধ্যমে স্কুলের কাছে যে লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে, সেটাও দেখান ওই শিশুটির মা। তবে, যে ভাবে অভিভাবকেরা দু’ভাগ হয়ে গিয়েছেন, তাতে গোটা বিষয়টি নিয়ে গুঞ্জন আরও বেড়েছে। শিশুটির মা বারবারই দাবি করেন, সমস্ত অভিযোগই সত্যি। ঘটনাটিকে যে ভাবে সাজানো বলা হয়েছে, তার বিরোধিতা করেছেন তিনি। তাঁর একরত্তি মেয়েকে যে ভাবে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হয়েছে, তারও নিন্দা করেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘আমার মেয়েকে ভালবেসে কয়েক জন অভিভাবক আমার সঙ্গে গিয়েছিলেন। আমি সুবিচার চাই।’’
অভিভাবকদের অন্য অংশের বক্তব্য, ‘‘বিচারাধীন বিষয়কে সত্যি-মিথ্যে বলা যায় না। শুধু একটাই কথা, অভিযোগের সঙ্গে তথ্য কিছুতেই মিলছে না। ধোঁয়াশা থাকছেই।’’