Ganesh Chaturthi

করোনা-দুর্যোগেও গণেশে মুখরক্ষা পুজো ব্যবসার

মরাঠি শৈলীর চূড়াকৃতি মোদকে এখন বাঙালিও কম যায় না।

Advertisement

ঋজু বসু

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ অগস্ট ২০২০ ০৪:২৬
Share:

ভবানীপুরের একটি গণেশ পুজোয় প্রসাদের সঙ্গে দেওয়া হচ্ছে মাস্ক-স্যানিটাইজ়ারও। শনিবার। নিজস্ব চিত্র

পয়লা বৈশাখের লক্ষ্মী-গণেশ কল্কে পাননি। বাঙালির চিরাচরিত ছাঁচের সন্দেশেও হয়নি সিদ্ধিলাভ। শনিবার গণেশ চতুর্থীতে তবু পার্বণী মেজাজে ফেরা হল। খাস মহারাষ্ট্রে অন্য বারের তুলনায় নিষ্প্রভ গণেশপুজো। তবে কুমোরটুলির পালমশাই থেকে বাঙালি ময়রার মুখে হাসি ফুটল। টানা দু’দিনের লকডাউন শেষে পুজোর কেনাকাটার টানে ভবানীপুরের যদুবাবুর বাজার থেকে হাতিবাগান জুড়ে থিকথিকে ভিড় অবশ্য অনেকের শঙ্কারও কারণ হয়েছে।

Advertisement

মরাঠি শৈলীর চূড়াকৃতি মোদকে এখন বাঙালিও কম যায় না। গার্ডেনরিচের একটি সাবেক মিষ্টির দোকানের তরফে সম্রাট দাস বলছিলেন, ‘‘পুজোর আগে পর পর দু’দিন লকডাউন। আমাদের অঞ্চলে খাবার সরবরাহের অ্যাপও তত ভাল চলে না। এই অবস্থায় ফেসবুকে আগাম খবর দিয়ে অনলাইন ব্যবসাতেই জোর দেওয়া হয়েছে। দরকার মতো কাছাকাছি এলাকায় নিজেরাই মিষ্টি পৌঁছে দিয়েছি।’’ মিষ্টি কারবারিদের অনেকের দাবি, সব মিলিয়ে করোনা দুর্বিপাকে ব্যবসা অর্ধেকের কম। এই অবস্থায় গত বছরের তুলনায় ব্যবসা কমলেও পুজো-পার্বণের উপলক্ষ তাকেই প্রায় ৭০-৭৫ শতাংশে পৌঁছে দিয়েছে।

পয়লা বৈশাখে বাঙালির চিরকালীন মাঙ্গলিক পুজো লক্ষ্মী-গণেশের আরাধনা থেকে অন্নপূর্ণা বা বাসন্তী পুজোতেও এ বার হাহাকার করেছে কুমোরটুলি। গণেশপুজোয় মুখরক্ষা হয়েছে। বাবু পাল, মিন্টু পালের কথায়, ‘‘পুজোর আগের দু’দিন লকডাউন ঘিরে অনিশ্চয়তা ছিল। তার উপরে বৃষ্টিতেও সমস্যা হয়েছে। তবু ব্যবসার হাল অন্য বারের ৬০ শতাংশ ছুঁয়েছে।’’ কিন্তু আক্ষেপ, দু’দিন লকডাউনের ধাক্কায় অনেকেই পুজো করতে চেয়েও বায়না দিতে পারেননি। শনিবার দিনভর পুজোর সময়। বিকেল পর্যন্ত গণেশ কিনতে কুমোরটুলিতেও ভিড় উপচে পড়েছে।

Advertisement

নাগেরবাজারের পুজোকর্তা, ছোট ব্যবসায়ী রঘুনাথ সাহা অবশ্য এ বার পুজোয় বাজেটে কাটছাঁটের কথা বলছিলেন। তাঁদের গত বারের ২০ ফুট উচ্চতার প্রতিমা এ বছর মুকুট-সহ ফুট সাতেকে নেমে এসেছে। গত বছরের লাখ টাকার বিগ্রহের বাজেট এ বারে ২০ হাজার। সাধারণত বড় গণেশ গড়ায় তুখোড় মহিলা-শিল্পী কাঞ্চি পাল শেষ মুহূর্তে যুদ্ধকালীন তৎপরতায়। বৃষ্টি মাথায় দু’দিন ধরে এক বার ব্লু ল্যাম্পে ঠাকুর শুকনো করা চলেছে তো আবার চটজলদি মেশিনে ঠাকুর রং করার ধুম। কাঞ্চির গড়া সল্টলেকে সুইমিং পুলের বিশালবপু ২৫ ফুটের গণেশ এ বার ১০-১১ ফুটে নেমে এসেছেন। দক্ষিণ কলকাতার নামী কালীমন্দিরেও গণেশ স্বমহিমায়।

গণেশপুজোর আবেদন তবু কলকাতা ছাড়িয়ে মফস্সলে, জেলায়। খাঁটি মরাঠি ঘি-সুরভিত চালগুঁড়ি, নারকোলের উক্রিচা মোদক-সহ খান পনেরো চকলেট, কাজু আঞ্জির, ক্ষীর, সন্দেশ, জাফরানি মোদক পেশ করছেন শহরের একটি নামী মিষ্টির দোকানের কর্ণধার সুদীপ মল্লিক। বিনোদন জগতের পরিচিত মুখ থেকে বাঙালি ব্যবসায়ীরাও এর ভক্তের দলে। রিষড়ার মিষ্টি ব্যবসায়ী অমিতাভ মোদক থেকে বেকবাগানের নীলাঞ্জন ঘোষেরা এখন মোদক-বিশারদ। ওঁরা বলছেন, লকডাউন-দুর্যোগে অনলাইন কারবারে তাঁরা অনেকটা লড়ছেন।

পুজো, ভিড় সামলানো নিয়ে টানাপড়েনে কলকাতাতেও গণেশ উৎসবের আয়োজন জমে উঠেছে ডিজিটাল পরিসরে। সল্টলেকে পিএনবি-র কাছে পুজো চলছে গেরিলা কায়দায়। শুক্রবার সন্ধ্যায় অধিবাস পর্ব থেকে পুজোর পুরনো তল্লাটে জায়ান্ট স্ক্রিন। তবে কোথায় ঠাকুর, তা ভাঙছেন না উদ্যোক্তারা।

এই দুর্যোগেও বাঙালি গণেশময়!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement