অঙ্গদানের বার্তা ছড়াতে বণিকসভার আহ্বান

Advertisement

জয়তী রাহা

শেষ আপডেট: ০৯ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৩:০৬
Share:

বাঁধভাঙা: মঞ্চে মঞ্জরীদেবী এবং পাঁচুবাবু। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী

‘‘দাহ করে দিলে সবটা তো শেষ হয়ে যেত। অন্যদের মাঝেই ছেলেটা আমার বেঁচে থাক।’’ জলে ভরা চোখ আর কাঁপা ঠোঁটে কথাগুলো বললেন সদ্য ছেলেকে হারানো যুবকের মা। নিজেকে কিছুটা সামলে বেহালার শকুন্তলা পার্কের বাসিন্দা মঞ্জরী মুখোপাধ্যায় বললেন, ‘‘জানেন, আমার ছেলেটা সেবা করতে ভালবাসত। রাস্তার অসুস্থ বেড়াল-কুকুরকেও বাড়িতে নিয়ে আসত। কোথায় কে অসুস্থ, কার কী লাগবে, সে সব নিয়েই বন্ধুদের সঙ্গে মেতে থাকত।’’

Advertisement

চলতি বছরের পঞ্চমীর রাতে বন্ধুদের সঙ্গে ঠাকুর দেখতে বেরিয়ে উল্টোডাঙা উড়ালপুলের উপরে ঘটে যাওয়া এক মোটরবাইক দুর্ঘটনা চিরকালের জন্য থামিয়ে দিয়েছিল এক উচ্ছল প্রাণ, বছর তেইশের যুবক অমিত মুখোপাধ্যায়কে। ছেলের ‘ব্রেন ডেথ’-এর পরে অঙ্গদানের সিদ্ধান্ত নিতে কয়েক সেকেন্ড সময় নিয়েছিলেন বাসচালক পাঁচু মুখোপাধ্যায়। যার ভিত্তিতে সূচনা হল এক অন্য লড়াইয়ের। গত অক্টোবরের শেষের সেই ঘটনায় অমিতের কিডনি, হার্ট, কর্নিয়া-সহ বিভিন্ন অঙ্গ যাঁদের শরীরে প্রতিস্থাপিত করা হয়েছিল, তাঁরা প্রত্যেকেই এখন সুস্থ ভাবে বেঁচে আছেন। এ শহরে এটা নজির। শনিবার, ‘বেঙ্গল চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ’ (বিসিসিআই) আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এ কথা জানালেন চিকিৎসক তথা বিসিসিআই-এর হেল্থ কমিটির চেয়ারম্যান-এমেরিটাস অমিত ঘোষ।

এ দিন ‘মরণোত্তর অঙ্গদান’ শীর্ষক ওই অনুষ্ঠানের মূল উদ্দেশ্য ছিল, সমাজের সর্বত্র অঙ্গদানের বার্তা ছড়িয়ে দেওয়া। আমান আলি খান এবং বিক্রম ঘোষের উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের অনুষ্ঠানে উপস্থিত শ্রোতাদের সচেতনতার বার্তাবাহী হওয়ার অনুরোধ জানানো হয় বিসিসিআই-এর তরফে। গত কয়েক বছরে

Advertisement

মরণোত্তর অঙ্গ প্রতিস্থাপনের শরিক শহরের দুই বেসরকারি হাসপাতাল, ফর্টিস এবং অ্যাপোলোর চিকিৎসকদেরও এ দিন সংবর্ধনা জানানো হয়। পাশাপাশি, সরকারি পরিকাঠামোয় প্রথম সফল হৃৎপিণ্ড প্রতিস্থাপনের নজির গড়া কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের কার্ডিয়োথোরাসিক সার্জন প্লাবন মুখোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে একদল চিকিৎসককেও সম্মানিত করা হয়। অঙ্গ প্রতিস্থাপন সংক্রান্ত আইনি খুঁটিনাটি যাঁরা খতিয়ে দেখেন, রাজ্য ও কলকাতা পুলিশের সেই অফিসারদেরও সম্মান জানানো হয় এ দিন। অঙ্গদানের বার্তাকে সমাজে ছড়িয়ে দেওয়ার প্রতীক হিসেবে প্রত্যেকের হাতে তুলে দেওয়া হয় গাছের চারা। কর্পোরেট সংস্থাগুলির সামাজিক দায়বদ্ধতা প্রকল্পে এ বার অন্তর্ভুক্ত হোক হৃৎপিণ্ড প্রতিস্থাপনের মতো ব্যয়বহুল চিকিৎসা— এমন দাবিও ওঠে এ দিনের অনুষ্ঠানে।

গুরুগম্ভীর অনুষ্ঠানের মাঝে হঠাৎই পর্দায় তখন ভেসে উঠছে একঘর সুখের ছবি। চোখে লেপটানো কাজল, নজরকাটা তিলকে সাজানো হাসিখুশি ছোট্ট অমিত। যা দেখে বাবা-মায়ের বাঁধভাঙা কান্নার সামনে তখন নীরব ঘরভর্তি শ্রোতা। শ্রদ্ধা জানাতে মিনিটখানেক দাঁড়ানো শ্রোতাদের অনেকেরই শাড়ির আঁচল কিংবা রুমাল তখন ভেজা চোখে। অমিতের বাবা-মা আসনে ফিরে আসতেই তাঁদের আগলে নিলেন ছেলের একদল বন্ধু। ‘‘ওরাই এখন আমার সবটুকু,’’ বলেছিলেন বটে মঞ্জরীদেবী।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement