আগামী ১২ জুলাই পর্যন্ত বিধাননগরের ৪১টি ওয়ার্ডের বিভিন্ন জায়গায় টিকা শিবির চলবে। ফাইল ছবি
ফোনের ও-পার থেকে বলা হচ্ছে, ‘‘আপনার কোভিডের টিকার দ্বিতীয় ডোজ় বাকি আছে। দয়া করে ওয়ার্ডের শিবিরে গিয়ে নিয়ে নিন।’’ নতুন করে করোনা মাথাচাড়া দেওয়ার মুহূর্তে এ ভাবেই প্রতিষেধকের দ্বিতীয় ডোজ় নিতে বাসিন্দাদের ফোন করে ডাকছে বিধাননগর পুরসভা।
পুরকর্তাদের অভিযোগ, কোভিড বাড়লেও হেলদোল নেই সল্টলেক-সহ বিধাননগর পুর এলাকার বাসিন্দাদের একটা বড় অংশের। তাঁরা না নিয়েছেন প্রতিষেধকের দ্বিতীয় ডোজ়, না ব্যবহার করছেন মাস্ক। এমন বাসিন্দার সংখ্যা ১২ হাজারেরও বেশি। এর পরে বুস্টার ডোজ় তো বাকি আছেই। বকেয়ার এই তালিকা দেখে চোখ কপালে উঠেছে বিধাননগর পুরসভার কর্তাদের। তড়িঘড়ি বকেয়াপ্রতিষেধক প্রদানের উদ্দেশ্যে পুরসভার তরফে শিবির চালু করা হয়েছে। আগামী ১২ জুলাই পর্যন্ত বিধাননগরের ৪১টি ওয়ার্ডের বিভিন্ন জায়গায় ওই শিবির চলবে।
ক্ষুব্ধ এক পুরকর্তার কথায়, ‘‘নিজেদের সুরক্ষার কথা তো মানুষের নিজেরই ভাবা উচিত। এত বিপুল সংখ্যক বাসিন্দা এখনও দ্বিতীয় ডোজ় কেন নেননি, তা ভেবে আমরাও অবাক। অথচ, এখন প্রতিষেধকের কোনও অভাব নেই। আমরা চেষ্টা করছি যত দ্রুত সম্ভব দ্বিতীয় ডোজ় দিয়ে দেওয়ার। সে জন্য বাড়ি বাড়ি ফোন করে প্রতিষেধক নিতে আসতে অনুরোধ করা হচ্ছে।’’
পুরসভা সূত্রের খবর, সম্প্রতি রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর থেকে একটি তালিকা পাঠানো হয়েছিল বিভিন্ন পুরসভায়। যাতে বলা হয়েছিল, ৫৬ হাজার মানুষ এখনও কোভিড প্রতিষেধকের দ্বিতীয় ডোজ় নেননি। সেই তালিকা হাতে পেয়ে খোঁজ করে বিধাননগর পুর কর্তৃপক্ষ জানতে পারেন তাঁদের পুর এলাকার ১২ হাজার বাসিন্দার দ্বিতীয় ডোজ় বকেয়া থাকার বিষয়টি।
পুরকর্তারা জানাচ্ছেন, দিনকয়েক আগে ওই তালিকা হাতে পেয়ে এখন রোজ ১০০০-১২০০ করে ফোন করা হচ্ছে। দ্বিতীয় ডোজ় না নেওয়া পুরবাসীদের অনুরোধ করা হচ্ছে প্রতিষেধক প্রদান শিবিরে আসতে। অনেকে আবার ফোন ধরছেনও না। ঠিকানা ধরে সেই সব বাড়িতে খবর পাঠানো হচ্ছে। এক পুরকর্তার কথায়, ‘‘একটা ইতিবাচক দিক হল, এখনও পর্যন্ত যাঁদের ডাকা হয়েছে, তাঁদের সিংহভাগই এসেছেন। কিন্তু সব দায় কি আমাদের? প্রথম ডোজ়ের পরেই তো দ্বিতীয় ডোজ়, বুস্টার ডোজ়— সবেরই বার্তা সরকার থেকে পাঠানো হয়েছে। তার পরেও মানুষ সচেতন হবেন না?’’
রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের হিসেব বলছে, সল্টলেক, রাজারহাট কিংবা নিউ টাউনের মতো এলাকায় কোভিড আক্রান্তের সংখ্যা হু হু করে বাড়ছে। এমন একটা সময়ে বকেয়া প্রতিষেধকের সংখ্যা হাতে পেয়ে নড়ে বসেছে বিধাননগর। পুরসভা সূত্রের খবর, বর্তমানে ওই পুর এলাকায় মোট সংক্রমিতের সংখ্যা ৬০০। শুধু বৃহস্পতিবারেই আক্রান্ত হয়েছেন ১৫০ জন। ইতিমধ্যে সল্টলেকের সংযুক্ত এলাকা দত্তাবাদে পুরুষ ও মহিলাদের জন্য পৃথক সেফ হোম তৈরি করা হয়েছে পুরসভার তরফে। রাজারহাটেও একটি সেফ হোম করা হচ্ছে বলে খবর। আধিকারিকেরা জানান, এ বারে যাঁরা আক্রান্ত হচ্ছেন, তাঁরা মূলত কোয়রান্টিনে থেকেই সেরে উঠছেন। কিন্তু, নিম্নবিত্ত এলাকাগুলির বাসিন্দাদের কোয়রান্টিনে থাকার সমস্যা রয়েছে। তাই দত্তাবাদ কিংবা রাজারহাটের মতো এলাকায় সেফ হোম করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।