অবশেষে বিচার শুরু হতে চলেছে আমরি-কাণ্ডের অভিযুক্তদের। দক্ষিণ কলকাতার বেসরকারি হাসপাতালের রোগশয্যায় দম আটকে ৯২ জনের মৃত্যু হয়েছিল সাড়ে চার বছর আগে। বৃহস্পতিবার আলিপুরে অতিরিক্ত দায়রা আদালতে বিচার শুরুর জন্য যাবতীয় প্রক্রিয়া এত দিনে সম্পন্ন হয়েছে। ৫ সেপ্টেম্বর থেকে মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ ও বিচার শুরুর কথা।
২০১১-র ৮ ডিসেম্বর রাতের ঘটনাটির পরে পুলিশ চার্জশিট দিয়েছিল নির্দিষ্ট সময়েই। কিন্তু বিষয়টি আলিপুরে অতিরিক্ত দায়রা বিচারকের আদালতে গৃহীত হতেই কিছুটা সময় লেগে যায়। হাইকোর্টে নিহতদের পরিজনেরা মামলা করার পরে এই প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হয়। এর পরে বিচার শুরুর জন্য চার্জ গঠন হতে লাগে আরও তিন বছর। চার্জ গঠনের প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রতার অভিযোগ তুলে এ বছরের গোড়ায় ফের হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন নিহতদের পরিজনেরা। অভিযুক্তেরা বারবার কোর্টে এসে তাঁদের অপারগতার কথা জানিয়ে মামলায় দেরি করাচ্ছেন বলে অভিযোগ তোলেন তাঁরা। তা অবশ্য অভিযুক্তেরা অস্বীকার করেন।
নিহতদের আত্মীয়দের আবেদনটি এখনও হাইকোর্টে ঝুলে আছে। কিন্তু বিচারপতি সুদীপ অহলুওয়ালিয়া ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে অভিযুক্তপক্ষের যাবতীয় আবেদনের নিষ্পত্তি করার নির্দেশ দেন। এর পরেই চার্জ গঠনের প্রক্রিয়া গতি পায়। নিহতদের আত্মীয়দের আইনজীবী সঞ্জয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘হাইকোর্ট নিহতদের আত্মীয়দের আবেদনকে গুরুত্ব দিয়েছে। আশা করি, বিচারের প্রক্রিয়া মসৃণ ভাবেই চলবে।’’ বিশেষ সরকারি আইনজীবী শক্তিকুমার ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘অনেকে অভিযুক্ত। তাঁদের সকলের তরফে নানা আবেদন প্রক্রিয়া চলায় খানিকটা সময় লেগেছে।’’
বিচার-পর্বে মোট ৪৫১ জনের সাক্ষ্যই নেওয়া হবে। সেই রাতে নিহত মৃদুলা গুহঠাকুরতার মেয়ে পারমিতা গুহঠাকুরতা বলেন, ‘‘প্রায় পাঁচ বছর ধরে অপেক্ষা করছি। আরও কত দিন যে লড়তে হবে? তবে হাল ছাড়ব না।’’
এ দিনই আলিপুরে অতিরিক্ত দায়রা আদালতের তিন নম্বর বিচারকের এজলাসে চার্জ গঠন হয়। ১৬ জন অভিযুক্তের বিরুদ্ধে চার্জ গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক ইন্দ্রজিৎ অধিকারী। তাঁদের মধ্যে হাসপাতালের ডিরেক্টর পদমর্যাদার ১২ জন আছেন। তাঁরা হলেন শ্রাবণ টোডি, রবি টোডি, রাধেশ্যাম গোয়েনকা, প্রশান্ত গোয়েনকা, দয়ানন্দ অগ্রবাল, মণীশ গোয়েনকা, প্রীতি সুরেখা, রাহুল টোডি, আদিত্য অগ্রবাল, প্রণব দাশগুপ্ত ও মণি ছেত্রী। বাকিরা হলেন ভাইস-প্রেসিডেন্ট পৃথা বন্দ্যোপাধ্যায় ও সত্যব্রত উপাধ্যায়, অ্যাসিস্ট্যান্ট জেনারেল ম্যানেজার সঞ্জীব পাল ও নাইট অ্যাডমিনিস্ট্রেটর সাজিদ হুসেন। সকলের বিরুদ্ধেই অনিচ্ছাকৃত মৃত্যু ঘটানো (৩০৪), অনিচ্ছাকৃত মৃত্যু ঘটানোর চেষ্টা (৩০৮), দাহ্য পদার্থ নিয়ে দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণে জীবন বিপন্ন করা (২৮৬) ও সম্মিলিত চক্রান্তের (৩৪) মতো অভিযোগ আনা হয়েছে। এ ছাড়া, ১২ জন ডিরেক্টর পদমর্যাদাধারীর নামে পশ্চিমবঙ্গের দমকল আইনের ১১ ডি, ১১ জে ও ১১ এল ধারায় গাফিলতির অভিযোগ আনা হয়। অভিযুক্তদের তরফে মণি ছেত্রীর আইনজীবী রানা মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘পরবর্তী পদক্ষেপ বিচারের সময়েই ঠিক করব।’’