মুড়িগঙ্গা নদীতে ড্রেজিং শুরুর প্রস্তুতি চলছে। —নিজস্ব চিত্র।
নিয়ম করে প্রতি বছর গঙ্গাসাগর মেলার আগে পুণ্যার্থীদের যাতায়াতের সুবিধার জন্য মুড়িগঙ্গা নদীতে ড্রেজিং চলে। তার জন্য কোটি কোটি টাকা খরচ হয়। এ বারও সেই ব্যবস্থা হয়েছে। ইতিমধ্যেই নদীতে চারটি পলি কাটার যন্ত্র নামানো হয়েছে। ড্রেজিংয়ের প্রস্তুতি চলছে জোরকদমে। আগামী ১ নভেম্বর থেকে পলি তোলার কাজ শুরু হবে বলে সেচ দফতর জানিয়েছে। এই কাজে আনুমানিক খরচ হবে প্রায় ২৩ কোটি টাকা। কিন্তু সেই মেলা শেষ হওয়ার কয়েক মাসের মধ্যেই মুড়িগঙ্গা নদীতে পলি জমে ভাটার সময়ে ভেসেল চলাচল বিঘ্নিত হয়। দ্বীপের বাসিন্দারা দুর্ভোগে পড়েন প্রায় প্রতিদিনই। তাঁরা এর স্থায়ী সমাধান চান। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘোষণামতো ওই নদীর উপরে সেতু কবে হবে, সেই প্রশ্নও তুলছেন তাঁরা।
গত কয়েক বছরে একাধিক বার সাগরমেলার প্রস্তুতি দেখতে এসে মুখ্যমন্ত্রী ওই সেতু তৈরির আশ্বাস দিয়েছিলেন। দ্বীপ এলাকার একাধিক বাসিন্দা মনে করেন, সেতু তৈরি হলে ভোগান্তি কমবে। জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, কাকদ্বীপ থেকে সাগর পর্যন্ত মুড়িগঙ্গা নদীতে চার লেনের একটি সেতু তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে, যার আনুমানিক বাজেট ১০ হাজার কোটি টাকা। চার কিলোমিটার লম্বা এই সেতুর মধ্যে নদীর উপরের অংশ আড়াই কিলোমিটার। তার বিস্তারিত প্রকল্প রিপোর্ট (ডিপিআর) তৈরির কাজ চলছে।
এলাকার বিধায়ক তথা সুন্দরবন উন্নয়ন মন্ত্রী বঙ্কিম হাজরা জানান, এক-দু’দিনের মধ্যে মুড়িগঙ্গায় পলি কাটার কাজ শুরু হবে। ধীরে ধীরে মানুষের ভোগান্তি কমবে। এই সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য রাজ্য সরকার ভাবনাচিন্তা করছে। তাড়াতাড়ি তা বাস্তবায়িত হবে বলে তিনি আশা প্রকাশও করেছেন। সেচমন্ত্রী পার্থ ভৌমিক বলেন, ‘‘ড্রেজিং শুরু হলে সেই কাজ কেমন চলছে, তা আমি খতিয়ে দেখব। যাতে ডিসেম্বর মাস শেষের আগেই ড্রেজিংয়ের কাজ সম্পূর্ণ করা যায়। আর ওখানে সেতু তৈরির বিষয়টি পূর্ত দফতর দেখছে।’’
দ্বীপ এলাকার বাসিন্দারা জানান, প্রতিদিনই কাকদ্বীপের মুড়িগঙ্গা নদীতে ভাটার সময় চার-পাঁচ ঘণ্টা ভেসেল পরিষেবা বন্ধ থাকে। এতে সাধারণ মানুষ তো বটেই, কোনও রোগীকে সাগর থেকে কাকদ্বীপ বা কলকাতায় নিয়ে যেতে হলেও ভোগান্তিতে পড়তে হয়। দীর্ঘ দিন ধরেই নাব্যতা কমে যাওয়ায় ভেসেল চলাচলের অনুপযুক্ত হয়ে পড়েছে মুড়িগঙ্গা। প্রায় তিন কিলোমিটার চওড়া এই নদীর মাঝে পলি জমে বহু জায়গায় চর তৈরি হয়েছে। ড্রেজিংয়ের সুফল হিসেবে মেলার আগে-পরে কয়েক মাস নদী পারাপারের কাজ সহজ হয়। কিন্তু তার পরে ফের যে-কে-সেই! মাঝেমধ্যেই নদীর চরে যাত্রী বোঝাই ভেসেল আটকে যায়। অপেক্ষা করতে হয় জোয়ার আসার জন্য।
সাগরদ্বীপে প্রায় দু’লক্ষ মানুষের বাস। সাগরমেলা ছাড়াও সারা বছর দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পুণ্যার্থীরা আসেন। স্থানীয় বাসিন্দা দীনেশ
জানা বলেন, ‘‘সেতু হলে এত ভোগান্তি হত না। রোগী থেকে নিত্যযাত্রী, পুণ্যার্থী সকলকেই ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। মেলা এলে প্রশাসনের তৎপরতা চোখে পড়ে। তার পরে আর সেই তৎপরতা দেখা যায় না। সেতু নিয়ে দায় ঠেলাঠেলি চলে।’’ বিনয় মাইতি নামে দ্বীপের আর এক বাসিন্দাও মনে করেন, সেতু তৈরি করা খুব জরুরি।