বিধাননগর পুরসভা। —ফাইল চিত্র।
হজ পুণ্যার্থীদের শিবিরের সংস্কারের কাজের জন্য দরপত্র ডাকা এবং সেই কাজের বরাত দেওয়া ঘিরে আধিকারিকদের উপরে বেজায় ক্ষুব্ধ বিধাননগর পুর কর্তৃপক্ষ। অভিযোগ, মেয়রের অজানতে দরপত্র ডেকে বিভিন্ন সংস্থাকে কাজের বরাত দিয়েছেন আধিকারিকদের একাংশই। ঘটনা ঘিরে সোমবার পুর কমিশনার-সহ আধিকারিকেরা পুর কর্তৃপক্ষের ভর্ৎসনার মুখে পড়েন বলে খবর। যদিও প্রকাশ্যে কার্যত মুখে কুলুপ এঁটেছে দু’পক্ষই। মেয়র কৃষ্ণা চক্রবর্তীও ঘটনাটি পুরসভার অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে এড়িয়ে গিয়েছেন।
আজ, বৃহস্পতিবার থেকে নিউ টাউনের দু’নম্বর অ্যাকশন এরিয়ায় ‘মদিনাতুল হুজ্জাজ’ ভবনে আসতে শুরু করবেন হজযাত্রীরা। এর পর থেকে হজ চলা পর্যন্ত ওই ভবন পরিচ্ছন্ন রাখা-সহ নানা ধরনের কাজের দায়িত্ব বর্তেছে বিধাননগর পুরসভার উপরে।
সূত্রের খবর, হজযাত্রীদের শিবিরের ব্যবস্থাপনার কাজ যথাসময়ে শুরু করে দিতে গত মাসে বিধাননগর পুরসভাকে নির্দেশ দিয়েছিলেন উত্তর ২৪ পরগনার জেলাশাসক। পুরসভার তরফে সেই কাজ বাস্তবায়িত করতে দরপত্র ডাকা হয়। এমনকি, বিভিন্ন সংস্থাকে কাজের বরাতও দিয়ে দেন আধিকারিকদের একাংশ। এরই মধ্যে পুর কর্তৃপক্ষ অভিযোগ তোলেন, ওই আধিকারিকেরা মেয়র তথা অন্য পারিষদদের সম্পূর্ণ অন্ধকারে রেখে এই কাজ করেছেন। এর পরেই মেয়রের তোপের মুখে পড়েন পুর কমিশনার সুজয় সরকার-সহ বেশ কয়েক জন আধিকারিক।
পুর মহলের দাবি, আধিকারিকেরা ই-দরপত্র ডাকলেও তার নিয়ম না মেনে বিভিন্ন সংস্থাকে বরাত দিয়েছেন। এক শীর্ষ কর্তার কথায়, ‘‘আধিকারিকদের একাংশ অনেক কিছুই আমাদের জানিয়ে করছেন না। ই-টেন্ডার করা হলেও সাধারণ দরপত্র করে নিয়ে বরাত দেওয়া হয়েছে বিভিন্ন সংস্থাকে। যা রাজ্য সরকারের নীতির বিরোধী। এই ঘটনায় আগামী দিনে পুরসভাকে অনেক ধরনের সমস্যার মধ্যে পড়তে হতে পারে।’’
যদিও আধিকারিকেরা এ নিয়ে মুখ বন্ধ রেখেছেন। ওই মহলের খবর, ভোটের মরসুমে আদর্শ আচরণবিধি জারি থাকা সত্ত্বেও কোনও সরকারি প্রকল্পের সূচনা করার এবং পরে পুর কর্তৃপক্ষের অনুমোদন আদায় করার বিশেষ ক্ষমতা রয়েছে পুর কমিশনারের। এই পরিপ্রেক্ষিতে এক আধিকারিক বলেন, ‘‘দরপত্র ডাকার পরে ২১ দিন অপেক্ষা করে কাজের বরাত দেওয়া হয়েছে। কারণ, মেয়রের অনুমোদন নেওয়ার মতো পর্যাপ্ত সময় ছিল না। পরিকল্পনা ছিল, কাজ শুরু করার পরে (পোস্ট ফ্যাক্টো) মেয়রের অনুমোদন নেওয়ার। এর মধ্যে কোনও অনিয়ম নেই।’’
সূত্রের খবর, গোটা বিষয়টি নিয়ে সোমবার আলোচনা করতে জরুরি ভিত্তিতে মেয়র পারিষদ, পুর কমিশনার ও আধিকারিকদের নিয়ে বৈঠক ডেকে উষ্মা প্রকাশ করেন
মেয়র কৃষ্ণা চক্রবর্তী। অন্তত ফোনেও কেন বিষয়টি তাঁকে কেউ জানাননি, তা তিনি কমিশনারের কাছে জানতে চান। যদিও এ প্রসঙ্গে জানতে
চাইলে মেয়র বলেন, ‘‘এটা সংবাদমাধ্যমকে জানানোর মতো কোনও বিষয় নয়।’’
উল্লেখ্য, বিধাননগর মেলার সময়েও পুর প্রতিনিধিদের একাংশ অভিযোগ তুলেছিলেন, তাঁদের অন্ধকারে রেখে ই-দরপত্র ডেকে মেলা বেসরকারি হাতে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। এক পুরকর্তা বলেন, ‘‘ইদানীং এই পুরসভায় অনেক কিছুই ঘটছে। যাঁর যা কাজ, তিনি সেটি না করে অন্য কাজ করছেন। আমরা উচ্চতর নেতৃত্বকে সব জানিয়েছি। এ ভাবে চলতে পারে না।’’