হেডফোন কানে ফের অসতর্কতা, প্রাণ গেল কিশোরের

কানে গোঁজা মোবাইলের হেডফোন। সেই অবস্থায় রাস্তা দিয়ে সাইকেল চালিয়ে যাচ্ছিল এক কিশোর। পিছন থেকে যে একটি গাড়ি ছুটে আসছে, বুঝতে পারেনি সে। প্রাণের বিনিময়ে কানে হোডফোন দিয়ে সাইকেল চালানোর অনিয়মের মাসুল দিতে হল ওই কিশোরকে। ঘটনাটি ঘটেছে রবিবার ভোর সাড়ে পাঁচটা নাগাদ, ঠাকুরপুকুরের জেমস লং সরণিতে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০২:২৬
Share:

পাপ্পু সিংহ

কানে গোঁজা মোবাইলের হেডফোন। সেই অবস্থায় রাস্তা দিয়ে সাইকেল চালিয়ে যাচ্ছিল এক কিশোর। পিছন থেকে যে একটি গাড়ি ছুটে আসছে, বুঝতে পারেনি সে। প্রাণের বিনিময়ে কানে হোডফোন দিয়ে সাইকেল চালানোর অনিয়মের মাসুল দিতে হল ওই কিশোরকে। ঘটনাটি ঘটেছে রবিবার ভোর সাড়ে পাঁচটা নাগাদ, ঠাকুরপুকুরের জেমস লং সরণিতে।

Advertisement

পুলিশ জানিয়েছে, মৃত কিশোরের নাম পাপ্পু সিংহ (১৫)। সে হরিদেবপুরের বাইশবিঘার বাসিন্দা। শীলপাড়ার একটি প্লাস্টিক কারখানায় কাজ করত পাপ্পু। এ দিন কারখানা থেকে সে বাড়ি আসছিল। সে সময়েই ঘটে দুর্ঘটনা। পুলিশ একাধিক বার শহরবাসীকে সতর্ক করলেও মোবাইল কানে রাস্তা পার হওয়া বা হেডফোন গুঁজে রাস্তা দিয়ে যাওয়ার ছবিটা যে এতটুকুু বদলায়নি, এ দিন ঠাকুরপুকুরের দুর্ঘটনাই তার প্রমাণ।

কী ঘটেছিল এ দিন? প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, পাপ্পু মোবাইলে গান শুনতে শুনতে সাইকেল চালাচ্ছিল। সে কারণেই পিছন থেকে যে দ্রুত গতিতে গাড়ি আসছে, সে বুঝতে পারেনি। পুলিশ জানিয়েছে, তীব্র গতিতে গাড়িটি পাপ্পুকে ধাক্কা মেরে তার মাথার উপর দিয়ে চলে যায়। এক পথচারী পাপ্পুর বাড়িতে ফোন করে দুর্ঘটনার খবর দেন। তবে রাত পর্যন্ত ঘাতক গাড়ি এবং চালকের কোনও খোঁজ মেলেনি।

Advertisement

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, পাপ্পুরা সাত ভাই-বোন। বছর তিনেক আগে পাপ্পুর মা রিনা সিংহ স্বামীর অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে সাত ছেলে-মেয়েকে নিয়ে বিহার থেকে কলকাতায় চলে আসেন। তার পর থেকে ঠাকুরপুকুর এলাকার একটি বাড়িতে ভাড়া থাকতেন তাঁরা। রিনাদেবী একটি বাড়িতে আয়ার কাজ করেন। সেই কাজ করে সংসার চালাতে পারছিলেন না তিনি। তাই বড় ছেলে পাপ্পু মাস ছয়েক আগে শীলপাড়ার একটি প্লাস্টিকের কারখানায় কাজে যোগ দেয়।

পাপ্পুর দিদি পূজা জানিয়েছে, কারখানাতেই থাকত পাপ্পু। মাঝেমধ্যে বাড়ি এসে জামাকাপড় নিয়ে যেত। এ দিনও সে জামাকাপড় নেওয়ার জন্য শীলপাড়া থেকে সাইকেল চালিয়ে বাড়ি আসছিল। দুর্ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় পাপ্পুকে উদ্ধার করে। বিদ্যাসাগর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে পাপ্পুর মোবাইল ফোন থেকে নম্বর নিয়ে তার বাড়িতে যোগাযোগ করে পুলিশ।

পূজা জানিয়েছে, এ দিন সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ পাপ্পুর মোবাইল ফোন থেকে তাদের বাড়িতে ফোন আসে। রোজকার মতো তখন রিনাদেবী কাজে যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বেরোচ্ছিলেন। ফোনে এক ব্যক্তি রিনাদেবীর কাছে জানতে চান, পাপ্পু কী রঙের জামা পরে রয়েছে। তার পরেই তিনি রিনাদেবীকে দুর্ঘটনার খবর দেন।

এর আগে গত ২৪ অগস্ট পার্ক সার্কাস এলাকায় মোবাইলে কথা বলতে বলতে মোটরবাইক চালাচ্ছিলেন এক ব্যক্তি। সে সময়ে পিছন থেকে একটি বাস তাঁকে ধাক্কা মারে। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে ওই ব্যক্তিকে মৃত ঘোষণা করা হয়। তারও আগে মার্চ মাসে সল্টলেক ও ডানলপে একই ধরনের দু’টি ঘটনায় মৃত্যু হয় এক যুবক ও এক ছাত্রের। দু’টি ক্ষেত্রেই তাঁদের কানে মোবাইলের হেডফোন গোঁজা ছিল।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement