Bhanu Bandopadhyay

ভানু, জহরকে চেনা হয়নি আজও

ফুরিয়েও ফুরোতে চায় না ভানু-জহরের কথা! কথা শেষেও ‘ভানুদার পপুলারিটি’ নিয়ে গপ্পোটা না-বলে পারলেন না মাধবী মুখোপাধ্যায়।

Advertisement

ঋজু বসু

শেষ আপডেট: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০৪:০২
Share:

আনন্দবাজার পত্রিকা ‘সাবাশ বাংলা’র সহায়তায় ভানু-জহরের স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠানে (বাঁ দিক থেকে) চন্দন সেন, সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়, সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায় এবং মাধবী মুখোপাধ্যায় (বাঁ দিকে)। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায়। এ দিনই দুপুরে বইমেলায় কলকাতা সাহিত্য উৎসবের সূচনা করেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় (ডান দিকে)। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য

ফুরিয়েও ফুরোতে চায় না ভানু-জহরের কথা! কথা শেষেও ‘ভানুদার পপুলারিটি’ নিয়ে গপ্পোটা না-বলে পারলেন না মাধবী মুখোপাধ্যায়।

Advertisement

ভানু তখন যেখানেই যান, জনতা উৎসুক, কী রে ভানু আছিস কেমন?

ভানুর জবাব: আগে কেমন ছিলাম তা জানস?

Advertisement

জনতা: না!

ভানু: তা হলে অহন কেমন আছি, কী বুঝবি?

আনন্দবাজার পত্রিকা ‘শাবাশ বাংলা’র সহায়তায় বইমেলার কলকাতা সাহিত্য উৎসবের আসর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় শামিল হল ভানু-জহরের শতবর্ষে হাস্যরসের স্মৃতিতর্পণে। দুপুরে সাহিত্য উৎসবটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করে তাঁর লিটল ম্যাগাজ়িন চর্চা নিয়ে কথা বলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। বরিশালে জহর রায়ের জন্ম ১৯১৯-এ। ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিক্রমপুরে ১৯২০-তে, ঠিক এক বছরের মধ্যে। ‘‘চার্লি চ্যাপলিন বা বাস্টার কিটনদের অভিনয় বিশ্লেষণ করে অজস্র বই লিখেছেন, চর্চা করেছেন পণ্ডিতেরা। তা হলে ভানু-জহর প্রসঙ্গ স্রেফ সরস স্মৃতিচারণে আটকে থাকলে কি তাঁদের প্রতি সুবিচার করা হয়?’’ — প্রশ্নটা ছুড়ে দেন চলচ্চিত্রবিদ্যার অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক-প্রাবন্ধিক সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়।

সাবিত্রী এ দিন বলছিলেন, শ্যামবাজারের থিয়েটারে মঞ্চে ‘জয় মা কালী বোর্ডিং’-এর সময়ে ভানুদার সংলাপ নিয়ে নানা মজার খেলা সামাল দিতে কেমন মুশকিলে পড়তে হত। মাধবী বললেন, ‘‘জহরদার সঙ্গে অভিনয়ের সময়ে পেট ফেটে হাসি পেত।’’ বাংলার উদ্বাস্তু সমস্যা নিয়ে ‘নতুন ইহুদি’ নাটক এবং ‘পাশের বাড়ি’ ছবিতে বাঙাল মাইয়া সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়ের আত্মপ্রকাশও ‘ভানুদার’ হাত ধরে। মাধবী বললেন, ‘ভানু গোয়েন্দা, জহর অ্যাসিস্ট্যান্ট’ ছবির কথা। ক’জন অভিনেতার এমন ব্র্যান্ডিং এ যুগেও দেখা যায়?

প্রবীণ নাট্যকার চন্দন সেনও বিজন থিয়েটারে নাট্যচর্চার সূত্রে ভানু-জহরের মতো মহারথীদের কাছ থেকে দেখেছেন। চন্দনবাবু বললেন, ‘‘দু’জনেই বিশ্বাস করতেন, পড়াশোনা করা ছাড়া অভিনয় শেখা যায় না। দু’জনেরই আফশোস ছিল, অভিনয়ের চাপে জীবন থেকে পড়াশোনার সময় অনেক কমে গিয়েছে।’’ সঞ্চালক-সাংবাদিক অলোকপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায় ভানু-জহরের নানা অজানা দিক মেলে ধরছিলেন। জহর রায়ের ২০ হাজার বইয়ের ‘লাইব্রেরি’ ছিল বাড়িতে। রুশ বিপ্লবের ক’বছরের মধ্যে জন্মানো ভানুর নামই তো সাম্যময়। এমনকি বিনয়-বাদল-দীনেশের দীনেশের সঙ্গেও ঘনিষ্ঠতা ছিল ভানুর। সাবেক পুব বাংলায় বিপ্লবীদের চিঠি চালাচালিতেও হাত লাগিয়েছেন কিশোর সাম্যময়।

সঞ্জয়বাবুর মতে, ‘‘ভানু-জহরের অভিনয়ের টুকরো টুকরো কাজ তাঁদের মননশীলতার নানা সাক্ষ্য বহন করে। বেপরোয়া বাঙাল ভানুর ‘মাসিমা মালপো খাব’ তো বাঙালির জাতীয় মন্ত্রই বলা যায়। জহর রায়ের অভিনয়ও শেক্সপিয়রের ভাঁড় বা ‘ফুলের’ ছদ্মবেশী দার্শনিক গভীরতাকে বার বার ফুটিয়ে তুলেছে।’’ ‘সুবর্ণরেখা’য় জহর রায়ের পা চুলকানো কিংবা ‘পরশপাথরে’ জহরের সেই হাসতে হাসতে কেঁদে ফেলা আপাত হাসির আড়ালে এক ধরনের অন্তর্ঘাতকেই ফুটিয়ে তোলে। সঞ্জয়বাবুর মতে, ‘‘ভানু-জহর-তুলসী চক্রবর্তীরা অবলীলাক্রমে বাংলা ছবিতে এমন মুহূর্ত তৈরি করেছেন। তাঁরা তাই আমাদের সামনে শাপভ্রষ্ট রাজপুত্তুর।’’ হাসির মোড়কে তাঁদের চেনা বাকি থেকে গিয়েছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement