বাঁ দিক থেকে রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস, যাদবপুরের সদ্য অপসারিত অস্থায়ী উপাচার্য বুদ্ধদেব সাউ এবং শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী উপাচার্য বুদ্ধদেব সাউকে অপসারণ করা নিয়ে রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসকে তীব্র আক্রমণ করলেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। শিক্ষামন্ত্রীর অভিযোগ, রাজ্যের উচ্চশিক্ষাকে ধ্বংস করার চেষ্টা করছেন রাজ্যপাল। এমনকি রাজ্যপালের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের অন্তর্বর্তিকালীন নির্দেশ অমান্য করারও অভিযোগ তুলেছেন শিক্ষামন্ত্রী।
বিশ্ববিদ্যালয়ে বার্ষিক সমাবর্তনের ঠিক আগের দিন, শনিবার সন্ধ্যায় যাদবপুরের অস্থায়ী উপাচার্যকে অপসারণ করেন রাজ্যপাল। রাজভবন থেকে উপাচার্যকে জানিয়ে দেওয়া হয়, তাঁকে তাঁর কর্তব্য থেকে অব্যাহতি দেওয়া হল। এর পরেই প্রশ্ন উঠছে, রবিবার কি আদৌ যাদবপুরে হবে সমাবর্তন? তার পরই নিজের এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে রাজ্যপালকে একহাত নেন ব্রাত্য। তিনি লেখেন, “উনি (রাজ্যপাল) বিষদাঁত এবং নখ বার করছেন।”
রাজ্যপালের বিরুদ্ধে ব্রাত্যের অভিযোগ মূলত দু’টি। এক, তিনি নির্বাচিত রাজ্য সরকারের পরামর্শকে ‘উপেক্ষা’ করেছেন। দুই, রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে আপাতত স্থিতাবস্থা বজায় রাখার ব্যাপারে সুপ্রিম কোর্ট যে অন্তর্বর্তী নির্দেশ দিয়েছিল, উপাচার্যকে সরিয়ে দিয়ে তা লঙ্ঘন করেছেন রাজ্যপাল। শনিবারই ছাত্রভোট সংক্রান্ত এক প্রশ্নের উত্তরে রাজ্যপালকে আক্রমণ করে ব্রাত্য বলেছিলেন, “যে ভাবে একটি নির্দিষ্ট বাড়ি থেকে অচলাবস্থা তৈরি করা হচ্ছে, তা স্থিতিশীল অবস্থায় না এলে ছাত্রভোট করানো সম্ভব নয়।” ‘নির্দিষ্ট বাড়ি’ বলতে ব্রাত্য রাজভবনের দিকেই ইঙ্গিত করতে চেয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, যাদবপুরের সমাবর্তন অনুষ্ঠান নিয়ে গত কয়েক দিন ধরেই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে রাজভবনের টানাপড়েন চলছিল। রাজ্যপাল কোর্ট বৈঠকের অনুমতি না দেওয়ায় স্থির হয় যে, ‘পড়ুয়াদের স্বার্থে’ বিশেষ সমাবর্তনের বদলে নির্ধারিত দিন (২৪ ডিসেম্বর)-এই বার্ষিক সমাবর্তন হবে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি অনুযায়ী সমাবর্তনের আগে রবিবার সকালে কোর্ট বৈঠক হবে বলে জানা যায়। তাঁর আপত্তি সত্ত্বেও কোর্ট বৈঠকের সিদ্ধান্ত নেওয়ায় রাজ্যপাল অস্থায়ী উপাচার্যের উপরে চটলেন কি না, তা স্পষ্ট নয়।
রাজভবন সূত্রে অবশ্য আগেই জানা গিয়েছিল, ছাত্রমৃত্যুর ঘটনার পর রাজ্যপালের নির্দেশ ছিল, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করতে হবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে দোষীদের। কিন্তু সেই নির্দেশ এখনও কার্যকর হয়নি। বেকসুর খালাস না পাওয়া পর্যন্ত অভিযুক্তদের শুধু মাত্র বিশ্ববিদ্যালয় এবং হস্টেলে ঢোকার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। আর কোনও পদক্ষেপ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে করা হয়নি। আর সেই কারণেই সমাবর্তন অনুষ্ঠান নিয়ে রাজ্যপাল বোস এখনও কোনও সিদ্ধান্ত জানাননি।