অনন্যা মিস্ত্রি। —নিজস্ব চিত্র
স্কুল থেকে ফেরার পথে দেড় বছরের ছেলের জন্য জামা কিনতে গিয়ে খানিক দেরি হয়ে গিয়েছিল বছর চৌত্রিশের স্কুলশিক্ষিকা অনন্যা মিস্ত্রির। তাই ট্রেনে জয়নগর পৌঁছে তাড়াহুড়ো করেই অটোয় উঠেছিলেন তিনি। তাড়াতাড়ি বাড়ি পৌঁছতে অটোয় চালকের ডান দিকের আসনে বসেছিলেন। কিন্তু উল্টো দিক থেকে আসা একটি গাড়ির ধাক্কায় সেই অটোটি উল্টে গিয়ে মারাত্মক ভাবে জখম হন ওই শিক্ষিকা। তড়িঘড়ি স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও এর কয়েক ঘণ্টা পরেই মারা যান তিনি।
সোমবার ওই ঘটনা ঘটেছে জয়নগরে। গভীর রাতে মেয়ের মৃত্যুর খবর পান বাবা গৌর মিস্ত্রি। তিনি বলেন, ‘‘আমার দেড় বছরের নাতি মায়ের জন্য ব্যাকুল। মা কখন স্কুল থেকে ফিরবে, সেই জন্য সমানে কেঁদে যাচ্ছে। ওকে এখন কে সামলাবে?’’
বারুইপুর গার্লস হাইস্কুলে পদার্থবিদ্যার শিক্ষিকা ছিলেন অনন্যা। তাঁর এক সহকর্মী পৌলোমী সরকার জানান, ২০১০ সালে ওই স্কুলে শিক্ষিকা হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন অনন্যা। পৌলোমী বলেন, ‘‘আমরা দু’জনেই বিজ্ঞান বিষয়ের শিক্ষিকা ছিলাম। আমরা ভাল বন্ধুও ছিলাম। বাড়ির কথা, ছেলের কথা বলত অনন্যা। সে দিন স্কুল ছুটির পরে ছেলের জন্যই তাড়াহুড়ো করে বাড়ি ফিরছিল। ওর এ রকম মর্মান্তিক পরিণতি ভাবতে পারছি না।’’
জয়নগরের কাছে বকুলতলায় থাকেন অনন্যা। প্রতিদিন ট্রেনে করে জয়নগর থেকে বারুইপুরের স্কুলে যেতেন। গৌরবাবু বলেন, ‘‘ও কখনওই অটোর সামনে ডান দিকের আসনে বসত না। সে দিন বাড়ি ফেরার তাড়া ছিল। অটোচালকই বা কেন সামনের আসনে বসতে দিল?’’
অনন্যার মৃত্যুতে মঙ্গলবার সকাল থেকে এলাকায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া। তাঁর বাড়িতে ভিড় করেছেন প্রতিবেশীরা। অনন্যার স্বামী মিঠুন বিশ্বাস পেশায় চিকিৎসক। তিনি একটি প্রশিক্ষণের কাজে লখনউ গিয়েছিলেন। স্ত্রীর মৃত্যুর খবর শুনে সঙ্গে সঙ্গে ফিরে এসেছেন। গৌরবাবু বলেন, ‘‘আমার স্ত্রী কল্পনাকেও কোনও ভাবে সামলানো যাচ্ছে না। আমাদের আর্থিক অবস্থা বিশেষ ভাল নয়। কষ্ট করে দুই মেয়েকে লেখাপড়া শিখিয়েছিলাম। অনন্যা ছোট থেকেই মেধাবী ছিল। লেডি ব্রেবোর্ন কলেজ থেকে পাশ করেছে। একটা দুর্ঘটনায় এক নিমেষে আমাদের সব কিছু শেষ হয়ে গেল।’’