ট্যাবে বনফুলের উপন্যাসের পাতা ওল্টাচ্ছেন তাঁর পৌত্র মহীরুহ মুখোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।
ট্যাবের পর্দায় ফুটে উঠেছে বনফুল বা বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায়ের লেখা উপন্যাস ‘অগ্নীশ্বর’। তাতে ওই উপন্যাসের সমস্ত পাতা ঠিক যেন বইয়ের মতো করেই পড়া যাচ্ছে। ক্যামাক স্ট্রিটের ‘শান্তিনিকেতন’ ভবনের তেতলায় নিজের অফিসে বসে যিনি ট্যাবের টাচ স্ক্রিনে সেই উপন্যাসের পাতা উল্টে যাচ্ছেন, তিনি বনফুলের পৌত্র মহীরুহ মুখোপাধ্যায়। পাতা ওল্টাতে ওল্টাতে মহীরুহ বললেন, ‘‘শুক্রবার দাদুর ১২৫তম জন্মবার্ষিকী। ওঁর লেখালিখির সম্ভার বিশ্বের দরবারে পৌঁছে দিতে চাই। তাই অগ্নীশ্বরের পাশাপাশি হাটেবাজারে, দুই পথিক, স্বপ্নসম্ভবের মতো দাদুর বেশ কয়েকটি উপন্যাস ডিজিটাইজ় করতে উদ্যোগী হয়েছি। এখন তো কৃত্রিম মেধা বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের যুগ। দাদুর লেখা ডিজিটাইজ় করা থাকলে কৃত্রিম মেধার সাহায্যে সেগুলি খুব অল্প সময়ের মধ্যেই বিশ্বের যে কোনও ভাষায় অনুবাদ করা যাবে। আজকাল অনেক বাড়িতেই বইপত্র রাখার পর্যাপ্ত জায়গা থাকে না। আমি এই প্রজন্মের কাছে দাদুর উপন্যাস, গল্প, ছবি, ডিজিটাইজ় করে পৌঁছে দিতে চাই।’’
আজ, শুক্রবার বনফুলের ১২৫তম জন্মবার্ষিকী। বাঙালির অন্যতম প্রিয় এই সাহিত্যিকের জন্মদিন কি শহর ভুলে গিয়েছে? মহীরুহ বলেন, ‘‘দাদুর ১০০তম জন্মবার্ষিকী পালন হয়েছিল, মনে আছে। একাধিক অনুষ্ঠান হয়েছিল। ওঁকে নিয়ে তথ্যচিত্র এবং ওঁর নামে ডাকটিকিট তৈরি হয়েছিল। দাদুর উপন্যাস হাটেবাজারের নামে একটি ট্রেন চালু হয়েছিল। এ বার ১২৫তম জন্মবার্ষিকীও কেউ কেউ পালন করছেন। তবে, আমি দাদুর প্রতি আমার শ্রদ্ধা নিবেদন করছি, তাঁর বইগুলিকে ডিজিটাইজ় করার মাধ্যমে। সেই সঙ্গে দাদুর বইপত্র এবং তাঁর ব্যবহৃত জিনিসপত্র সংরক্ষণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’’
৪৪ বছরের মহীরুহ পেশায় ইঞ্জিনিয়ার। এখন নিজের সংস্থা রয়েছে। পাখির ছবি তোলা থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের গান শোনা, নানা রকম শখ রয়েছে তাঁর। মহীরুহের অফিসেও বনফুলের নানা বই, ছবি, ব্যবহৃত কিছু জিনিসপত্র যত্ন করে রাখা। তিনি বলেন, ‘‘দাদুর স্মৃতি আমার অফিস জুড়ে রয়েছে। আমার সংগ্রহে ওঁর বইয়ের প্রথম সংস্করণও রয়েছে। আছে দাদুর নানা দুর্লভ ছবি। ওঁর ব্যবহার করা মাইক্রোস্কোপ রয়েছে আমার কাছে। রবীন্দ্রনাথকে লেখা দাদুর চিঠি জোড়াসাঁকোয় দিয়ে দিয়েছি। অন্য লেখকদের লেখা বনফুলের চিঠি রয়েছে। তাঁর আঁকা ছবিও রয়েছে।’’
মহীরুহের অফিসের দেরাজ থেকে বার হল বনফুলের ব্যবহার করা মাইক্রোস্কোপ। রয়েছে কলমও। তাঁর ব্যবহৃত জিনিসপত্র ও বই নিয়ে শহরে একটি সংগ্রহশালা কি তৈরি হতে পারত না? মহীরুহ বলেন, ‘‘সেটা তো হতেই পারত। সংগ্রহশালা থাকলে আরও বেশি সংখ্যক মানুষ জানতেন বনফুল সম্পর্কে। তাঁর এই বিশাল কর্মকাণ্ডের কথা আজকের প্রজন্মের কত জনই বা জানেন?’’
১৯৬৮ থেকে ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত লেক টাউনের বি ব্লকে পি-৬৬ ঠিকানায় ছিলেন বনফুল। সেখানেই মারা যান তিনি। ওই বাড়ি ভেঙে ফ্ল্যাট উঠে গেলেও একটি সংস্থার উদ্যোগে সেখানে আজ বনফুলের ১২৫তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে তাঁর নামে ফলক বসানো হবে। ওই সংস্থার তরফে মৌমিতা সাহা ও শ্যামল ঘোষ জানালেন, তাঁদের দাবি, বনফুলের বাড়ির সামনের রাস্তার নাম বনফুল সরণি করা হোক। অনেকেই জানেন না, বনফুল লেক টাউনে থাকতেন। ওই ফলক স্থাপিত হলে এবং রাস্তার নাম বনফুলের নামে হলে হয়তো আজকের প্রজন্ম তাঁর সম্পর্কে আরও বেশি করে জানতে উৎসাহী হবে।