Bhai phonta

পেন উপহার দিয়ে খুশির ভাইফোঁটা দিলেন ধর্নামঞ্চের বোনেরা

Advertisement

আর্যভট্ট খান

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ নভেম্বর ২০২৪ ০৯:৫৭
Share:

মঙ্গল কামনায় উচ্চ প্রাথমিক চাকরিপ্রার্থী মঞ্চে ভাইফোঁটা l মাতঙ্গিনী হাজরা মূর্তির পাদদেশে ধরনা মঞ্চে। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।

ফোঁটা দিয়ে বোন ভাইয়ের পকেটে গুঁজে দিলেন কলম। বললেন, ‘‘স্কুলের চাকরিতে যোগ দিয়ে এই পেন দিয়েই প্রথম সই করিস।’’

Advertisement

ভাইফোঁটাকে কেন্দ্র করে রবিবার ধর্মতলার মাতঙ্গিনী হাজরার মূর্তির পাদদেশে উচ্চ প্রাথমিকের চাকরিপ্রার্থীদের মঞ্চে খুশির আবহ। এত দিন বিভিন্ন উৎসব-পার্বণে এই মঞ্চেই থাকত বিষাদের সুর। কিন্তু এ বার পরিস্থিতি উল্টো। উচ্চ প্রাথমিকে নিয়োগের জন্য কাউন্সেলিং শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে ৬৫৮ জনের কাউন্সেলিং হয়ে সুপারিশপত্র পেয়ে গিয়েছেন অনেকে। কয়েক জন স্কুলের চাকরিতে যোগও দিয়েছেন।

এ দিন সকাল থেকে ফোঁটার সব আয়োজন করেই মঞ্চে এসেছিলেন বোনেরা। এনেছিলেন ভাইফোঁটা দেওয়ার ধান, দুর্বা, চন্দন বাটা, কাজল, মিষ্টি, দই। অনেকেই দূরথেকে ট্রেনে করে মঞ্চে এসেছিলেন ফোঁটা দিতে। তাই পৌঁছতে খানিক দেরি হয়। কিন্তু তাতে কী! দুপুর ১টা নাগাদ মঞ্চে তাঁরা বসে যানভাইফোঁটা দিতে।

Advertisement

এমনই এক চাকরিপ্রার্থী সঞ্জিত রায়ের কাউন্সেলিং হয়ে স্কুলও নির্বাচন হয়ে গিয়েছে। চাকরিপ্রার্থী মঞ্চের অপর্ণা বন্দ্যোপাধ্যায়, জয়শ্রী রায়দের কাছ থেকে ফোঁটা নিয়ে সঞ্জিত বলেন, ‘‘আমি আগামী ৫ নভেম্বর হাওড়ার গোলাবাড়িতে হাওড়া হিন্দি হাই স্কুলে ভূগোলের শিক্ষক হিসাবে যোগ দেব। আমার নিজের বোন নেই। কিন্তু মঞ্চের বোনেদের কাছে আজ ফোঁটা পেলাম। ওদের থেকে উপহার হিসেবে পেলাম পেন। এই পেন দিয়েই আমি স্কুলে গিয়ে প্রথম সই করব।’’

নদিয়ার তেহট্ট থেকে নিজের ভাইদের ফোঁটা দিয়ে সকাল ১০টার মধ্যেই মঞ্চে পৌঁছে গিয়েছিলেন অপর্ণা। তিনি বলেন, ‘‘চাকরিপ্রার্থীদের মঞ্চের এই ভাইরা আপন ভাইদের থেকে কোনও অংশে কম নয়। ৬৮৫ দিন ধরে এই ধর্নামঞ্চে একসঙ্গে নিয়োগের জন্য আন্দোলন করতে করতে একটা আত্মীয়তার বন্ধন হয়ে গিয়েছে। নিয়োগের দাবিতে আমরা শহরের রাজপথ থেকে শুরু করে স্কুল সার্ভিস কমিশনের অফিস, বিকাশ ভবন— কোথায় না গিয়েছি! পুলিশ আমাদের আটক করেছে। শেষ পর্যন্ত নিয়োগ-জট কেটে আমাদের কাউন্সেলিং প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছে। এ বার তাই খুশির আবহে আমরা ভাইফোঁটা পালন করলাম।’’ অপর্ণা জানান, ২১ নভেম্বর কাউন্সেলিং হয়ে সুপারিশপত্র পাবেন তিনি। তাঁর বিষয় বিজ্ঞান।

আপার প্রাইমারির আর এক চাকরিপ্রার্থী জয়শ্রী এসেছিলেন বারাসত থেকে। তাঁর কাউন্সেলিং হবে ২৬ নভেম্বর। ভাইফোঁটা দিয়ে তিনি বললেন, ‘‘মঞ্চের এইভাইয়েরা নিয়োগ আন্দোলনের জন্য মাসের পর মাস, বছরের পর বছর বাড়ি ছেড়ে কলকাতায় পড়ে আছে। এই বিশেষ দিনে ওদের ভুলি কী করে? তাই বাড়িতে ভাইফোঁটা দিয়েই মঞ্চে চলে এসেছি ওদের ফোঁটা দিতে। একটা খুশির আবহে ভাইফোঁটা হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু সেই দিনই আমাদের আনন্দ সব থেকে বেশি হবে, যখন মেধা তালিকার ১৪০৫২ জনের সকলে নিয়োগপত্র পেয়ে স্কুলে যাবে। তবেই আমাদের আন্দোলনের জয় হয়েছে বলে মনে করব। যত দিন তা না হচ্ছে, তত দিন আমাদের এইধর্নামঞ্চ চলবে।’’

পশ্চিমবঙ্গ আপার প্রাইমারি চাকরিপ্রার্থী মঞ্চের সভাপতি সুশান্ত ঘোষ বলেন, ‘‘আমরা কাঁধে কাঁধে মিলিয়ে একসঙ্গে লড়াই করেছি। এ বার চাই, ধারাবাহিক কাউন্সেলিং হয়ে দ্রুত সবার নিয়োগ। তাই কেউ কেউ নিজেদের বোনের কাছে ফোঁটা নিয়ে এসেছে মঞ্চের বোনেদের কাছেফোঁটা নিতে। আমরা বোনেদের মঙ্গলকামনা করে বলেছি, কাউন্সেলিং হওয়ার পরে ওরা যেন ওদের পছন্দমতো স্কুল পায়।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement