বেড়ালকে লাথি, ভাইরাল হল ভিডিয়ো

মনোরোগ চিকিৎসক অনিরুদ্ধ দেব বলছেন, ‘‘যে কোনও প্রাণীর প্রতিই আমরা সাধারণত হিংস্র। 

Advertisement

নীলোৎপল বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ০৮ মে ২০১৯ ০১:১৫
Share:

নিষ্ঠুর: ভিডিয়োয় এ ভাবেই একটি বেড়ালকে (চিহ্নিত) লাথি মারতে দেখা গিয়েছে ওই ব্যক্তিকে।

ফ্ল্যাটের দরজায় দাঁড়িয়ে ফ্ল্যাট-মালিকের সঙ্গে তর্ক চলছে হাতে সোনার চেন, কানে স্টিলের দুল পরা এক ব্যক্তির। কিছু দূরে ফ্ল্যাটের সিঁড়ির সামনে বসে নাক ঘষছে একটি বেড়াল। তর্কের মধ্যেই সোনার চেন পরা ওই ব্যক্তি বললেন, ‘‘নোংরামি করবেন তো! নোংরামি করা দেখাচ্ছি।’’ যাওয়ার পথে এর পরে ওই যুবক সপাটে লাথি মারলেন বেড়ালটিকে! সিঁড়ির দেওয়ালে সজোরে আছাড় খেয়ে মাটিতে পড়ল বেড়ালটি।

Advertisement

মঙ্গলবার এমনই একটি দৃশ্যের ভিডিয়ো সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে (যদিও ভিডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার)। নেটিজেনরা বলছেন, নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ (এনআরএস) হাসপাতালে ১৬টি কুকুরছানার মৃতদেহ উদ্ধারের পরে রাজ্য জুড়ে নিন্দার ঝড় উঠলেও কারওরই হুঁশ ফেরেনি! দোষীর দ্রুত শাস্তির দাবিও করেছেন তাঁরা। এ দিন রাতেই বিষয়টি নিয়ে কসবা থানায় গণ আবেদন জমা দিয়েছে পশুপ্রেমীদের একটি সংগঠন। জিনাত মিত্র নামে একটি প্রাথমিক স্কুলের এক প্রাক্তন শিক্ষিকা ওই ভাইরাল হওয়া ভিডিয়োটি তুলেছিলেন।

জিনাত জানান, কসবার বোসপুকুর এলাকায় স্বামী এবং ছেলের সঙ্গে তিনি থাকেন। পাড়ার বেশ কয়েকটি বেড়াল প্রতিদিন তাঁদের ফ্ল্যাটে খায়। এই বেড়াল খাওয়ানো নিয়েই আবাসনের কয়েক জন বাসিন্দা সমস্যা তৈরি করছেন বলে জিনাতের অভিযোগ। জিনাতদের এ নিয়ে

Advertisement

কয়েক বার শাসানো হয়েছে বলেও অভিযোগ। জিনাত বলেন, ‘‘ভিডিয়োটা ৩০ মার্চ তোলা। সে দিন মিঠু দেব নামে আমাদের আবাসনের চারতলার এক বাসিন্দা ঝগড়া করতে নামেন। আমরা কেন বেড়াল খাওয়াই তা নিয়ে শাসিয়ে যাওয়ার সময়ই বেড়ালটাকে ওই ভাবে লাথি মেরেছেন।’’ বরাতজোরে বেঁচে গিয়েছে বেড়ালটি। জিনাত বলেন, ‘‘বেড়ালটার মাথা ফেটে গিয়েছিল। এক মাস ধরে চিকিৎসার পরে সে এখন অনেকটাই সুস্থ। প্রথম প্রথম কিছু খেতে চাইত না। জড়োসড়ো হয়ে বসে থাকত সর্বক্ষণ!’’

কিন্তু, প্রথমেই অভিযোগ না করে সোশ্যাল মিডিয়ায় এত দিন পরে ভিডিয়ো পোস্ট করা হল কেন? জিনাত বলেন, ‘‘মিঠু রাজনীতি করেন।

ওঁর অনেক প্রভাব। ভয়েই এত দিন কিছু বলিনি। আজ ফের ঝামেলা করেছে। আর থাকতে না পেরে এক পশুপ্রেমী সংগঠনকে ফোনে বিষয়টি জানাই। ওরাই ভিডিয়ো পোস্ট করে থানায় অভিযোগ করতে বলে।’’ মিঠুর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাঁর পাল্টা প্রশ্ন, ‘‘আপনি নেতা, না পুলিশ! কাউকে জবাব দেব না।’’ এর পরে তিনি ফোন কেটে দেন। যোগাযোগ করা হয় জিনাতদের আবাসন

কমিটির সম্পাদক সত্যনারায়ণ যাদবের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘‘বেড়াল মিঠুর গাড়ির সিট ছিঁড়ে দিয়েছে, তাই হয়তো মাথা গরম করে ফেলেছে।’’ এর শাস্তি কি তবে কোনও প্রাণীকে এ ভাবে লাথি মেরে ফেলে দেওয়া? তিিন আর মন্তব্য করতে চাননি।

মনোরোগ চিকিৎসক অনিরুদ্ধ দেব বলছেন, ‘‘যে কোনও প্রাণীর প্রতিই আমরা সাধারণত হিংস্র।

আমরাই মুরগি উল্টো করে ঝুলিয়ে রাস্তা দিয়ে নিয়ে যাই। আবার জ্যান্ত কচ্ছপ কেটে বিক্রি করি।’’ তাঁর মতে, ‘‘কড়া আইন না থাকায় অসহায় প্রাণীগুলোই আমরা সহজে নিশানা করি।’’ মনোরোগ চিকিৎসক জয়রঞ্জন রাম বলছেন, ‘‘বহু ক্ষেত্রেই আইন থেকেও কিছু হয় না। এটা খুনি মানসিকতা।’’ পশুপ্রেমী সংগঠনের তরফে প্রান্তিক চট্টোপাধ্যায় অবশ্য বলছেন, ‘‘কড়া আইন তো চাই-ই। আগে গ্রেফতার করতে হবে ওই ব্যক্তিকে।’’ কসবা থানার পুলিশ আধিকারিক বলেন, ‘‘অভিযোগ খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রয়োজনে ভিডিয়োর ফরেন্সিক পরীক্ষা হবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement