ATM forgery

১ লাখ তুলুন, ১৫ হাজার আপনার, এ ভাবেই চলছে জালিয়াতির ‘ম্যানেজমেন্ট স্কুল’!

মোটা টাকার লোভে সেই চক্করেই পড়ে যাচ্ছেন শিক্ষিত যুবকদের একাংশ। তাঁদের মধ্যে ইঞ্জিনিয়ার থেকে আইটি বিশেষজ্ঞ— অনেকেই রয়েছেন। কলকাতায় এটিএম জালিয়াতির তদন্তে নেমে এমনটাই জানতে পেরেছেন গোয়েন্দারা।

Advertisement

সোমনাথ মণ্ডল

শেষ আপডেট: ০৮ অগস্ট ২০১৮ ১৮:২৭
Share:

তদন্তকারীদের দাবি, যারা এই ধরনের কাজের সঙ্গে যুক্ত, তারা ১০ থেকে ১৫ শতাংশ কমিশনের ভিত্তিতে কাজ করে।

এ যেন ব্যাঙ্ক জালিয়াতির ‘ম্যানেজমেন্ট স্কুল’! প্রথমে হাতেকলমে প্রশিক্ষণ, তার পর যোগ্যতা অনুযায়ী বিভিন্ন রাজ্যে ‘প্লেসমেন্ট’।

Advertisement

মোটা টাকার লোভে সেই চক্করেই পড়ে যাচ্ছেন শিক্ষিত যুবকদের একাংশ। তাঁদের মধ্যে ইঞ্জিনিয়ার থেকে আইটি বিশেষজ্ঞ— অনেকেই রয়েছেন। কলকাতায় এটিএম জালিয়াতির তদন্তে নেমে এমনটাই জানতে পেরেছেন গোয়েন্দারা।

ধৃত দুই রোমানীয়কে জেরা করে গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন, এ দেশের অনেক যুবকই এখন সাইবার অপরাধে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। তারা কেউ রোমানীয়, কেউ বা নাইজেরীয় গ্যাং-এর হয়ে কাজ করে। কীভাবে এটিএমে স্কিমার বা গোপন ক্যামেরা লাগাতে হয়, হাতেকলমে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় ওই যুবকদের।তদন্তকারীদের একাংশের দাবি,গ্যাং-এর মাথারা কখনও হোটেল ভাড়া নিয়ে, কখনও আবার ঘর ভাড়া নিয়ে ‘ক্লাস’ নেয়। স্কিমারের মাধ্যমে টাকা হাতানো ছাড়াও, এসএমএস এবং ই-মেল পাঠিয়ে তথ্য হ্যাক করা, এমনকি, ফোন করে কীভাবে গ্রাহকের তথ্য বের করতে হবে তা-ও ‘যত্ন’ করেশেখানো হয়।

Advertisement

আরও পড়ুন: এটিএমে কী করছে এত ক্ষণ? ভিতরে ঢুকতেই জানা গেল…

তদন্তকারীদের দাবি, যারা এই ধরনের কাজের সঙ্গে যুক্ত, তারা ১০ থেকে ১৫ শতাংশ কমিশনের ভিত্তিতে কাজ করে। এক তদন্তকারীর কথায়, ‘‘কোনও এটিএমে স্কিমার লাগানোর পর গ্রাহকের তথ্য হাতিয়ে ১ লাখ টাকা তুলতে পারলে, ওই জালিয়াত ১৫ হাজার টাকা পেয়ে থাকে। বাকি ৮৫ হাজার টাকা চলে যায় দলের মাথাদের কাছে।’’ অর্থাৎ এক জন গ্রাহকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে যত বেশি টাকা তোলা যাবে, তত বেশি আয়। তাই ঝুঁকিপূর্ণ কাজ হলেও, মোটা টাকার লোভে জালিয়াত দলে নাম লেখাচ্ছেন যুবকেরা।কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা প্রধান প্রবীণ ত্রিপাঠী বলেন, “জেরায় অভিযুক্তরা দাবি করেছে, কমিশনের ভিত্তিতে তারা কাজ করে। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”

দেখুন ভিডিয়ো...

ভবানীপুর থানা এলাকা থেকে গ্রেফতার হওয়া তিন যুবককে জেরা করেও এ রকমই তথ্য মিলেছে বলে তদন্তকারীদের দাবি। ধৃতদের মধ্যে মুম্বইয়ের বাসিন্দা রোহিত কুমার বি-টেক ইঞ্জিনিয়ার। ঠাণের বাসিন্দা সুধীররঞ্জন পেশায় মেকানিক।সালিল খান ওরফে সৈয়দের পারিবারিক ব্যবসা রয়েছে। প্রত্যেকেরই স্বচ্ছল পরিবার। বেশ কয়েক বছর ধরে ব্যাঙ্ক জালিয়াতির দলে যোগ দিয়ে তারা কয়েক লাখ টাকা হাতিয়েছে বলে দাবি গোয়েন্দাদের।

আরও পড়ুন: আগরপাড়ায় শাড়ির দোকানের আড়ালেই অস্ত্র কারখানা!

প্রাথমিক তদন্তে গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন, এক-দু’মাস অন্তর তারা কলকাতায় আসত। হোটেল ভাড়া করে এখানকার এটিএমগুলোতে রেকি করে দেখত, কোথায় ঢিলেঢালা নিরাপত্তা রয়েছে দেখার পর সেই এটিএমগুলোকে ‘টার্গেট’ করে গভীর রাতে স্কিমার যন্ত্র বসাত তারা। এ ভাবে কয়েকদিন তথ্য হাতানোর পর সেই স্কিমার খুলে পাঠিয়ে দেওয়া হত মূলচক্রীদের কাছে। তারা নকল এটিএম কার্ড বানাতে সিদ্ধহস্ত। কী ভাবে তথ্য অন্য একটি কার্ডে ট্রান্সফারকরা হয়, তা নাকি খুব সহজে কাউকে শেখায় না গ্যাং-এর মাথারা।

এ দিন ধৃতদের আগামী ২১ অগস্ট পর্যন্ত পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। সরকারি আইনজীবী অভিজিৎ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এটা একটি সংগঠিত অপরাধ। ধৃতদের জেরা করে আরও তথ্য উঠে আসবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement