ঘটনাস্থল: চিড়িয়াখানায় সিংহের খাঁচার সামনে এই বেড়া টপকেই ঢুকেছিলেন গৌতম গুছাইত। শুক্রবার। সুমন বল্লভ।
সম্প্রতি খাঁচার ভিতর থেকে টাউক্যান পাখি চুরির ঘটনায় আলিপুর চিড়িয়াখানার নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও নজরদারি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। শুক্রবার সিংহের খাঁচায় এক যুবকের ঢুকে পড়ার ঘটনার পরে সেই প্রশ্ন জোরালো হয়েছে। অনেকেই মনে করাচ্ছেন, এর আগে আলিপুরে দু’বার দু’টি পৃথক ঘটনায় বাঘের খাঁচায় ঢুকে প্রাণ হারিয়েছিলেন দুই যুবক। তাই খাঁচার সামনে নজরদারি বেশি থাকার কথা। তার পরেও কেন এমন ঘটনা ঘটল, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
আলিপুর চিড়িয়াখানার অধিকর্তা আশিসকুমার সামন্তের দাবি, ‘‘চিড়িয়াখানার নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঠিকই আছে। এ দিন চিড়িয়াখানার কর্মীদের তৎপরতাতেই ওই যুবককে উদ্ধার করে এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়েছে। না-হলে বড় বিপদ হতে পারত। তবে ওই যুবক খাঁচায় কী ভাবে ঢুকলেন, তা তদন্ত করে দেখা হবে।’’ চিড়িয়াখানা সূত্রের দাবি, এ দিন বিশ্বাস নামের সিংহটি এনক্লোজ়ারের এক প্রান্তে গাছের তলায় বসেছিল। সে দিকেই দর্শকের ভিড় ছিল। রক্ষীরাও সে দিকেই ব্যস্ত ছিলেন। সেই ফাঁকেই উল্টো দিকের একটি ছোট গেট পেরিয়ে পাম গাছ বেয়ে পাঁচিলের উপরে চড়ে বসেন গৌতম গুছাইত। রক্ষীরা তাঁকে নামানোর চেষ্টা করলে তিনি এনক্লোজ়ারের ভিতরে লাফ দেন।
এ দিনের ঘটনার কথা চাউর হতেই দর্শকদের ভিড় জমতে শুরু করে সিংহের খাঁচার সামনে। অনেকে সেখানে মোবাইলে নিজস্বীও তোলেন। তবে বিশ্বাসকে আর বার করেননি চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ। সে থেকে গিয়েছে অন্তঃপুরেই।
অনেকেই মনে করছেন, এই ঘটনা থেকে ‘শিক্ষা নেওয়া উচিত’ চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের। ভিড় সামলানোর পাশাপাশি খাঁচার আশপাশেও নজর রাখতে হবে রক্ষীদের। সূত্রের দাবি, খাঁচার সামনে দু’জন রক্ষী থাকেন। রয়েছে সিসি ক্যামেরাও। প্রশ্ন উঠেছে, গৌতম নামের ওই যুবক পাম গাছ বেয়ে উঠলেও তা সিসি ক্যামেরায় নজরদারির দায়িত্বে থাকা কর্মীর চোখে পড়ল না কেন? এ-ও প্রশ্ন উঠেছে, আশপাশের খাঁচার সামনে থাকা রক্ষীদেরও নজর এড়িয়ে গেল কী করে? কেউ কেউ অবশ্য এ-ও বলছেন, কয়েক বছর আগে আলিপুর চিড়িয়াখানা থেকে ‘সোনালি তক্ষক’ উধাও হয়ে গিয়েছিল। প্রাথমিক তদন্তে বলা হয়েছিল, খাঁচার জাল কাটা ছিল। সেই ফাঁক গলেই বেরিয়ে গিয়েছিল ওই সরীসৃপেরা। কয়েকটি তক্ষককে উদ্ধার করা হলেও ওই ঘটনায় বন দফতর এবং রাজ্য জ়ু অথরিটির শীর্ষ মহলে বিতর্ক তৈরি হয়েছিল।
তবে এই ধরনের নিরাপত্তার ফাঁক কিন্তু অন্যান্য চিড়িয়াখানাতেও দেখা গিয়েছে। বছর দুয়েক আগে শিলিগুড়ির বেঙ্গল সাফারির ঘেরাটোপ থেকে একটি চিতাবাঘ বেরিয়ে পড়েছিল। পরে খাবারের টানে সে নিজেই ডেরায় ফিরে আসে। ২০১৯ সালে দিল্লির চিড়িয়াখানাতেও সিংহের আস্তানায় ঢুকে পড়েছিলেন এক ব্যক্তি। তাঁকেও উদ্ধার করেছিলেন চিড়িয়াখানার কর্মীরা।
চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের দাবি, সিংহের খাঁচায় ত্রিস্তরীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে। প্রথমে রয়েছে একটি তারের জালের বেড়া। তার পরে খাল। তার পরে ফের তারের জালের বেড়া রয়েছে। কেন্দ্রীয় জ়ু অথরিটির নিয়ম মেনেই নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা হয়েছে। বেসরকারি সংস্থার রক্ষীদের পাশাপাশি রয়েছেন অবসরপ্রাপ্ত সেনাকর্মীরাও। আশিসবাবু জানান, এ দিনের ঘটনার পরে সিংহ-সহ সব প্রাণীর খাঁচার ফেন্সিং বা বেড়ার উচ্চতা বাড়ানো হবে।