অর্চনা পালংদার।
একের পর এক সম্পর্ক, এবং তা নিয়ে সংসারে চলত নিত্য অশান্তি। অর্চনা হত্যার তদন্তে নেমে আগেই এ তথ্য আগেই হাতে এসেছিল পুলিশের। খুনের পিছনে বহু পুরুষবন্ধুর পাশাপাশি, অর্চনার স্বামীকেও সন্দেহের আওতায় রেখে এগোচ্ছেন তদন্তকারীরা।
বৃহস্পতিবার চৌবাগা লকগেটের কাছে খাল থেকে উদ্ধার হয় বছর তিরিশের গৃহবধূ অর্চনা পালংদারের বস্তাবন্দি দেহ। প্রথমে পরিচয় না মিললেও, পরে দেহ সনাক্ত করেন অর্চনার স্বামী পিন্টু পালংদার। পুলিশ নিজেই স্বতঃপ্রণোদিতভাবে খুনের মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করে।
কে খুন করল অর্চনাকে? নানা দিক খতিয়ে দেখছে পুলিশ। তবে তাঁর সঙ্গে যে একাধিক পুরুষ বন্ধুর সম্পর্ক ছিল, এবং তা নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে একটা টানাপোড়েন চলছিল, তা নিয়ে মোটামুটি নিশ্চিত তদন্তকারী অফিসারেরা।
উল্টোডাঙার জহরলাল দত্ত লেনে অর্চনার শ্বশুরবাড়ি। চার বছর আগে স্বামী আর দুই ছেলেমেয়েকে ফেলে একবার ঘর ছেড়েছিলেন তিনি। তখন এক বিরিয়ানি দোকানের কর্মচারীর সঙ্গে কেষ্টপুরের ভাড়া বাড়িতে উঠেছিলেন। বিবাহ বিচ্ছেদ না হওয়া সত্ত্বেও, ওই কর্মচারীর সঙ্গে এক বছর সংসারও করেন অর্চনা। পরে অবশ্য ‘নিজের ভুল বুঝতে পেরে’ ফিরে এসেছিলেন স্বামীর কাছে, এমনটাই পুলিশ জানতে পেরেছে পিন্টুর কাছ থেকে।
আরও পড়ুন, শরীর খারাপ করছে, খাবার আনতে বলে আরজি কর থেকে শিশু নিয়ে চম্পট
এর মধ্যে আরও এক জনের সঙ্গে সম্পর্ক হয় অর্চনার। এবং সম্প্রতি এক ফেসবুক বন্ধুর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয়েছিল বলে পুলিশ সূত্রে খবর। মাঝেমধ্যে তাঁর সঙ্গেও দেখা করতে যেতেন। এ নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে গোলমালও হত। পিন্টুর বিরুদ্ধে বধূ নির্যাতনের অভিযোগও দায়ের করেছিলেন অর্চনা। পরে মিটমাট হয়ে গেলেও, অর্চনার পুরুষ বন্ধুর তালিকা নাকি আরও দীর্ঘ হতে শুরু করে। এমনটাই দাবি পিন্টুর। তাঁর আরও দাবি, খুনের নেপথ্যে তাঁদেরই কেউ না কেউ জড়িত।
স্ত্রী অর্চনা পালংদারের (ডান দিকে) দেহ শনাক্ত করতে এনআরএস হাসপাতালে তাঁর স্বামী পিন্টু পালংদার। শুক্রবার। নিজস্ব চিত্র।
পিন্টু অর্চনার পুরুষ বন্ধুদের দিকে অভিযোগের আঙ্গুল তুললেও, সন্দেহের তালিকার বাইরে নেই তিনিও। ইতিমধ্যেই পিন্টুকে বেশ কয়েকবার জেরা করা হয়ে গিয়েছে। এর মধ্যেই অর্চনার বাপের বাড়ির লোকজনের অভিযোগ, মদ খেয়ে গায়ে হাত তুলতেন পিন্টু। তাই মাঝেমধ্যেই চলে যেতেন বাপের বাড়ি।
গত সোমবারও জানবাজারে বাপের বাড়ির কাছে মোবাইল সারাতে যাবে বলেই বেরিয়ে ছিলেন অর্চনা। তার পর থেকেই নিখোঁজ হয়ে যান।
আরও পড়ুন, একাধিক অভিযোগ থাকলেও বাগড়িদের নিয়ে ‘উদাসীন’ পুলিশও!
পিন্টু পুলিশকে বলেছেন, সম্প্রতি একজন পুরুষ বন্ধুর সঙ্গেই নানা জায়গায় বেশি ঘুরতে দেখা যেত অর্চনাকে। বহু ছবিও রয়েছে দু’জনের। ওই পুরুষ বন্ধুর নাম ইতিমধ্যেই পুলিশকে জানিয়েছেন পিন্টু। কিন্তু তদন্তের স্বার্থে এখনই সেই নাম প্রকাশ্যে আনতে চাইছে না পুলিশ।
ময়না তদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টে জানা গিয়েছে, অর্চনাকে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়েছে। মাথায় আঘাতও রয়েছে তাঁর। এক পুলিশ অফিসার জানান, যেই খুন করে থাকুক না কেন, সে পরিকল্পনা মাফিকই খুন করেছে। এমনও হতে পারে খুনের নেপথ্যে একাধিক ব্যক্তি যুক্ত রয়েছে।