প্রতীকী ছবি।
মজুত করে রাখা নিষিদ্ধ বাজির বিক্রি কি শুরু হয়ে গিয়েছে শহরে? মঙ্গলবার দিনভর প্রকাশ্যে বাজি বিক্রির যে চিত্র ধরা পড়েছে, তাতে এই প্রশ্নই উঠছে। সব রকম বাজি বিক্রির ছাড়পত্র যে মিলবে না, তা বুঝেও পুলিশ কেন আগেই শহরে বাজির প্রবেশ রুখল না, সেই প্রশ্নও উঠছে। সুপ্রিম কোর্ট আবার মনে করে, নিষিদ্ধ বাজি ধরার প্রশিক্ষণ পুলিশের নেই। অথচ বাজি যখন রাজ্যে ঢুকছে, সে দিকেও নজরদারি প্রয়োজন। প্রকারান্তরে রাজ্যে নিষিদ্ধ বাজি ঢুকে পড়ারই কি আশঙ্কা করছে শীর্ষ আদালত?
ব্যবসায়ীদের একাংশ জানাচ্ছেন, মার্চ থেকেই নুঙ্গি, চম্পাহাটি, বেলুড়-সহ রাজ্যের বিভিন্ন জায়গার বাজি শহরে ঢুকতে শুরু করে। বাজি আসে দক্ষিণ ভারত থেকেও। যার মধ্যে সব চেয়ে বেশি বাজি আসে শিবকাশি থেকে। ওই সমস্ত বাজি গুদামের ম্যাগাজিনে রাখা থাকে। সময় বুঝে তা শহরে আনা শুরু হয়। এখন সেই সমস্ত বাজিই পরিবেশবান্ধব মোড়কে বিক্রির পথ খোঁজা হচ্ছে বলে অভিযোগ।
রাজ্যের ‘বাজি শিল্প উন্নয়ন সমিতির’ এক সদস্যের কথায়, ‘‘রাজ্যের ৩৭টি বাজি কারখানা দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদে নথিভুক্ত। যার মধ্যে মাত্র তিনটি কেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থা পেট্রোলিয়াম অ্যান্ড এক্সপ্লোসিভ সেফটি অর্গানাইজ়েশনের (পেসো) ছাড়পত্র পাওয়া। কিন্তু ওই কারখানাগুলি পরিবেশবান্ধব বাজি তৈরি করে না। ওই বাজি তৈরিতে ন্যাশনাল এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং রিসার্চ ইনস্টিটিউট-এর (নিরি) ছাড়পত্র লাগে। নিরি দেশে কাউকে এমন ছাড়পত্র দিয়েছে বলেও শোনা যায় না। অতএব পরিবেশবান্ধব বাজির জোগান না থাকলে তা বিক্রি করতে ব্যবসায়ীদের এত উৎসাহই বা কেন, সেটাও ভাবা দরকার।’’ যদিও রাজ্যের ‘বাজি শিল্প উন্নয়ন সমিতি’র সাধারণ সম্পাদক তথা আইনজীবী শুভঙ্কর মান্না বলছেন, ‘‘বাজি শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে এই আইনি লড়াই।’’
মঙ্গলবার পুলিশের সঙ্গে বৈঠকে ব্যবসায়ীরা জানতে চেয়েছেন, আজ, বুধবারের শুনানিতে কলকাতা হাই কোর্টও শীর্ষ আদালতের পথে হেঁটে পরিবেশবান্ধব বাজি বিক্রিতে ছাড় দিলে বাজি বাজার করা সম্ভব কি না। এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘‘অন্তত পুরনো লাইসেন্সপ্রাপ্ত ব্যবসায়ীদের বাড়ি বা দোকান থেকেই পরিবেশবান্ধব বাজি বিক্রির অনুমতি দেওয়া হোক।’’ প্রশ্ন উঠেছে, যেখানে বাজারেই নজরদারি চালানোর পরিকাঠামো নেই বলা হচ্ছে, সেখানে বাড়ি বাড়ি বা দোকানে ঘুরে কি পুলিশের পক্ষে দেখা সম্ভব?
এর মধ্যেই এ দিন দেখা গেল, ঠাকুরপুকুরে এবং শোভাবাজারের মদনমোহনতলায় ব্যবসায়ীরা বাজির পসরা সাজিয়ে বসেছেন। পরিবেশবান্ধব বাজি ছিল না সেখানে। লালবাজারের যুগ্ম কমিশনার পদমর্যাদার এক পুলিশকর্তা বললেন, ‘‘দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ১০ সেপ্টেম্বর থেকে এখনও পর্যন্ত ৩৯৯৫ কেজি বাজি ধরা হয়েছে। গ্রেফতার হয়েছেন ১৫ জন। আদালত নতুন করে সব বাজি বন্ধের নির্দেশ দিলে আরও কড়া হওয়া যাবে।’’