বিক্রেতারা মেনেও নিয়েছেন সব পতাকা ৭৫ মাইক্রনের কম ঘনত্বেরপ্লাস্টিকের। ফাইল ছবি
শহরে দেদার বিক্রি হল ৭৫ মাইক্রনের কম ঘনত্বের প্লাস্টিকের জাতীয় পতাকা। যেখানে ৭৫ মাইক্রনের কম ঘনত্বের প্লাস্টিকের ব্যাগ-সহ যে কোনও সামগ্রীই নিষিদ্ধ বলে ঘোষণা করা হয়েছে, সেখানে নিষিদ্ধ প্লাস্টিকে তৈরি পতাকা কী ভাবে ছেয়ে গেল, উঠছে প্রশ্ন।
বিধাননগর এবং কলকাতা পুর এলাকার স্কুল, পাড়ার মোড়, আবাসন, ক্লাব প্রাঙ্গণ— ১৫ অগস্ট উপলক্ষে যেখানেই পতাকা উত্তোলন হয়েছে, সেখানেই বড় পতাকার সঙ্গে দড়ি দিয়ে সারিবদ্ধ ভাবে টাঙানো হয়েছে প্লাস্টিকের তৈরি ছোট ছোট জাতীয় পতাকা। বিক্রেতারা মেনেও নিয়েছেন যে এই সব পতাকা ৭৫ মাইক্রনের কম ঘনত্বেরপ্লাস্টিকের। এর থেকে ভাল মানের প্লাস্টিকের পতাকা তাঁদের কাছে নেই বলেই দাবি।
মঙ্গলবার শহর ঘুরে দেখা গেল, নিষিদ্ধ প্লাস্টিকে তৈরি ছোট পতাকার এমনই চেন ঝুলছে সর্বত্র। বাগুইআটির প্রাথমিক স্কুল বা এলাকার মোড়ে মোড়েও নিয়মভঙ্গের সেই একই ছবি। ওই প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক প্রবীর দাসের মতে, “সাজানোর জন্য প্লাস্টিকের পতাকার সুবিধা অনেক। কাগজের পতাকার মতো আঠা দিয়ে দড়িতে লাগাতে হয় না। এর দামও কম। তা ছাড়া বর্ষায় কাগজের পতাকা নষ্ট হয়ে যায়।” একই যুক্তি উত্তর কলকাতার শ্যামবাজারের একটি ক্লাবের। ক্লাবের কর্তারা জানাচ্ছেন, বৃষ্টিতে ভিজে গেলে কাগজের পতাকা নষ্ট হয়ে যায়।
পতাকা বিক্রেতা শুভজিৎ সাহার মতে, ‘‘শুধু মানুষকে সচেতন করলেই হবে না। যে সব কারখানায় এই ধরনের নিষিদ্ধ প্লাস্টিকের পতাকা বা সামগ্রী তৈরি হচ্ছে, সেখানেই উৎপাদন বন্ধ করতে হবে। মানুষ তো হাতের সামনে যা পাচ্ছেন, তাই কিনছেন। প্লাস্টিকের পতাকার দাম কম। ১০০টি ছোট প্লাস্টিকের পতাকার চেনের দাম যদি ৬০ টাকা হয়, কাগজের সেই পতাকা-চেনের দাম ৮০ টাকা বা তার বেশি। ফলে সবাই পকেট বাঁচাতে ঝুঁকছেন।”
নিষিদ্ধ প্লাস্টিকের তৈরি জাতীয় পতাকার যথেচ্ছ ব্যবহারের কথা মেনে নিয়েছেন কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ (পরিবেশ) স্বপন সমাদ্দারও। তাঁর কথায়, ‘‘প্লাস্টিকের ব্যবহার এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে তা সম্পূর্ণ বন্ধ করতে সময় লাগবে। সবে সবে ৭৫ মাইক্রনের কম ঘনত্বের প্লাস্টিক ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে পরিবেশ দফতর। প্রচারের মাধ্যমে আশা করছি আগামী বছর পরিস্থিতি অনেকটাই বদলানো সম্ভব হবে।’’
বিধাননগর পুরসভার পরিবেশ দফতরের মেয়র পারিষদ রহিমা বিবি বলেন, “জানতামই না যে এমন নিষিদ্ধ প্লাস্টিকের পতাকা বিক্রি হয়েছে! স্থানীয় কাউন্সিলরদের সর্তক থাকতে বলা হবে। বিধাননগরের যেখানে যেখানে প্লাস্টিকের পতাকা লাগানো রয়েছে, সেগুলো পুরকর্মীরা খুলে দেবেন।”
পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্তের আবার মত, ‘‘স্বাধীনতা দিবসে শিশুদের হাতে পাতলা প্লাস্টিকের তৈরি জাতীয় পতাকা তুলে দেওয়া তো জাতীয় বিপর্যয়েরই নামান্তর। প্লাস্টিকের ব্যবহার রুখতে সমস্ত রাজনৈতিক দলকে সঙ্ঘবদ্ধ হতে হবে।”