Calcutta Medical College and Hopsital

তদন্ত-রিপোর্ট পেশ মেডিক্যালে র‌্যাগিংয়ের, শাস্তি ঘোষণা শীঘ্রই

গত ৯ জানুয়ারি প্রকাশ্যে আসে, অস্থিরোগ বিভাগের ইউনিট-১ এর প্রথম বর্ষের দুই পিজিটি বিট্টু ধর এবং জনসন প্রবীণ আম্বেডকরের উপরে ওই বিভাগেরই দ্বিতীয় বর্ষের দুই পড়ুয়া-চিকিৎসক প্রায় তিন মাস ধরে শারীরিক ও মানসিক নিগ্রহ চালাচ্ছেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ জানুয়ারি ২০২৪ ০৭:৪৪
Share:

—প্রতীকী ছবি।

দুই জুনিয়র পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ট্রেনিকে (পিজিটি) র‍্যাগিংয়ের অভিযোগ উঠেছিল কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে। দশ দিন পরে, শুক্রবার সেই ঘটনার পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট কর্তৃপক্ষকে জমা দিলেন র‍্যাগিং বিরোধী তদন্ত কমিটির সদস্যেরা। জানা যাচ্ছে, তদন্তে অভিযোগের অনেকটাই সত্যি বলে প্রমাণিত হয়েছে। তবে, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে এখনও কোনও শাস্তির কথা জানাননি কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ।

Advertisement

সূত্রের খবর, জাতীয় মেডিক্যাল কমিশনের (এনএমসি) প্রস্তাবিত নিয়ম মেনে আগামী দু’-তিন দিনের মধ্যে শাস্তি ঘোষণা করা হবে। বিষয়টি নিয়ে আইনজীবীর পরামর্শও নেবেন কলেজ কর্তৃপক্ষ। মেডিক্যালের অধ্যক্ষ ইন্দ্রনীল বিশ্বাস বলেন, ‘‘অভিযোগকারী ও অভিযুক্তেরা সকলেই ছাত্র। প্রত্যেকে ভাল কাজ করেন। কিন্তু কারও ব্যবহার বা আচরণ যদি অনভিপ্রেত হয়, তা হলে শাস্তি যেমন প্রয়োজন, তেমন সংশোধনও জরুরি। সব দিক খতিয়ে দেখেই পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’’

তবে কয়েক মাস ধরে এই ঘটনা ঘটে চললেও কেন সংশ্লিষ্ট বিভাগের শিক্ষক-চিকিৎসকেরা বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করেননি, তা নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেছেন কলেজ কর্তৃপক্ষ। জানা গিয়েছে, সতর্ক করা হবে ওই বিভাগকেও। দরকারে শিক্ষক-চিকিৎসকদের বিরুদ্ধেও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে কর্তৃপক্ষ দ্বিধা করবেন না।

Advertisement

উল্লেখ্য, গত ৯ জানুয়ারি প্রকাশ্যে আসে, অস্থিরোগ বিভাগের ইউনিট-১ এর প্রথম বর্ষের দুই পিজিটি বিট্টু ধর এবং জনসন প্রবীণ আম্বেডকরের উপরে ওই বিভাগেরই দ্বিতীয় বর্ষের দুই পড়ুয়া-চিকিৎসক প্রায় তিন মাস ধরে শারীরিক ও মানসিক নিগ্রহ চালাচ্ছেন। সে দিনই অধ্যক্ষের কাছে বিট্টু ও জনসন লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। তাঁরা এ-ও অভিযোগ করেন, প্রায় তিন মাস ধরে মানসিক অত্যাচারের পাশাপাশি তাঁদের মারধর এবং থুতু ছিটিয়ে দেওয়ার মতো অত্যাচারও চালানো হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে সরব হয় কলকাতা মেডিক্যালের ‘রেসিডেন্ট ডক্টর্স অ্যাসোসিয়েশন’। সমাজমাধ্যমেও ছড়িয়ে যায় ঘটনাটি।

এর পরেই তড়িঘড়ি উপাধ্যক্ষ অঞ্জন অধিকারীকে চেয়ারম্যান করে ছয় সদস্যের তদন্ত কমিটি গড়েন কলেজ কর্তৃপক্ষ। তাতে ফরেন্সিক বিভাগের প্রধান চিকিৎসক, ডেপুটি ডিন, শল্য বিভাগের এক জন শিক্ষক-চিকিৎসক, ডেপুটি সুপার (নন-মেডিক্যাল)-সহ এক জন পড়ুয়া প্রতিনিধি ছিলেন। ঘটনার পরের দিন, অর্থাৎ ১০ জানুয়ারি প্রাথমিক একটি রিপোর্ট জমা দেয় তদন্ত কমিটি। পাশাপাশি, অভিযোগকারী ও অভিযুক্তদের মানসিক স্বাস্থ্যে যাতে এর কোনও প্রভাব না পড়ে, সে দিকেও নজর রেখেছিলেন কলেজ কর্তৃপক্ষ।

সূত্রের খবর, প্রাথমিক ওই রিপোর্ট জাতীয় মেডিক্যাল কমিশন, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) ও রাজ্য মানবধিকার কমিশনে পাঠানো হয়। এর পরে দফায় দফায় তদন্ত প্রক্রিয়া চলতে থাকে। সেখানে অভিযোগকারী, অভিযুক্তদের পাশাপাশি ‘রেসিডেন্ট ডক্টর্স অ্যাসোসিয়েশন’, ইন্টার্ন, অস্থিরোগ বিভাগের প্রধান চিকিৎসক, নার্স, চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদেরও সাক্ষ্য নেওয়া হয়। প্রত্যেকের বক্তব্য লিখিত আকারে নিয়েছে তদন্ত কমিটি। বৃহস্পতিবার তদন্ত কমিটির সদস্যেরা ফের বৈঠকে বসেন। তার পরেই এ দিন ১৮ পাতার রিপোর্ট অধ্যক্ষের কাছে জমা দেওয়া হয়েছে বলে খবর।

তদন্তে অভিযোগের সত্যতা যেমন প্রমাণিত হয়েছে, তেমনই কলেজ চত্বর, ওয়ার্ড, অপারেশন থিয়েটারের মধ্যে ঘটে চলা এই ঘটনায় অস্থিরোগ বিভাগের শিক্ষক-চিকিৎসকেরা কেউ কেন প্রতিবাদ করেননি কিংবা তা কর্তৃপক্ষের নজরে আনেননি, সেই প্রশ্নও তোলা হয়েছে।

এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘শুধুমাত্র পাঠ্যবিষয় পড়ানো বা শেখানোই নয়। পড়ুয়াদের ভুল দেখলে তাঁদের ঠিক পথে চালিত করাওশিক্ষক-চিকিৎসকদের কর্তব্য। কারণ, তাঁরাই পড়ুয়াদের মেন্টর বা পরামর্শদাতা।’’

সূত্রের খবর, রিপোর্টের নির্যাস স্বাস্থ্য ভবনকেও জানিয়েছেন কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ। এ বার স্বাস্থ্য প্রশাসন, স্বাস্থ্য বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয় এবং আইনি পরামর্শ নিয়ে দুই অভিযুক্তের শাস্তি ঘোষণা করা হবে। পডু়য়া-চিকিৎসকদের কথায়, ‘‘এখন দেখার, কলেজ কর্তৃপক্ষ কোন ধরনের শাস্তি ঘোষণা করেন।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement