সাহায্য: ত্রাণ বিলি করছেন বিশ্বজিৎ ঘোষ (বাঁ দিকে)। নিজস্ব চিত্র
দৃষ্টিহীন এই মানুষেরা কেউ ট্রেনে হকারি করেন। কেউ বা স্টেশনে, ট্রেনে গান গেয়ে রোজগার করেন। এই ভাবে যতটুকুই ওঁরা উপার্জন করতেন, করোনার জন্য গত কয়েক মাস ধরে সেটুকুও বন্ধ। এই দৃষ্টিহীন অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়িয়েছেন আর এক দৃষ্টিহীন মানুষ। নরেন্দ্রপুর ব্লাইন্ড বয়েজ় অ্যাকাডেমির অধ্যক্ষ বিশ্বজিৎ ঘোষ ও তাঁর কয়েক জন সঙ্গী। কলকাতা শহরে অসহায় এই সব দৃষ্টিহীন মানুষের কাছে তাঁরা খাবার পৌঁছে দিচ্ছেন গত কয়েক দিন ধরে। বিশ্বজিৎবাবুর কথায়, ‘‘সব সময়ে তো স্কুলের কাজের সঙ্গেই যুক্ত থাকি। এখন লকডাউনে পঠনপাঠন খুব কম হচ্ছে। তাই ভাবলাম স্কুলের চৌহদ্দির বাইরে বেরিয়ে নিজের উদ্যোগে দৃষ্টিহীন মানুষের জন্য কিছু কাজ করি।’’
একটা ছোট মালবাহী গাড়িতে ত্রাণের সামগ্রী নিয়ে বেরিয়ে পড়েন বিশ্বজিৎবাবুরা। সঙ্গে থাকেন ব্লাইন্ড বয়েজ় অ্যাকাডেমির কর্মী দীপঙ্কর সাধু এবং এক সরকারি কর্মী দেবমাল্য অধিকারী। তাঁরা অবশ্য দৃষ্টিহীন নন। তাঁদের সঙ্গে থাকে চাল, ডাল, সয়াবিন, তেল, সাবান ইত্যাদি। বালিগঞ্জ স্টেশন, কসবা, গড়িয়া, তারাতলা, বিমানবন্দর, নিউ ব্যারাকপুর-সহ শহরের বিভিন্ন প্রান্তে দৃষ্টিহীন মানুষদের কাছে ত্রাণ নিয়ে পৌঁছে যান তাঁরা। বিশ্বজিৎবাবুর মতে, করোনা পরিস্থিতিতে এখন অনেক সংগঠনই অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছে, ত্রাণ দিচ্ছে। এই দৃষ্টিহীন মানুষেরাও হয়তো ত্রাণ সামগ্রী পেয়েছেন বিভিন্ন জায়গা থেকে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে, যেখানে ত্রাণ দেওয়া হচ্ছে সেখানে তাঁরা পৌঁছতে পারছেন না। তাই অনেক সময়েই বাদ পড়ে যাচ্ছেন। তাই ওঁদের জন্য আলাদা করে ত্রাণের ব্যবস্থা করছেন তিনি।
সম্প্রতি বিশ্বজিৎবাবুরা ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে পৌঁছে গিয়েছিলেন বিমানবন্দরের এক নম্বর বাসস্ট্যান্ডের কাছে। সেখানে অপেক্ষা করছিলেন ছায়া ঠাকুর এবং অশোক যাদব নামে দুই দৃষ্টিহীন। ছায়া স্টেশনে স্টেশনে গান করেন। অশোক হকারি করেন। ছায়া ও অশোক জানান, এখন লকডাউন শিথিল হলেও তাঁদের উপার্জন খুবই কম। লকডাউন চলার সময়ে যে পরিমাণ ত্রাণ সামগ্রী পাওয়া যাচ্ছিল এখন আর সে ভাবে পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে তাঁদের মতো মানুষদের খুবই অসুবিধা হচ্ছে। ছায়া জানান, ট্রেন বন্ধ বলে তাঁদের উপার্জন প্রায় নেই বললেই চলে। তাঁর স্বামীর পায়ের সমস্যা আছে। তিনিও কার্যত কর্মহীন।
বিমানবন্দর এলাকার এক নম্বর থেকে গেট থেকে বিশ্বজিৎবাবুরা চলে যান নিউ ব্যারাকপুরে। সেখানে একটি নির্দিষ্ট জায়গায় অপেক্ষা করছিলেন কয়েক জন দৃষ্টিহীন। তেমনই এক দৃষ্টিহীন অশোক যাদব ট্রেনে হকারি করেন। তিনি বলেন, ‘‘ব্যারাকপুর স্টেশন চেনা জায়গা। এখন ব্যারাকপুর স্টেশন বন্ধ। আমার মতো দৃষ্টিহীন মানুষদের পক্ষে নতুন নতুন জায়গায় গিয়ে হকারি করা খুব সমস্যার। কবে এই রোগ পুরোপুরি সেরে গিয়ে সব স্বাভাবিক হবে সেই আশায় বসে রয়েছি।’’